বিল গেটস হতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভুল ‘ভবিষ্যৎ বক্তা’। যার প্রমাণ রয়েছে ১৯৯৯ সালে তার লেখা বই ‘বিজনেস@দ্য স্পিড অফ থটস’-এ, যেখানে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি সম্পর্কে লিখেছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক এই নির্বাহী প্রধান।
গেটসের কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এমএসএন। আসুন মিলিয়ে নেই সেগুলো-
স্মার্টফোন: বর্তমানে মানুষের জীবন কাটছে ফোনকে কেন্দ্র করে। তবে ১৯৯৯ সালে ফোন এতো সাধারণ বিষয় ছিল না। ওই সময় গেটস স্মার্টফোনের এ সম্ভাবনাটি দেখেছিলেন।
তিনি বলেছেন, “ভবিষ্যতে মানুষ ছোট আকারের বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করবে, যা তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সহায়তা করবে। এই ছোট্ট ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিউজ পড়তে, ফ্লাইট বুক করতে ও আর্থিক বিভিন্ন তথ্য পেতে সক্ষম হবেন। এসব ডিভাইসের মাধ্যমে সবকিছুই করতে পারবেন তারা।”
অনলাইন ব্যাংকিং: আগে আর্থিক লেনদেনের জন্য মানুষকে স্থানীয় কোনো ব্যাংকে যেতে হতো। তবে বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে মানুষজন অর্থ আদান-প্রদানের পাশাপাশি অর্থের পরিমাণও দেখতে পারেন। ঠিক যেমনটি ১৯৯৯ সালে গেটস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “অনলাইনের মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যতে তাদের বিল পরিশোধ করবে, আর্থিক পরিষেবা নেবে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারবে।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট : গুগলের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ‘আলেক্সা’ নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী গেটস না দিলেও মানুষের বাড়িতে এক স্বয়ংক্রিয় ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্টের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি। ‘ব্যক্তিগত সঙ্গীদের’ কল্পনা করেছিলেন গেটস, যা সবার জন্য তাদের জীবনযাপনকে সহজ করে তুলবে।
গেটস বলেছেন, “মানুষের সব ধরনের ডিভাইসকে স্মার্ট উপায়ে একসঙ্গে করবে এসব অ্যাসিস্ট্যান্ট, তা সে বাড়িতে হোক বা অফিসে। এমনকি মানুষের ডেটা বিনিময়েরও সুযোগ দেবে এরা।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম : ১৯৯৯ সালে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মানুষকে ল্যান্ডলাইনে ফোন দিতে বা বাসায় গিয়ে তাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে হতো। তবে ওই সময় গেটস এমন এক বিশ্ব দেখেছিলেন যেখানে সবাই সবার সঙ্গে ‘হাইপার-কানেক্টেড’।
গেটস বলেছেন, “আপনার বন্ধু ও পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত বিভিন্ন ওয়েবসাইট সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে। যেখানে আপনি চ্যাট করতে ও যে কোনো কিছুর পরিকল্পনা করতে পারবেন।”
টার্গেটেড বিজ্ঞাপন : বিভিন্ন টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন গেটস।
তিনি বইতে লিখেছেন, “এটি এমন এক সফটওয়্যার, যা জানবে আপনি কখন ট্রিপ বুক করেছেন ও গন্তব্যের কার্যকলাপ সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দিতে সেইসব তথ্য ব্যবহার করবে এটি। এমনকি যেসব বিষয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে সেসব বিষয়ে কার্যকলাপ, ছাড়, অফার ও সাশ্রয়ী দামেরও পরামর্শ দেবে।”
রেডিটের উত্থান: মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গেটস। তিনি বলেছিলেন, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ নিজেদের আগ্রহ ভাগ করে নেবেন। দূরত্বের কারণে পিছিয়ে না থেকে বিশ্বজুড়ে সমমনা ব্যক্তিরা নিজেদের খোঁজ করবেন।
গেটস বলেছেন, “বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিটি আপনার অবস্থানের মাধ্যমে প্রভাবিত না হয়ে বরং আপনার আগ্রহের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে।”
অনলাইনে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন: বর্তমানে আধুনিক কাজের ক্ষেত্রটি চলে স্ল্যাক, গুগল ওয়ার্কস্পেস ও মাইক্রোসফট টিমস-এর মতো প্রকল্প ব্যবস্থাপনা টুলের মাধ্যমে। ফলে দেখা যাচ্ছে, কয়েক দশক আগেও অফিসের জন্য এক ডিজিটাল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল গেটসের।
বইতে তিনি লিখেছেন, “একটি দল গঠন করতে চাওয়া প্রকল্প পরিচালকরা অনলাইনে গিয়ে তাদের প্রকল্পটি বর্ণনা করতে পারবেন। একইসঙ্গে তাদের চাহিদা মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে সুপারিশও নিতে পারবেন।
হোম মনিটরিং সিস্টেম : গুগল নেস্টের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে অনেক আগে থেকেই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল গেটসের। ওই সময় এগুলোকে সিসিটিভি সিস্টেমের এক উচ্চ-প্রযুক্তির সংস্করণ হিসাবে কল্পনা করেছিলেন তিনি।
গেটস বলেছেন, “আপনার বাড়ির ভিডিও ফিড সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে, বাড়িতে না থাকা অবস্থায় কেউ বাড়িতে এলে তা আপনাকে জানিয়ে দেবে।”
অনলাইন নিয়োগ: চাকরির বাজারে বিপ্লব ঘটিয়েছে লিংকডইন। অবশ্যই এই পেশাদার যোগাযোগের বিষয়টি আগে থেকে দেখতে পেয়েছিলেন গেটস।
তিনি বলেছেন, “কাজ খুঁজছেন এমন ব্যক্তিরা তাদের আগ্রহ, চাহিদা ও বিশেষ দক্ষতা ঘোষণা করে অনলাইনে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে পেতে পারবেন।”
বিজনেস কমিউনিটি সফটওয়্যার : বিজনেস কমিউনিটি সফটওয়্যার সম্পর্কে গেটস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “বিভিন্ন কোম্পানি কোনও নির্মাণ প্রকল্প, সিনেমা প্রযোজনা, বা কোনও বিজ্ঞাপন প্রচারণার ক্ষেত্রে চাকরির জন্য বিড করতে পারবে... এটি এমন বড় বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কার্যকর হবে যারা এ ধরনের কাজ করতে চায় বা নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজছে এমন ব্যবসা ও কর্পোরেশনের জন্য যাদের এই পরিষেবার জন্য কোনও পরিষেবা সরবরাহকারী নেই।
বর্তমানে আমাদের কাছে এখন আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ক্রেইগসলিস্ট-এর মতো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা বিভিন্ন ছোট আকারের ব্যবসাকে ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্ট উভয়ই খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। বিডি-নিউজ২৪
আপনার মতামত লিখুন :