শিরোনাম
◈ সংশোধিত এডিপি অনুমোদন, ব্যয় কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা ◈ বাংলাদেশে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন: ফলকার টুর্ক ◈ রমজানের শুভেচ্ছা বার্তায় যা বললেন ট্রাম্প ◈ সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের অভিযোগের জবাব দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ নুরুল হক নুরের নতুন দলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গ, যা বলল গণ অধিকার পরিষদ ◈ কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা ◈ মজুদকৃত প্রায় ১২ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ ◈ ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে করা দাবি সত্য নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ◈ কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ 'কী না করেছি পুলিশের জন্য', সাবেক আইজিপি শহীদুলের আক্ষেপ

প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০৩ রাত
আপডেট : ০১ মার্চ, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মেজর ডালিমের মুখে তার স্ত্রীকে অপহরণের ঘটনার বর্ণনা (ভিডিও)

মেজর ডালিমের মুখে তার স্ত্রীকে অ'প'হ'রণের ঘটনার বর্ণনা (ভিডিও)

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মেজর ডালিম নিজ মুখে জানান কি হয়েছিল  মেজর ডালিমের স্ত্রীকে অপহরণের বিষয়ে , ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেজর ডালিমের খালাতো বোন তাহ্‌মিনার বিয়ে ঠিক হয় কর্নেল রেজার সঙ্গে। এই বিয়ের পুরো আয়োজন এবং মধ্যস্থতা করছিলেন মেজর ডালিম এবং তার স্ত্রী নিম্মী। বিয়ের অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা লেডিস ক্লাবে, যা সে সময় ধনী ও প্রভাবশালীদের একটি আভিজাত্যপূর্ণ ক্লাব হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিয়ের দিন মেজর ডালিমের শ্যালক বাপ্পি, যিনি আমেরিকা থেকে এসেছিলেন, তার সঙ্গে রেডক্রসের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার দুই ছেলের কথাকাটাকাটি হয়। এই দুই ছেলে শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। কথাকাটাকাটির কিছুক্ষণ পর দুটি মাইক্রোবাস এবং একটি কার লেডিস ক্লাবে প্রবেশ করে।

কার থেকে নামেন গাজী গোলাম মোস্তফা।মাইক্রোবাস থেকে প্রায় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী বেসামরিক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন।তারা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা আলম এবং চুল্লুকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। চুল্লুকে অস্ত্রের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে তার মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হয়।এরপর তারা মেজর ডালিমকেও জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেন।

মেজর ডালিমের স্ত্রী নিম্মী স্বামীকে একা যেতে দিতে রাজি হননি, তাই তিনিও মাইক্রোবাসে ওঠেন।তাদের সঙ্গে মেজর ডালিমের খালামনিও ছিলেন।অপহরণের পর তাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনার কিছুই তখন আমি জানতাম না। বিয়ের আনুষ্ঠিকতার প্রায় সবকিছুই সুষ্ঠভাবেই হয়ে যায়।

ঘটনার বিবরণ এ যা বললেন মেজর ডালিম:

হঠাৎ দু’টো মাইক্রোবাস এবং একটা কার এসে ঢুকল লেডিস ক্লাবে।
কার থেকে নামলেন স্বয়ং গাজী গোলাম মোস্তফা আর মাইক্রোবাস দু’টো থেকে নামল প্রায় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী বেসামরিক ব্যক্তি।
গাড়ি থেকেই প্রায় চিৎকার করতে করতে বেরুলেন গাজী গোলাম মোস্তফা।

কোথায় মেজর ডালিম?
বেশি বার বেড়েছে।
তাকে আজ আমি শায়েস্তা করব।
কোথায় সে?
ঘটনার আকস্মিকতায় আমিতো হতবাক! আমি অত্যন্ত ভদ্রভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
‘ব্যাপার কি?
এ সমস্ত কিছুর মানেই বা কি?
তিনি তখন ভীষণভাবে ক্ষীপ্ত।
একনাগাড়ে শুধু বলে চলেছেন-
‘গাজীরে চেন না।
আইজ আমি তোরে মজা দেখামু।
তুই নিজেরে কি মনে করছস?

