স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেট সুন্দর, ক্রিকেট নিষ্ঠুর! গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেই বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে প্লে-অফে তুলে দিয়েছিলেন। এবার আরেকটা শতকে তাদের টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় করে দিলেন গুজরাট টাইটান্সের হয়ে স্বপ্নের মতো ছন্দে থাকা শুভমান গিল।
চলতি আইপিএলের আগে নামের পাশে একটি সেঞ্চুরিও না থাকা গিল সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই পেরোলেন ম্যাজিক ফিগার। শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তার ৬০ বলে ১২৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করেই জয়ের পথটা পরিষ্কার করে রেখেছিল হার্দিক পান্ডিয়ারা। গিলের খুনে ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে আগুন ঝরালেন মোহিত শর্মা। ২.২ ওভার বল করে মাত্র ১০ রান খরচায় তুলে নিলেন পাঁচটি উইকেট।
শুক্রবার আহমেদাবাদে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে গিল নৈপুণ্যে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৩৩ রানের রেকর্ড পুঁজি গড়েছিল গুজরাট। রান পাহাড় তাড়া করতে নেমে মোহিত ও শামিদের তোপে ১৭১ রানেই অলআউট হয়ে গেছে মুম্বাই। ৬২ রানের বড় জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে মাত্র দ্বিতীয় আসর খেলতে নামা আইপিএলের নবীনতম দল গুজরাট।
এসেছে নতুন রাজা ছেড়ে দিতে হবে স্থান- কথাটা মিলে যায় গুজরাটের সঙ্গে। প্রথম আসরে খেলতে নেমেই চ্যাম্পিয়ন। এবারো হাতছানি আরেকটি শিরোপার। আগামী রোববার (২৮ মে) ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হবে দলটি।
এর আগে প্রথম কোয়ালিফায়ারে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে যায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। তবে চলতি আসরের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলটি প্রথম পর্বের পয়েন্ট তালিকায় নম্বর ওয়ান ছিল। সে কারণে দুইয়ে থাকা চেন্নাইয়ের কাছে হারলেও, ফাইনালে উঠতে গুজরাটের সামনে ছিল দ্বিতীয় সুযোগ। সে সুযোগ আর হাতছাড়া করল না হার্দিকরা।
এদিন টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত। আগে ব্যাট করতে নেমে গিল ও ঋদ্ধিমান সাহা ধীরস্থিরভাবে শুরু করেন। ফলে ৪ ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলে গুজরাট। তবে পরের দুই ওভারে ২৩ রান তুলে গিল ও সাহা ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ইঙ্গিত দেন। কিন্তু তখনই ফিরে যান সাহা। পিযূশ চাওলার বলে তিনি ফেরেন ১৬ বলে ১৮ রান করে।
এরপর আর পেছনে তাকাননি শুভমান গিল। সাই সুদর্শনকে সঙ্গে নিয়ে একের পর এক বল সীমানা ছাড়া করেছেন। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক গিল ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৩২ বলে। আভাস দিচ্ছিলেন আসরের তৃতীয় সেঞ্চুরি করার। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন সুদর্শন। রিটায়ার্ড আউট হওয়ার আগে তিনি ৫টি চার ও এক ছ্ক্কায় ৩১ বলে ৪৩ রান করেন।
তবে অন্যপ্রান্তে অবিচল গিল। রোহিত শর্মার কপালে ভাঁজ ধরিয়ে তিনি মুম্বাইয়ের সব বোলারকেই তুলোধুনো করেছেন। চারের চেয়ে উড়িয়ে মারতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন তিনি। মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানো গিল গুজরাটকে দুইশ'র তীরে নিয়ে আউট হয়ে যান। তবে তার আগে ৬০ বলে তিনি করেন ১২৯ রান। খেলেছেন ৭টি চার ও ১০টি ছয়ের বাউন্ডারি।
শেষ দিকে ১৩ বলে ২৮ রান করে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ও ২ বলে ৫ রান করে রশিদ খান অপরাজিত থাকেন।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন রোহিত। হয়তো ভেবেছিলেন প্রতিপক্ষের লক্ষ্য দেখে তাড়া করবেন। নিজেদের হাতে রাখবেন ম্যাচের রাশ। বৃষ্টি পড়ায় সেই সময় তার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়েছিল। কিন্তু সেঞ্চুরিয়ান শুভমানের দাপটে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে রোহিতের। সেই সঙ্গে যোগ হয় ঈশানের চোট। মাঠে সতীর্থ ক্রিস জর্ডনকে বাহবা জানাতে গিয়ে কনুইয়ে আঘাত লাগে ঈশানের। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ব্যাট করতেও নামতে পারেননি। তার জায়গায় এদিন রোহিতের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নেহাল ওয়াদেরা। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার ম্যাচে ইমপ্যাক্ট ফেলতে ব্যর্থ হন।
অন্যদিকে গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ব্যর্থতা শেষ ম্যাচেও দেখা গেল রোহিতের। শামির বলে উদ্বোধনী দুই ব্যাটার হারানোর পর ক্যামেরন গ্রিনের ব্যাটে আশা দেখছিল মুম্বাই। তাকে ঢালপালা ছড়ানোর আগেই উপড়ে ফেলেন আইরিশ পেসার জস লিটল। ২০ বলে ৩০ রান করেন গ্রিন। এরপর রান তাড়া করার কাজটা করেন তিলক ও সূর্যকুমার। তিলক ১৪ বলে ৪৩ রান করেন। সূর্য করেন ৩৮ বলে ৬১ রান। জিততে হলে এই দু’জনের এক জনকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হতো। সেটাই পারলেন না তারা। কখনও রশিদ খান, কখনও জস লিটল মুম্বাইয়ের জুটি ভেঙে দিলেন। আর শেষের কাজটা করলেন মোহিত শর্মা। অথচ প্রথম দিকে বলই করাননি হার্দিক। ডেথ ওভারের জন্য রেখে দিয়েছিলেন মোহিতকে। সত্যিই মৃত্যু ফাঁদ পাতলেন তিনি। ২.২ বলে পাঁচ উইকেট নিলেন মোহিত। দিলেন মোটে ১০ রান। শুভমান যেটা শুরু করেছিলে, মোহিত সেটাই শেষ করলেন। ঢাকা পোস্ট
আপনার মতামত লিখুন :