শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ০৫:০৭ বিকাল
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ০৫:০৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭৫ বছর পর ইউটিউব চ্যানেল মেলালো ভারত-পাকিস্তানের দুই ভাইকে

মিনহাজুল আবেদীন: সিকা খান আর সাদিক খান। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদিক ছিলেন বড়। আর সিকা ছোট। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় যখন দুজন আলাদা হন, তখন সিকার বয়স মাত্র ছয় মাস, আর সাদিকের ১০ বছর।

দাঙ্গার সময় সাদিক চলে যান পাকিস্তানে। সিকা রয়ে যান ভারতে। বৈরী দুই দেশের বাসিন্দা হয়ে পড়েন দুই ভাই। বহুদিন ধরে একে অন্যের খোঁজ করার ৭৫ বছর পর দেখা হলো দুই ভাইয়ের। পাকিস্তানের ইউটিউবার নাসির ধীলনের সহায়তায় ও বেশ কিছু ফোনের মাধ্যমে সিকা সাদিকের দেখা পান। চোখের জলে ভাসে দুই ভাই।

ব্রিটিশ শাসনের শেষভাগের ওই সময়ে সিকার মতো অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক হত্যার শিকার হয় সিকার বাবা ও বোন। তবে ১০ বছরের সাদিক সে সময় পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে পেরেছিলো। আনন্দবাজার 

পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের পশ্চিমের শহর ভাতিণ্ডায় ইটের তৈরি একটি বাড়িতে বসে সেসব কথা মনে করছিলেন সিকা। তিনি বলেন, ‘আমার মা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজন সিকাকে বড় করেন।’

ছোটবেলা থেকেই সিকা জানতেন, তার পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া সদস্য তার ভাই সাদিক। কিন্তু ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না সিকা। তিন বছর আগে প্রতিবেশী এক চিকিৎসক তার ভাইকে খুঁজে দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেন।

পাকিস্তানের একটি মন্দির পরিদর্শনের জন্য ভারতের শিখধর্মাবলম্বীদের ভিসা ছাড়াই সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। সে সময়ই ভাগ্য খুলে যায় সিকার। করতারপুর করিডরে গত জানুয়ারি মাসে দুই ভাইয়ের দেখা হয়।

২০১৯ সালে ওই করিডর খুলে দেয়া হয়। এ করিডর খুলে দেয়ার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো এক হওয়ার সুযোগ পায়। যদিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে।

হাতের মুঠিতে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া পারিবারিক একটি ছবি ধরে রেখে সিকা বলেন, ‘আমি ভারত থেকে এসেছি। আর সাদিক এসেছে পাকিস্তান থেকে। কিন্তু আমাদের পরস্পরের জন্য অনেক ভালোবাসা রয়েছে। প্রথমবার যখন আমাদের দেখা হলো, তখন আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। ভারত ও পাকিস্তানের বৈরিতা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমরা ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়েও ভাবি না।’

ভাইকে খুঁজতে সিকাকে সাহায্য করেছিলেন ৩৮ বছরের ইউটিউবার ধীলন। তিনি পাকিস্তানে পেশায় কৃষক ও আবাসন ব্যবসার এজেন্ট। ধীলন বলেন, ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি প্রায় ৩০০ পরিবারকে এক হতে সহায়তা করেছেন। পাকিস্তানে আরেক শিখধর্মাবলম্বী ভূপিন্দর সিং তাকে সহায়তা করেন।

এএফপিকে ধীলন বলেন, ‘আমি রোজগারের জন্য এমন কাজ করি না। মনের স্নেহ ও আবেগ থেকে আমি এই কাজ করি।’ ধীলন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এসব ঘটনা আমাদের নিজেদেরই ঘটনা। অথবা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঘটনা। তাই বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া এসব মানুষকে এক করাটা আমাদের পূর্বসূরিদের ইচ্ছাপূরণ।’

পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে এএফপিকে ধীলন আরও বলেন, যখন করতারপুরে তারা এক হলেন, তখন সেখানে প্রায় ৬০০ মানুষ জড়ো হন। দুই ভাইকে এক হতে দেখে অনেকেই কেঁদে ওঠেন।

ব্রিটিশদের শাসনের শেষ দিকে দেশভাগের সময় কয়েক লাখ হিন্দু, শিখ, মুসলিম পালিয়ে যায়। হিন্দু ও শিখধর্মাবলম্বীরা ভারতে পালিয়ে যায়। আর মুসলিমরা যায় পাকিস্তানের দিকে। ৭৫ বছর হয়ে গেলেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখনো বৈরিতা রয়েছে। তবু আশার কথা হলো দুই দেশের রাজনৈতিক শত্রুতা থাকলেও মানুষের মধ্যে ভালোবাসার টান এখনো রয়েছে।

এই যেমন পাকিস্তানে এসে মুসলিম হয়েছিলেন মুমতাজ বিবি। আর তাকে আবেগে জড়িয়ে ধরতে কোনো দ্বিধা নেই তাদের সৎভাই শিখ ধর্মাবলম্বী বলদেভ ও গুরমুখ সিংয়ের। দাঙ্গা চলাকালে মৃত মায়ের পাশে পড়ে ছিলো নবজাতক মুমতাজ। পরে তাকে মুসলিম এক দম্পতি দত্তক নেয়। তাদের কাছেই বড় হন মুমতাজ।

সে সময় স্ত্রী ও কন্যার মৃত্যুর খবর জেনে প্রথা অনুসারে বলদেভের বাবা বিয়ে করেন স্ত্রীর বোনকে। পরে সিং ভ্রাতৃদ্বয় জানতে পারেন, তাদের বোন বেঁচে আছে। তাদেরও সহায়তা করে ধীলনের ইউটিউব চ্যানেল। এ বছরের প্রথম দিকে ভাইবোনদের দেখা হয় করতারপুর করিডরে। প্রথম আলো

৬৫ বছরের বলদেভ সিং এএফপিকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো যখন বোনকে দেখলাম, তখন আনন্দের সীমা ছিলো না। আমার বোন মুসলিম, এতে কী আসে যায়? আমাদের শরীরে একই রক্ত বইছে।’

তিনি বলেন, ‘যখন আমি ভাইদের খবর শুনলাম, তখন বুঝলাম, এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। ভাইদের সঙ্গে আমার আবার দেখা হয়েছে। আমি এতে খুবই খুশি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়