তার ইশারায় অস্ত্রধারীরা সবাই তখন আমাকে টানা-হেচড়া করে মাইক্রোবাসের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।
ইতিমধ্যে বাইরে হৈ চৈ শুনে নিম্মী এবং খালাম্মা বেরিয়ে এসেছেন অন্দরমহল থেকে।আমাকে জোর করে ঠেলে উঠান হল মাইক্রোবাসে।

আমাকে গাড়িতে তুলতেই খালাম্মা এবং নিম্মী দু’জনেই গাজীকে বলল,
ওদের সাথে আমাদেরকেও নিতে হবে আপনাকে। ওদের একা নিয়ে যেতে দেব না আমরা।
‘ঠিক আছে;
তবে তাই হবে’ বললেন গাজী।

গাড়ি চলছে সেকেন্ড ক্যাপিটালের দিকে। আমি তাকে বললাম- ‘গাজী সাহেব আপনি আমাদের নিয়ে যাই চিন্তা করে থাকেন না কেন;

লেডিস ক্লাব থেকে আমাদের উঠিয়ে আনতে কিন্তু সবাই আপনাকে দেখেছে। তাই কোন কিছু করে সেটাকে বেমালুম হজম করে যাওয়া আপনার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হবে না’।

আমার কথা শুনে কি যেন ভেবে নিয়ে তিনি আবার তার গাড়িতে গিয়ে উঠলেন। কাফেলা আবার চলা শুরু করল।
তবে এবার রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে নয়, গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি চললেন ৩২নং ধানমন্ডি প্রধানমন্ত্রীর বাসার দিকে। আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম।

কলাবাগান দিয়ে ৩২নং রোডে ঢুকে আমাদের মাইক্রোবাসটা শেখ সাহেবের বাসার গেট থেকে একটু দূরে একটা গাছের ছায়ায় থামতে ইশারা করে জনাব গাজী তার গাড়ি নিয়ে সোজা গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন ৩২নং এর ভিতরে।

সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্ট তখন শেখ সাহেবের বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। একবার ভাবলাম ওদের ডাকি, আবার ভাবলাম এর ফলে যদি গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় তবে ক্রস-ফায়ারে বিপদের ঝুঁকি বেশি।

এ সমস্তই চিন্তা করছিলাম হঠাৎ দেখি লিটুর ঢাকা ক-৩১৫ সাদা টয়োটা কারটা পাশ দিয়ে হুস্‌ করে এগিয়ে গিয়ে শেখ সাহেবের বাসার গেটে গিয়ে থামল।
লিটুই চালাচ্ছিল গাড়ি।
গাড়ি থেকে নামল এসপি মাহবুব।
নেমেই প্রায় দৌড়ে ভিতরে চলে গেল সে।

লিটু একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষায় রইলো সম্ভবত মাহ্বুবের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়।
লিটু এবং মাহ্বুবকে দেখে আমরা সবাই আস্বস্ত হলাম। র্নিঘাত বিপদের হাত থেকে পরম করুণাময় আল্লাহ্‌’তায়ালা আমাদের বাচিঁয়ে দিলেন।

লিটু যখন মাহ্‌বুবের বাসায় গিয়ে পৌঁছে মাহবুব তখন মানিকগঞ্জ থেকে সবেমাত্র ফিরে বিয়েতে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। হঠাৎ লিটুকে হন্তদন্ত হয়ে উপরে আসতে দেখে তার দিকে চাইতেই লিটু বলে উঠল- ‘মাহবুব ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে।
বিয়ে বাড়ি থেকে গাজী বিনা কারণে ডালিম-নিম্মীকে জবরদস্তি গান পয়েন্টে উঠিয়ে নিয়ে গেছে’।

