শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:১৫ দুপুর
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ০২:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লন্ডন যেতে টাকা দিলেই মিলছে ‘পাত্র-পাত্রী’

ডেস্ক নিউজ : সংসার করতে নয়, বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রবাসী স্বামী’বা ‘স্ত্রী’র হাত ধরে। আর এ বিয়ের শর্ত হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে হবে। দেশের প্রবাসীবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত সিলেটের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজের ম্যারেজ মিডিয়া গ্রুপগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে এ ধরনের বিজ্ঞাপন।

দূতাবাসের সন্দেহ দূর করতে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের ক্ষেত্রেও আসল বিয়ের মতো আয়োজন করা হচ্ছে। কাজি এনে বিয়ে পড়ানো হয়। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন করা হয়। দূতাবাসের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে পাত্র-পাত্রী ছবি তোলার জন্য একসঙ্গে ঘুরতেও যাচ্ছেন। দৈনিক বাংলা

জানা গেছে, শিক্ষার্থী ভিসায় নির্ভরশীল হিসেবে ‘স্পাউস’ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় এখন বেড়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) করা ‘পাত্র-পাত্রী’দের কদর। বেড়েছে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। সিলেটের বিয়েভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আর ভিসা প্রসেসিং সেন্টারগুলোতে ঢুঁ মারলেই তা টের পাওয়া যায়। অনেক বিয়েই হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক, গন্তব্যে পৌঁছার পর দুজনের মধ্যে আর সম্পর্ক থাকবে না- এমন শর্তে।

যেসব শিক্ষার্থী বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা’ পাচ্ছেন, তারা পড়ালেখা ও বিদেশে থাকা-খাওয়ার খরচ দিলে কাউকে স্বামী বা স্ত্রী বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে।

বিভাগীয় বিবাহবন্ধন ম্যারেজ মিডিয়া ফেসবুক গ্রুপে গত ২১ সেপ্টেম্বর এক তরুণী পাত্রের খোঁজ চেয়ে লেখেন, ‘আমি একজন পাত্র চাই। স্টুডেন্ট ভিসায় ডিপেন্ডেন্ট হয়ে ইউকে (যুক্তরাজ্য) যাওয়ার জন্য পাত্র চাই। সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে হবে। আমার কিছু দিনের মধ্যে অফার লেটার আসবে।’

একই দিন সিলেট বিভাগীয় বিবাহবন্ধন ম্যারেজ মিডিয়া নামের আরেক ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এক তরুণ লিখেছেন, দুজন মেয়ে লাগবে। একজন অনার্স পাস, আইইএলটিএস আছে এমন। অন্যজন ইন্টার পাস, আইইএলটিএস ৬ আছে এমন। অনার্স পাস যিনি, তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় যাবেন। ছেলে ১০০% খরচ বহন করবে। ইন্টার পাস যিনি, তিনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাবেন। ছেলে ৬০-৭০% খরচ বহন করবে, যেহেতু পারমিটের খরচ অনেক বেশি।

সিলেট ম্যারেজ মিডিয়া নামে আরেকটি ফেসবুক পেজে ৩০ সেপ্টেম্বর একই ধরনের পোস্ট করেন মোহাম্মদ তায়েফ আহমদ নামে একজন। মামার জন্য ‘পাত্রী’ খুঁজছিলেন তিনি। যোগাযোগ করলে তায়েফ জানান, তার মামা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার এসেছে। এখন ভিসার আবেদন করবেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই তার।

যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীল হিসেবে স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই মামা বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তবে যুক্তরাজ্য যাওয়ার খরচের বেশির ভাগ বহন করতে হবে কনের পরিবারকে।

কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়াটি এক রকম থমকে ছিল। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ফের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ভিসা দিতে শুরু করেছে। এর পর থেকেই সিলেটে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল পাত্র-পাত্রীর চাহিদাও বেড়ে গেছে।

চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ এলাকার এক তরুণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমি যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার পর সিলেটেরই এক মেয়েকে চুক্তিতে বিয়ে করি। মেয়ের পরিবার আমাদের এখানে আসার সব খরচ বহন করে। কাবিননামাসহ আমাদের বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও আগে থেকেই শর্ত ছিল, যুক্তরাজ্যে আসার পর আমরা আলাদা হয়ে যাব। এখন আমরা আলাদা আছি।

সিলেট অঞ্চলে এ রকম চুক্তিভিত্তিক বিয়ের প্রচলন অনেক আগে থেকেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীদের সেবাদাতা সংগঠন ওভারসিজ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক শামসুল আলম।

তিনি বলেন, সিলেটের তরুণদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বহু দিনের। ওই দেশের নাগরিককে বিয়ে করলে যেহেতু নাগরিকত্ব পাওয়াটা সহজ হয়, তাই অবৈধ হওয়া অনেকেই সেখানকার কাউকে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে ফেলেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তারা ডিভোর্স দিয়ে দেন। শিক্ষার্থী ভিসা সহজ ও ‘স্পাউস’ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় এ ধরনের বিয়ে অনেক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য এমন কাজ অনৈতিক।

অনেক ভিসা প্রসেসিং সেন্টারও অর্থের বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী খুঁজে পেতে সহায়তা করে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউকে বেসিস নামের একটি ভিসা প্রসেসিং সেন্টারের পরিচালক সাইফ আলম সেলিম।

তিনি বলেন, ভিসাপ্রত্যাশীরা আমাদের কাছে বিয়ের কাবিনসহ সব কাগজপত্র নিয়ে আসেন। তবু যাছাই-বাছাই করার জন্য আমরা তাদের কাছে বিয়ের সময়ের ছবি, হানিমুনের ছবিও দেখতে চাই। এসব দেখালে আমাদের আর সন্দেহের কিছু থাকে না। সবগুলো ডকুমেন্টই আমরা দূতাবাসে জমা দিই।
 
সিলেট নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি হাফিজ মাওলানা রইছ উদ্দিন বলেন, আগে আমার ওয়ার্ডে প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৩টি বিয়ের কাবিননামা হতো। এখন মাসে ২০-২২টি বিয়ে হচ্ছে। এখনকার বিয়ের বেশির ভাগ পাত্র-পাত্রীই স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্য যাত্রী। অনেক ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের মধ্যে চুক্তিতে বিয়ে করে থাকেন। তবে সব ধরনের কাগজপত্র ও সাক্ষী ঠিক থাকলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়