শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৭ রাত
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে একসময় জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকটক বন্ধ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। টিকটকের অনেক কনটেন্ট নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)তে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে। মূলত টিকটকের মাধ্যমে অশ্লীলতা ও দেশীয় কালচার নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ ওঠে।  

বিভিন্ন সিনেমার জনপ্রিয় গানের একাংশ, ঠোঁট মিলিয়ে ভিডিওতে কোনো খারাপ উক্তি তৈরির এই অ্যাপ নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি উঠেছে ভারতে। তবে এবার টিকটকের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে টিকটকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী। মানবজমিনকে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে। সামনে হয়তো আরও বৈঠক হবে। টিকটককে বাংলাদেশে তাদের ডাটা সেন্টার বসানোর কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে তাদের সার্ভার রয়েছে ভারতে। এদিকে বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, টিকটককে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

ডাটা সেন্টারের পাশাপাশি এখানে একটি অফিস স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে। অফিস থাকলে সেখানে টিকটকের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করবেন। তখন বাংলাদেশ নিয়ে টিকটকের আপত্তিকর ভিডিও বা নানা ধরনের কনটেন্ট বন্ধ করা সহজে সম্ভব হবে। টিকটক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের এ ধরনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে। এর আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে টিকটককে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শুধু টিকটক নয় দেশীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি রয়েছে এমন সব ধরনের সাইট আমরা বন্ধ করে দিতে চাই। তিনি বলেন, আমি ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে চাই। আমার দেশ ইউরোপ না আমেরিকা না আমার দেশে বাংলাদেশ। 
তাই এ দেশের মানুষ, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না এমন কোনো কিছুকেই আমি রাখতে চাই না। এসব সাইট বন্ধ করলে আবার খোলা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খোলা হলে বন্ধ করে দেবো। যতবার খোলা হবে ততবার বন্ধ করে দেবো। মনুষের জীবন ও মান ও দেশের জন্য ক্ষতিকর এসব সাইট বন্ধে কতোটুকু সফল হবো জানি না। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করে যাবো। প্রযুক্তিবিদরা জানান, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এরকম বেশকিছু অ্যাপের পর গত কয়েক বছর ধরে নতুন যে অ্যাপটি অনেকের আকর্ষণ কেড়েছে তা হলো চীনের অ্যাপ টিকটক। বাংলাদেশে টিকটক জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়ালগ অথবা কোনো ভাইরাল হওয়া কোনো বক্তব্যের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয়, নাচ দিয়ে মূলত হাস্যরসের ভিডিও। মোবাইল অপারেটরদের দেয়া তথ্যমতে, ভিডিও শেয়ারিংয়ের জনপ্রিয় প্ল্যাটফরম টিকটক ব্যবহার করেন ৫ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি। 

বিশ্বব্যাপী অ্যাপ ডাউনলোড চার্টের শীর্ষের দিকে রয়েছে টিকটক। টিকটকের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বব্যাপী আশি কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করছে। ২০১৯ সালে জনপ্রিয় অ্যাপ ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ ডাউনলোডকারী অ্যাপে পরিণত হয়েছে টিকটক। টিকটক ব্যবহারকারীরা জানান, এটা অনেকটা নেশার মতো হয়ে গেছে। কারণ টিকটক খুব সহজ। একটা টিকটক ভিডিও বানাতে সর্বোচ্চ সময় লাগছে এক মিনিট। ভিডিও আপলোড করার সঙ্গে সঙ্গে খুব সহজে মানুষকে রিচ করতে পারছেন এবং প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাচ্ছেন। তারা বলেন, অনেক সহজে, অল্প পরিশ্রম করেই প্রতিক্রিয়া পাওয়া, মানুষের প্রশংসা পাওয়া সেটা একধরনের আত্মতৃপ্তির কাজ করে। এই আবেদনই বেশিরভাগ মানুষকে টিকটকের দিকে আগ্রহী করে তুলছে। ব্যবহারকারীদের অনেকে টিকটককে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, চারপাশে অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটছে এখন। সেগুলো মানুষের কানে আসে। সেসব বিষয়ে খবর পড়তে হয়। মানুষ খুব একঘেয়ে বোধ করছে এবং বিনোদনের উপায় খুঁজছে। 

টিকটক খুব সহজ একটা বিনোদন। টিকটকের ভিডিও দেখা যায় ফেসবুকে অথবা ইন্সটাগ্রামে। বাংলাদেশে মূলত হাসির ভিডিও তৈরির প্রবণতাই বেশি। অনেক জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়ালগের ব্যবহারের অনুমোদন নিয়ে রেখেছে টিকটক। যা অন্য অ্যাপগুলোতে নেই। সেটাও এর জনপ্রিয়তার কারণ হতে পারে। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকেই। টিকটকেও সেই সুযোগ রয়েছে। সেটা সম্ভব হতে হলে অবশ্য অনেক ফলোয়ার থাকতে হবে। ভিডিও’র মাধ্যমে কোনো পণ্যের বিক্রি বাড়াতে অনেক ব্র্যান্ড টিকটকে যাদের ফলোয়ার বেশি রয়েছে তাদের অর্থ দিয়ে থাকেন। 

অনেক সময় নতুন কোনো পণ্য বাজারে আনার আগে বিজ্ঞাপনদাতারা টিকটকে সেলিব্রিটিদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে কাজে লাগান। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় ফলোয়ার থাকলে টিকটকে লাইভ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা। তারাই মূলত পণ্যের বাজারজাতকরণে বেশি গুরুত্ব পান। টিকটকে এমনকি লাইভ চলাকালীন নিলামের নমুনাও রয়েছে। বাংলাদেশে এভাবে সেলিব্রিটিরা কতো অর্থ উপার্জন করছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। উৎস: মানবজমিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়