দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সব ধরনের ডিজিটাল সেবায় ধস নেমেছে। এতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনেও বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। মোটা অঙ্কের অর্থনৈতিক লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সূত্র : সময়টিভি
ইন্টারনেট না থাকায় মানুষ সামাজিকমাধ্যমে ঢুকতে পারছে না। ইন্টারনেটভিত্তিক ভয়েস ও ভিডিও কল সুবিধারও বাইরে আছেন তারা। এছাড়া অনলাইনে লেনদেনসহ নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে মোবাইলভিত্তিক অর্থনৈতিক সুবিধার (এমএফএস) ওপর। গেল কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাদের হাত এখন কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছে।
প্রিপেইড গ্যাস ও বৈদ্যুতিক মিটারেও রিচার্জ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শত শত গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন।
অচল হয়ে পড়া ইন্টারনেট সেবা কবে চালু হবে, এখন পর্যন্ত তা কেউ বলতে পারছেন না। সরকার জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের অগ্নিসংযোগে ডেটা সেন্টার এবং আইএম্পির তার পুড়ে যাওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে, মেরামত করতে সময় লাগবে। কিন্তু সেই মেরামতের কাজ শেষ হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।
মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছেন, সরকারের নির্দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে। উপরের নির্দেশ ছাড়া তারা এ সেবা চালু করতে পারছেন না, কবে, কখন চালু হবে; তাও জানা নেই কারও।
অভিযোগ করা হচ্ছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে একটি পক্ষ নানা অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে।
তবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সঞ্চালন লাইন ঠিক করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং মোবাইলে ফোরজি সেবা চালু করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বানও জানান তিনি। শনিবার (২০ জুলাই) তেজগাঁওয়ে নাশকতাকারীদের দেয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেইল প্রসেসিং সেন্টার পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে আগুনের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রডব্যান্ড সঞ্চালন লাইন। এরপর থেকেই বন্ধ ওয়াইফাই সেবা।
সেই রেশ না কাটতেই শুক্রবার নতুন করে উত্তরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সঞ্চালন লাইন কেটে ফেলে নাশকতাকারীরা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল সংযোগের পয়েন্ট। এরআগে, বুধবার সাময়িক বন্ধ আছে ফোর-জি কাভারেজ।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি বলছে, সাবমেরিন ক্যাবল, আইটিসি থেকে আইআইজি হয়ে আইএসপিদের সরবরাহ করা দৈনিক ৩ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের পুরোটাই বন্ধ আছে।
ইন্টারনেট না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে আউটসোসিং'র কাজ। অ্যাপের মাধ্যমে বন্ধ আছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও। বেসিস বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনিক ক্ষতি ৮০-৯০ কোটি টাকা।
সার্বিকভাবে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে সবাইকে ধৈর্য ধরতে বললেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। এসময়, দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে সারাদেশে ডাক বিভাগের ৮-১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শিল্পের কাঁচামাল, বৈদ্যুতিক পণ্য, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হয়। সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সময়ে বন্দরে পণ্য খালাস হলেও তা ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে পণ্য ব্যাহত হচ্ছে পণ্য সরবরাহ।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের শুল্কায়ন হয়। যে কারণে কাস্টামসের সার্ভার কাজ না করলে বন্দরের ওপরও সেটার প্রভাব পড়ে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা মিলছে না জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে এমনিতেই শুল্কায়নের কাজ স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু কম থাকে। রোববার খোলার দিনে চাপ বেড়ে যায়। তারা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দ্রুতই ইন্টারনেট সেবা চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :