শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ১৪ জুলাই, ২০২২, ০৮:৫৫ রাত
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশা পাগলার আলমারীতে যেভাবে এলো আড়াই কোটি টাকা

বিশা পাগলা

মিনহাজুল আবেদীন: বিশা পাগলাকে এলাকার লোকে ‘ফকির’ বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হিসেবে চেনে। কিন্তু কুমিল্লা তিতাস উপজেলার বিশা পাগলা মারা যাওয়ার পর তার ঘরে বস্তাভর্তি টাকা পাওয়া যায়, যার পরিমাণ ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

বিশা পাগলার স্বজন ও স্থানীয়রা কেউ জানেন না কীভাবে এতো টাকা এলো আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলার ঘরে। তাদের ধারণা, ওরসের সময় ভক্তদের থেকে পাওয়া টাকাই জমিয়ে এতো টাকার মালিক হয়েছিলেন বিশা। শুধু টাকা নয়, বিশা পাগলার ঘরে বান্ডিল বান্ডিল টাকার পাশাপাশি স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া যায়।

এই অর্থের প্রকৃত উৎস কী, বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন কার্যদিবস পর তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম মোর্শেদ।

গত ৮ জুলাই নিজ বাড়ির একটি ঘরে বিশা পাগলার মৃত্যু হয়। পরে তার শোবার ঘরে পাওয়া যায় তিনটি বস্তা। মঙ্গলবার এসব বস্তা খোলা হলে বেরিয়ে আসে টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রা।

কুমিল্লার তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমি যতোটুকু খবর নিয়েছি আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলা আধ্যাত্মিক লোক ছিলেন। তার কাছেও বহু ভক্ত-মুরিদ আসতেন। তারা তাকে মানতের টাকা দিতেন। এছাড়া শুনেছি মাজারের নামে তিনি হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করতেন। বিষয়টি ভালো করে জানতে বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিশা পাগলার টাকা পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা বিশা পাগলাকে ‘ফকির’ (আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি) হিসেবে জানেন। তিনি ৪০ বছর ধরে এই টাকা জমাচ্ছেন। তার ইচ্ছা ছিলো বাড়ির পাশে জমি কিনে একটি সুন্দর মসজিদ গড়বেন। বাকি টাকা দিয়ে একটি আলাদা ঘর করবেন। সেখানে বসে ফকিরি করবেন।

বিশা পাগলার বড় ভাই আওলাদ হোসেন বলেন, ‘বিশা সারা জীবন ফকিরি করলো। বিয়েশাদি করেনি। মসজিদ গড়ার খুব ইচ্ছা ছিলো।’

বলারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নূরনবী বলেন, ‘আমি টাকা গোনার সময় ছিলাম। অনেক আগের নোট ছিলো। সবগুলোই বান্ডিল করা। ৫০০ ও ১০০ টাকার এতো পুরোনো নোট ছিলো যে সেগুলো গোনার মেশিনে গোনা সম্ভব হচ্ছিলো না। মেশিনে বারবার ভুল হচ্ছিলো। এতো পুরোনো নোট এখন নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিশা পাগলার অনেক ভক্ত ছিলো। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তার এই ভক্তদের জন্য তিনি ওরস করতেন। সেখানে ভক্তদের টাকায় পাঁচ-ছয়টি গরু জবেহ করা হতো। সেগুলো দিয়ে তাবারক রান্না হতো। আর প্রতি ওরসের পরে যে টাকা বাড়তি থাকতো, সেই টাকা তিনি জমাতেন। আমরা যে ঘরে টাকা পেয়েছি, সে ঘরে তার ফকিরি চলতো। সেখানে ভক্ত ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ ছিলো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান ব্যাপারী বলেন, ‘প্রতি বছর বিশা পাগলার উদ্যাগে একটি ওরস হতো। সেই ওরসে হাজার হাজার ভক্ত হাজির হতেন। প্রতি ওরসে তার খরচ হতো লাখ দশেক টাকা করে। সে সময় ভক্তরা তার জন্য গরু, খাসি, মহিষ এবং নগদ টাকা নিয়ে আসতেন। হিসাব করলে দেখা যেতো, যে টাকা খরচ করে বিশা পাগলা ওরস করতেন তার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেশি টাকা ভক্তরা দক্ষিণা হিসেবে দিয়ে যেতেন। এটা তার ঘরে পাওয়া টাকার একটা বড় উৎস। দেশ ছাড়াও তার প্রবাসী অনেক ভক্ত ছিলেন। নানা কিছুর মানতে তারাও বিদেশি মুদ্রা দক্ষিণা হিসেবে পাঠাতেন। অনেক নারী ভক্ত ছিলেন। আমরা ধারণা করছি, বেশ কয়েব ভরি যে স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে, সেগুলো নারী ভক্তদের মানত করা।’

টাকা হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশা পাগলার বড় ভাই আওলাদ হোসেন, ছোট ভাই জামাল হোসেন ও বোন মুর্শিদা বেগম, ভাগনি তাসলিমা আক্তার ও বিশা পাগলার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সাইফুল ইসলাম মিঠু। মিঠু বিশা পাগলার চাচাতো ভাই মাহবুবুর রহমানের ছেলে।

বড় ভাই আওলাদ হোসেন জানান, জীবদ্দশায় বিশা পাগলার খুব ইচ্ছা ছিলো একটি মসজিদ করার। পৈতৃক সূত্রে ২৯ শতাংশ জমি পেয়েছেন তিনি। এতোটুকু জায়গায় মসজিদ হবে না। তাই বিশা পাগলা ৪০ বছর ধরে টাকা জমাচ্ছিলেন। এলাকায় জনকল্যাণমুখী কাজেও টাকা ব্যয় করার ইচ্ছা ছিলো তার। তবে মসজিদ করার পরেই সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজগুলো করার পরিকল্পনা ছিলো বিশা পাগলার।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ফকিরি করতো। আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে প্রয়োজনের বেশি একটাও অতিরিক্ত কথা বলতো না বিশা।’

এই টাকা দিয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভাই, বোন, ভাগনিসহ সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিশার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মসজিদ গড়ার জন্য টাকা ব্যয় করবো। সেজন্য আমরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা নেবো। শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে।’

বোন মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই পির আছিলো। আল্লাহওয়ালা লোক আছিলো। ভাই যেমনে চাইছে, আমরা হেমনে খরচ কইরাম। আমরার পিছনে এক টেহাও ব্যয় করতাম না। গেরামিওয়ালারা আমরার দুই ভাই, আমি, আমরার ভাগনি ও ভাতিজারে টেহাডি তুইল্লাহ দিছে। আমরাও আল্লাহর রাস্তায় খরচ কইরাম।’

তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা বিশা পাগলার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে কিংবা কোত্থেকে এতো টাকা তার ঘরে জমা হলো বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করতে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। আজসহ আগামী তিন কার্যদিবসে অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত তদন্ত চলবে। মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি আমাকে রিপোর্ট দেবে।’ নিউজবাংলা 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়