শিরোনাম

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৮:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্বের বড় শক্তিগুলো বাংলাদেশকে বিভ্রান্তির রাজনীতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে: আবুল কাসেম ফজলুল হক

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] আমাদের অর্থনীতি ও আমাদেরসময় ডটকম: বিএনপি বা তার সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করে আসছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক বা এ জাতীয় সরকারব্যবস্থায় সরকার নারাজ। তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ীই হবে নির্বাচন। ফলে নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এই ইস্যুতে দেশে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার: তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত পরাজয়। তারা জনগণের ভেতর থেকে কাজ করে একটা নির্বাচন করতে পারেন না। এটা তো কেবল আওয়ামী লীগ বিএনপির ব্যর্থতা বললে হবে না, এটা আমাদের গোটা জাতির ব্যর্থতা। রাজনৈতিক দলগুলো এতোটা খারাপ অবস্থায় গেছে যে একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারে না। এই জায়গায় উন্নতি করতে হলে জনগণের ভূমিকা লাগবে। রেডিও, টেলিভিশন ও আরও নানা মিডিয়া জনসাধারণকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। রাজনীতি গভীরভাবে চিন্তা করার দিকে মানুষকে যেতে দিচ্ছে না। জনগণের জাগ্রত রাজনৈতিক চেতনাকে একেবারে নষ্ট করে দেওয়া এবং জনগণের মধ্যে যেন রাজনৈতিক চেতনা ডেভেলপ না করে তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার আয়োজন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ করেছে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি করেছে।

[৩] বিএনপি বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির এই সিদ্ধান্ত কি সঠিক বলে মনে করেন আপনি? 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক: আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এই সময়ে বিএনপি জনগণের উদ্দেশ্যে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়নি। একটু-আধটু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। তা পত্রিকায় বের হয়, পরেরদিন মানুষ তা ভুলে যায়। প্রকৃতপক্ষে নিশ্চিতভাবে পুস্তিকা আকারে জনগণের কাছে ওইরকম কোনো বক্তব্য দেয়নি দলটি। এই বক্তব্যশূন্য অবস্থায় রাজনৈতিকভাবে ভালো করার কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি। নির্বাচনে না গেলেও বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলন করতে চাইলেও ক্ষতিগ্রস্তই হবে। কোনো রকমের একটা নির্বাচন করে যদি আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসে, তাতে দেশে নানা ভাবে অপজিশন গড়ে উঠবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী চক্র তৎপর হবে, এমন আশঙ্কা অনেকেরই। আমিও মনে করি, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

[৪] অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বাস্তবতা কি আছে এখন দেশে?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক: একটা ফেয়ার ইলেকশনের কোনো বাস্তবতা এখন দেশে নেই। সমস্ত এডমিনিস্ট্রেশন আওয়ামী লীগের পক্ষে। নানান সুযোগ-সুবিধা সরকার তাদের দিয়ে আসছে। হার্ডলি ৫ শতাংশ, খুব বেশি হলে ১০ শতাংশ আছেন যারা আওয়ামী লীগের বাইরে। বিএনপির পক্ষে বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। বাকি ৯০ বা তার চেয়েও বেশি শতাংশ তো আওয়ামী লীগেরই পক্ষে। এই এডমিনিস্ট্রেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের জেতা ছাড়া কোনো অলটারনেটিভ নেই।

[৫] স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পার হয়ে গেলো। কেন এখনো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠছে না?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক: বিএনপির সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয়দের। ইনক্লুডিং আমাদের প্রধানমন্ত্রীরও। আওয়ামী লীগের টপ পজিশনের পাঁচ-সাতজন। বিএনপিরও শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ-সাতজন। তাদের মধ্যে একটা আলাপ-আলোচনা থাকা উচিত ছিলো। কারণ দেশটা কেবল আওয়ামী লীগের নয়, দেশটা কেবল বিএনপিরও নয়। দেশের জনসাধারণের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগ, জনসাধারণের ভেতর থেকেই বিএনপি। দুটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ যে ভাষায় আরও ২০ বছর আগে থেকে কথা বলে আসছে, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে একেবারে বাংলাদেশের নাগরিকদের কাতারে রাখছে না! এই ভাষায় কথা বললে তো কোনো রকম বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা থাকে না। 

