ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিমালয় অঞ্চলের অরুণ নদী ও এর শাখা-প্রশাখার প্রবাহে ভূত্বকের ক্ষয় হলেও মাউন্ট এভারেস্ট আরও ১৫ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। সোমবার এই বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীর স্রোতের কারণে ভূত্বকের এই ক্ষয় এভারেস্টের কেন্দ্র থেকে অন্তত ৭৫ কিলোমিটার দূরে ঘটছে। আর ক্ষয়ের কারণেই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ প্রতি বছর প্রায় দুই মিলিমিটার উঁচু হচ্ছে!
প্রশ্ন উঠতেই পারে, কোনো কিছুর ক্ষয় কীভাবে ওই বস্তুটিকে আরও উঁচু করবে? এর ব্যাখ্যায় গবেষকেরা এই ঘটনাটিকে একটি জাহাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জাহাজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এর মধ্য থেকে পণ্যসম্ভার নামিয়ে নিলে জাহাজটি পানির ওপর আরও ভাসমান হয়ে ওঠে। এভাবে ক্ষয়ের কারণে পৃথিবীর উপরিভাগও হালকা হয়ে যায়।
হিমালয় ৪ থেকে ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে গঠিত হয়েছিল। এই টেকটোনিক কার্যকলাপ হিমালয়কে উঁচু আরও করা অব্যাহত রেখেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা জোর দাবি করেছেন, অরুণ নদীও এই উত্থানে অবদান রাখে। নদীটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি নদীর তলকেও অনবরত ক্ষয় করে যাচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর আবরণের ওপর চাপ কমছে এবং ভূত্বককে আরও ওপরের দিকে স্ফীত হতে সাহায্য করছে।
সম্প্রতি ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী—শুধু এভারেস্ট নয়, এর প্রতিবেশী লোটসে এবং মাকালুর মতো অন্যান্য চূড়াও এই ঊর্ধ্বমুখী শক্তির কারণে দ্রুত আরও উঁচু হচ্ছে। বিভিন্ন জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকেরা এই উচ্চতা বৃদ্ধি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। পুরো অঞ্চলটির এই কর্মকাণ্ডে যে বিশাল শক্তিগুলোর খেলা চলছে সেই বিষয়টিও গবেষকদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাঁড়াভাবে প্রবাহিত অরুণ নদী পলি পরিবহনে বিশেষভাবে দক্ষ। ৮৯ বছর আগে তিব্বতে অন্য আরেকটি নদীর সঙ্গে মিশে গিয়ে এই নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
কিছু ভূতাত্ত্বিক গবেষণার এই ফলাফলগুলোর প্রশংসা করলেও তাঁরা মনে করেন, নদীর তলদেশ ক্ষয় এবং এর ফলে পর্বত উত্থানের সুনির্দিষ্ট গতিবিদ্যা সম্পর্কে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :