শিরোনাম
◈ খালেদা জিয়া ছাড়পত্র পেলেন হাসপাতাল থেকে, উঠবেন তারেক রহমানের বাসায় ◈ বৃহৎ এলএনজি চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে, বছরে ৫০ লাখ টন কিনবে বাংলাদেশ ◈ মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ পতেঙ্গার পর মাতারবাড়ী বন্দর পরিচালনায় আগ্রহী সৌদি  আরবের কোম্পানি ◈ ৩১ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে সারাদেশে কর্মসূচি দেওয়ার  হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে সরকারের অংশ থেকে বের হয়ে যাবো : নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা ◈ ভোটাধিকার নিয়ে ফেসবুক পোস্টে যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান ◈ আমরা গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ◈ জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে সীসাঢালা প্রাচীরের ঐক্য লাগবে : জামায়াত আমীর 

প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৯ রাত
আপডেট : ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পকেট অপশন: টেলিগ্রাম সিগন্যালের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার অসংখ্য মানুষ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ট্রেডিং এখন একটি জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে, তবে এর সাথে সাথে শুরু হয়েছে কিছু প্রতারণামূলক কার্যক্রম। এর মধ্যে অন্যতম হলো পকেট অপশন, একটি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম যা টেলিগ্রামে সিগন্যাল গ্রুপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবহার করে বিশেষ সিগন্যালের মাধ্যমে ট্রেডিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের ফাঁদে ফেলে। এর পরিণতি অনেক সময় হতে পারে ভয়াবহ। অসংখ্য মানুষের শ্রম-ঘর্ম এবং অর্থ হারানোর ঘটনায় এখন পকেট অপশন একটি বিরাট বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতারণার কৌশল: কিভাবে সিগন্যালের ফাঁদে পড়ছেন মানুষ?

পকেট অপশনের প্রতারণা ব্যবস্থাটি অত্যন্ত কৌশলী এবং ভালোভাবে পরিকল্পিত। এরা খুব সহজভাবে প্রথমে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিজেদের সিগন্যাল গ্রুপে যুক্ত করতে থাকে। এসব গ্রুপগুলো দেখতে খুবই আকর্ষণীয়, যেখানে বলা হয় “বিনামূল্যে লাভের সিগন্যাল!” কিংবা “দ্বিগুণ লাভের সুযোগ!” ইত্যাদি মিথ্যা প্রলোভনে পূর্ণ থাকে। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য এরা স্ক্রিনশট ও সফলতার গল্প শেয়ার করে, যাতে তাদের সিগন্যাল মেনে চলা যেন সর্বদা লাভের দিকে নিয়ে যায়।

প্রথমবারে সিগন্যালগুলো আসল মনে হলেও, কিছু সময় পরেই দেখা যায়, এসব সিগন্যাল শুধুই লোকজনের টাকা লুট করার উদ্দেশ্যে সাজানো ছিল। তাদের দেওয়া সিগন্যাল অনুযায়ী ট্রেড করার পর যখন লোকজন তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে ক্ষতি করে, তখন তারা বুঝতে পারে যে এটি একটি প্রতারণামূলক কার্যক্রম।

মিথ্যা সাফল্যের গল্প: আস্থা অর্জনের জন্য পুরনো কৌশল

প্রথমে, পকেট অপশন তাদের গ্রুপে আসা নতুন সদস্যদের কাছে নিজেদের সফলতার গল্প শেয়ার করে। এরা বিভিন্ন লোকজনের ছবি এবং মিথ্যা স্ক্রিনশট ব্যবহার করে বলে যে, যারা তাদের সিগন্যাল অনুসরণ করছে, তারা রীতিমতো ভাগ্যবান। এসব স্ক্রিনশটে একের পর এক সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়, যেখানে কিছু ছোট মুনাফা দেখিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করা হয়। এই ধরনের “প্রথম কিছু লাভ” মানুষকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং ধীরে ধীরে এর শিকার হন তারা।

ভুল সিগন্যালের কারণে ক্ষতির শিকার: লাভের পরিবর্তে ক্ষতি

গ্রুপে যোগদান করার পর, যে সিগন্যালগুলো দেয়া হয়, তা বেশিরভাগ সময়ই ভুল হয়। ব্যবহারকারীরা যখন এই সিগন্যাল অনুসরণ করে ট্রেডিং করতে শুরু করে, তখন তাদের বিনিয়োগ হারিয়ে যায়। একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন যে, পকেট অপশন তাদের সবশেষ বিনিয়োগের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং এর পর কোন সাহায্য বা প্রতিকার মেলেনি।

যতবার তারা প্রশ্ন করেছে, ততবারই পকেট অপশনের প্রতিনিধিরা তাদের শান্ত থাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে এবং “এটি শুধুমাত্র একটি সাময়িক ক্ষতি” বলেছে। কিন্তু এভাবে একাধিক বার অর্থ হারিয়ে তারা বুঝতে পারে যে, এটি একটি বড় ধরনের প্রতারণা।

শিকারদের অভিজ্ঞতা: প্রতারণার ভুক্তভোগীদের গল্প

একজন ভুক্তভোগী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “আমি এক মাস আগে পকেট অপশনের একটি গ্রুপে যোগ দিয়েছিলাম, যেখানে তারা আমাকে বলেছিল যে, এখানে বিনিয়োগ করলে আমি দ্রুত লাভ পাবো। প্রথম কিছু দিন লাভও হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে আমি যত টাকা দিয়েছি, সবই হারিয়ে গিয়েছে। এরপর তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে কোনো সাহায্য দেয়নি।”

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “আমি ভাবতাম, এটা তো একটি legit ট্রেডিং গ্রুপ, তবে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। তারা শুরুতেই ছোট মুনাফা দিয়ে আমাকে আরও বড়ো বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করেছে। এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি তাদের প্রতারণার শিকার।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত: সাবধান থাকতে হবে

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পকেট অপশন এবং এ ধরনের অন্যান্য অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম থেকে সাবধান থাকা উচিত। বিশেষ করে, যারা জানেন না তাদের জন্য এরকম সিগন্যাল গ্রুপে যোগদান করা বিপজ্জনক। এ ধরনের সিগন্যাল, যেগুলোর পিছনে কোনো সত্যতা নেই, সেগুলো মানুষকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, “আপনি যদি অনলাইনে ট্রেডিং করতে চান, তবে অবশ্যই পরিচিত এবং বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে কাজ করুন। কোনো সিগন্যাল গ্রুপের সাহায্য নিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করা একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ।”

পকেট অপশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা: কি করা উচিত?

এ ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা এখন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করছেন, বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। তবে, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে অভিযোগ করা বেশ কঠিন। যদিও তারা যেকোনো দেশে নিবন্ধিত না থাকলে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ কিছুটা জটিল হতে পারে। তবুও, ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপ আশা করছেন।

পকেট অপশনের মত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রতারণা হতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, অচেনা ও সন্দেহজনক গ্রুপগুলো থেকে সরে আসা এবং সেইসব প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকা। দ্রুত লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এই ধরনের সিগন্যাল গ্রুপে যোগ না দেওয়া উচিত। বিশেষভাবে, সিগন্যাল ব্যবসা বা ট্রেডিং সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন, এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি যে প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করছেন তা সঠিক এবং নিরাপদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়