একথা শুনে মাহবুব স্তম্ভিত হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকেই খবরটা সবচেয়ে আগে দেওয়া দরকার কোন অঘটন ঘটে যাবার আগে। গাজীর কোন বিশ্বাস নাই;
ওর দ্বারা সবকিছুই সম্ভব।
মাহবুব টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ টেলিফোনটাই বেজে উঠে।
রেড টেলিফোন।
মাহবুব ত্রস্তে উঠিয়ে নেয় রিসিভার।

প্রধানমন্ত্রী অপর প্রান্তে-
‘মাহবুব তুই জলদি চলে আয় আমার বাসায়।

গাজী এক মেজর আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের ধইরা আনছে এক বিয়ার অনুষ্ঠান থ্যাইকা।

ঐ মেজর গাজীর বউ-এর সাথে ইয়ার্কি মারার চেষ্টা করছিল।
উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে।
বেশি বাড় বাড়ছে সেনাবাহিনীর অফিসারগুলির’।

সব শুনে মাহবুব জানতে চাইলো-
স্যার গাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন মেজর ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের কোথায় রেখেছেন তিনি?’

‘ওদের সাথে কইরা লইয়া আইছে গাজী। গেইটের বাইরেই গাড়িতে রাখা হইছে বদমাইশগুলারে’ -জানালেন প্রধানমন্ত্রী।

‘স্যার গাজী সাহেব ডালিম আর নিম্মীকেই তুলে এনেছে লেডিস ক্লাব থেকে। ওখানে ডালিমের খালাতো বোনের বিয়ে হচ্ছিল আজ।’ -জানাল মাহবুব।

‘কছ কি তুই!’
প্রধানমন্ত্রী অবাক হলেন।

‘আমি সত্যিই বলছি স্যার।
আপনি ওদের খবর নেন আমি এক্ষুণি আসছি।’

এই কথোপকথনের পরই মাহবুব লিটুকে সঙ্গে করে চলে আসে ৩২নং ধানমন্ডিতে। মাহ্‌বুবের ভিতরে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেহানা, কামাল ছুটে বাইরে এসে আমাদের ভিতরে নিয়ে যায়। আলম ও চুল্লুর রক্তক্ষরণ দেখে শেখ সাহেব ও অন্যান্য সবাই শংকিত হয়ে উঠেন।

‘হারামজাদা, এইডা কি করছস তুই?’ গাজীকে উদ্দেশ্য করে গর্জে উঠলেন শেখ মুজিব- ‘ডালিম আর নিম্মীর কাছে মাফ চা’ । আর আমারে উদ্দেশ্য কইরা শেখ মুজিব বললেন- ‘তুই গাজীরে মাফ কইরা দে। আর গাজী তুই নিজে খোদ উপস্থিত থাকবি কন্যা সম্প্রদানের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত’।

অনেকটা মোড়লী কায়দায় একটা আপোষরফা করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে নিম্মী এবং আমাকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। খালাম্মা ঠিকমত হাটতে পারছিলেন না। কামাল, রেহানা ওরা সবাই ধরাধরি করে ওদের উপরে নিয়ে গেল।

শেখ সাহেবের কামরায় তখন আমি,
নিম্মী আর গাজী ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। নিম্মী দুঃখে-গ্ল্যানিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। শেখ সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করছিলেন।
অদূরে গাজী ভেজা বেড়ালের মত কুকড়ে দাড়িয়ে কাঁপছিল।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম ঠিক সেই সময় শেখ সাহেব বললেন-
‘আমার গাড়ি তোদের পৌঁছে দেবে’।
‘তার প্রয়োজন হবে না চাচা।
বাইরে লিটু-স্বপনরা রয়েছে তাদের সাথেই চলে যেতে পারব।

তবে ঐতিহাসিক তথ্য এবং সাক্ষাৎকার অনুসারে, শেখ কামাল এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়