ইজারাভিত্তিক অপটিক্যাল ফাইবারে নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের যন্ত্র ব্যবহারে আর বাধা নেই। দীর্ঘদিনের দাবির পর মোবাইল অপারেটরদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর ফলে তারা এখন ডেন্স ওয়েভলেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং (DWDM) প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে—যা মোবাইল ইন্টারনেট সেবার মান উন্নয়ন ও ব্যয় সাশ্রয়ের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে করে ইন্টারনেটের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞার অবসান: ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির অনুমোদনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিটিআরসি এই সুবিধা কেবল নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (NTTN) অপারেটরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। মোবাইল অপারেটরদের তখন এই যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। মূলত NTTN অপারেটরদের ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
অবশেষে ১০ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিটিআরসি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
কী এই DWDM?
DWDM এমন একটি প্রযুক্তি যা মোবাইল নেটওয়ার্ককে অপটিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে কার্যকরভাবে সংযুক্ত করে। এটি একাধিক সিগন্যাল বা ব্যান্ডউইডথ একসঙ্গে পরিবহন করতে সক্ষম, যার ফলে উচ্চগতির এবং নিরবচ্ছিন্ন ডেটা ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়।
অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া: রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি খুব বড় কোনো সাশ্রয় নয়। তবে সুফল তো আছেই। আমাদের খরচ যদি কমে যায়, তাহলে তার সুফল গ্রাহকও পাবেন।’
বাংলালিংকের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান বলেন, ‘DWDM ব্যবহারে মাত্র অনুমোদন পেলাম। সময় লাগবে। আমরা দেখব কীভাবে গ্রাহককে সুবিধা দেওয়া যায়।’
ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রসার: বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই মোবাইল নেটওয়ার্ক নির্ভর। ফলে DWDM ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার মান ও মূল্য–উভয় ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্ভাবনা: বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এই সিদ্ধান্ত মোবাইল অপারেটরদেরকে নেটওয়ার্ক স্থিতিশীলতা বাড়ানো ও ব্যয় হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। যদিও স্বল্প মেয়াদে ইন্টারনেট সেবার দামে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি সাশ্রয়ী এবং উন্নত মানের সেবা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। উৎস: নিউজ২৪