স্পোর্টস ডেস্ক ; ক্রিকেটার, নেতা, ব্যবসায়ী—আরো বহু পরিচয়ের মানুষ সাকিব আল হাসান। এবার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় খোলামেলা কথা বললেন নিজের রাজনীতি, ব্যবসা, মামলা, ক্রিকেটে ফেরার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।
-- নীরবতা ভাঙলেন সাকিব --
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সাকিব আল হাসান। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আর দেশে ফেরা হয়নি তার।
বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সাবেক এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বর্তমান হালচাল সম্পর্কে জানতে চাইলে “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। পরিবার আর বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি”—বললেন সাকিব। ”
ছাত্র আন্দোলনের সময় কানাডার সাফারি পার্কে ঘুরে বেড়ানোর একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, “ছবিটা আমি দেইনি, সেটা ছিল পারিবারিকভাবে আগে থেকেই পরিকল্পিত একটা ট্রিপ। আমি দায় নিচ্ছি। আমার উচিত ছিল আরও সচেতন থাকা।
-- রাজনীতি নিয়ে সাকিবের অবস্থান--
খেলোয়াড় সাকিব ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে নাম লেখান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদেও যান তিনি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন সাবেক এই অধিনায়ক। রাজনীতিতে আসা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, “আমাকে কেউ চাপ দেয়নি। সবাই বলেছে, ক্রিকেট খেলো। আমি তাই করেছি। ”
সাকিবের যুক্তি—রাজনীতি করা দোষের কিছু না। তিনি বলেন, “যদি আমার রাজনীতিতে আসা ভুল হয়, তাহলে তো সব পেশার মানুষেরই রাজনীতি করা ভুল হবে! নাগরিক হিসেবে এটা আমার অধিকার।
মাগুরা থেকে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে বললেন, “মানুষের ইচ্ছাতেই দাঁড়িয়েছিলাম। ভোটে জিতেছি। কিন্তু পরবর্তীতে খেলার ব্যস্ততা আর বিদেশ সফরের কারণে খুব বেশি সময় দিতে পারিনি—এটা আমার সীমাবদ্ধতা।
-- ব্যবসা, মামলা আর ভুল বোঝাবুঝি--
কাঁকড়া খামার ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে নানা সমালোচনার জবাবে সাকিব বলেন, “খামারটির ৩৫ শতাংশ আমার, বাকিটা অন্যদের। সমস্যা হলেই সবাই আমাকে দোষারোপ করছে। আমি তো নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে খামারটা চালু রাখার চেষ্টা করেছি। ”
শেয়ারবাজার নিয়ে বলেন, “আমি নিজে কখনো ট্রেড করিনি। অন্য একজনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলাম, আর তাতেই পুরো টাকা ডুবে গেছে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি এক টাকাও লাভ করেছি—সব দিয়ে দেব।
-- আবার খেলতে চান, স্বপ্ন দেশের মাটিতে বিদায় নেওয়া---
দেশের হয়ে খেলতে চান কি না এমন প্রশ্নে সাকিব সোজাসাপটা বললেন, “আমি এখন এমপি না, রাজনীতিতেও নেই। এরপরও যদি খেলতে না পারি, তাহলে সেটা তো অনৈতিক। ”
তার ইচ্ছা স্পষ্ট—বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে আবার মাঠে নামা। তিনি বলেন, “একটা সিরিজ, দুইটা সিরিজ, কিংবা যতদিন পারি—আবার খেলতে চাই। দেশের মাঠেই বিদায় নিতে চাই। ”
বিসিবি সভাপতির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন সাকিব, জানালেন শারীরিক ও মানসিকভাবে খেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
-- মানুষ এত জটিল—এটা বুঝতে সময় লেগেছে--
ব্যবসায়িক ঝামেলা ও মামলার প্রসঙ্গে বলেন, “৪.৫ কোটির ঋণের মধ্যে আমার অংশ ১.২ কোটি, তবুও শুধু আমার সম্পত্তি জব্দ! এটা কি স্বাভাবিক?”
একটি হত্যা মামলায় নিজের নাম জড়ানো প্রসঙ্গে বললেন, “যিনি মামলা করেছেন, তিনিও জানেন না আমি কীভাবে যুক্ত হলাম!”
শেষে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে বলেন, “আমি বিভ্রমে ছিলাম। মানুষ আসলে অনেক জটিল। এখন পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি।
--- নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন ---
নতুন সরকার সৎভাবে কাজ করতে চাইছে—এটাই আমার বিশ্বাস। তবে কতটা সফল হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে,” বললেন শাকিব। সবকিছুর পরেও তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন একটাই— বাংলাদেশের হয়ে খেলে, দেশের মাঠেই ক্রিকেটকে বিদায় জানানো।
-ডেইলি সান থেকে অনূদিত, ঈষৎ সংক্ষেপিত, বাংলানিউজ