[৬] বিএনপির দুর্বলতা কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক:  বিএনপি আসলে কোনো রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেনি। একটা রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠার জন্য যে যে কন্ডিশন দরকার হয়, তার এক-আধটা আছে দলটির মধ্যে। বাকি সবকিছুই মাইনাস। এভাবেই বিএনপি চলছে। বিএনপির মূল শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। জনগণ যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী হয়, তখনই বিএনপি রাজত্ব করেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আর সেই অবস্থানটা রক্ষা করতে পারেনি। বিএনপি এখন পরিচালিত হচ্ছে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার মাধ্যমে। তারেক রহমান এমন কোনো নেতা নন যে তার কথা অনুযায়ী বিএনপি বড় হয়ে উঠবে। নেতৃত্বশূন্যতাই বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এ দেশের বহু মানুষ আছে যারা এন্টি আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপিকে ভোট দিতো, এখন সেই ভোট দেওয়ারও সুযোগ তাদের নেই। কারণ গত দুটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, এগুলোকে নির্বাচন বলে না। 

[৭] বিএনপি বা অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে কি দেশ এখনকার চেয়ে ভালো থাকবে? 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক: ভালো করার লক্ষ্য বিএনপির মধ্যে আমি দেখি না। রাজনৈতিক কোনো চিন্তাই নেই, কেবল ক্ষমতা দখলের চিন্তা। কাজেই তারা ক্ষমতায় এলে কী ভালো করবেন? জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্রেকেটেড হয়ে একসময় ৪-৫ বা ৮টা মন্ত্রী পেয়েছিলো। সংসদে সদস্য ৩০-৩৫টা পায়। এ নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। এটা তো কোনো রাজনীতি হলো না। এগুলো হচ্ছে লেজুরবৃত্তি। সেদিক বিবেচনায় জাতীয় পার্টি এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে কোনো এনটিটি রাখে না। তবে স্বাধীন চিন্তাভাবনা এগোতে চাইলে জাতীয় পার্টির সম্ভাবনা আছে। বিএনপি যারা করে তাদের অনেকেই তো জাতীয় পার্টিতে চলে যাবে। কিন্তু জাতীয়  পার্টি যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য নিয়ে ভাগাভাগি করে চলছে, এখানে অন্যরা তো ভরসা পায় না। জাতীয় পার্টিতে গেলে দেশের জন্য কিছু হবে না, নিজের জন্যও কিছু হবে না। এই মনে করে জাতীয় পার্টিতে অনেকেই যাচ্ছেন না।

[৮] গণতন্ত্র কি এখন কেবলই নির্বাচনমুখী। কেননা নির্বাচন এলেই আমরা গণতন্ত্র, অধিকার, দাবিএসব কথা বেশি বেশি শুনি? 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুলক হক: নির্বাচনই গণতন্ত্রÑএরকম একটা চিন্তা এখন আমাদের মধ্যে। গত প্রায় ২০ বছর ধরে। অন্য কোনো রাজনৈতিক চিন্তাÑজাতি, রাষ্ট্র, জনজীবনের সমস্যা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয় না। নির্বাচন আর গণতন্ত্র এক নয়। নির্বাচন খুব ভালো করতে চাইলেও গণতন্ত্রের পরিকল্পনা ছাড়া অথবা সমাজতন্ত্রের পরিকল্পনা ছাড়া কিংবা ধর্মের পরিকল্পনা ছাড়া একা একা নির্বাচন ভালো হতে পারে না। ধর্মীয় শক্তি তো এখন দুনিয়াজুড়েই উঠে আসছে। এর মূল কারণ যারা গণতান্ত্রিক তারা গণতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কাজ করেছেন। যারা সমাজতন্ত্রী তারাও ঠিকমতো এগোতে পারেননি। 

[৯] তাহলে কি এখন বাংলাদেশে নির্বাচন সর্বস্ব রাজনীতি চলছে?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক: নির্বাচন কেন, নির্বাচন করলে জনজীবনের কী উপকারে আসবেÑএসব কথা আলোচনায় আসে না। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একটা মেনুফেস্টো দেওয়া হয়। নির্বাচন হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবেÑএই ভ্রান্ত ধারণা আওয়ামী লীগ-বিএনপি, তাদের পেছনে বিশ^ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আছে। অর্থাৎ বিশ^ব্যাংক-আইএমএফ ও পাশ্চাত্যের বড় শক্তিগুলো বিভ্রান্তির রাজনীতির মধ্যে বাংলাদেশকে ফেলে দিয়েছে। আওয়ামীলীগ-বিএনপি এই যে দুর্ভাগ্যের মধ্যে আমাদের রাজনীতিকে ফেলে দিয়েছে, সেই দুর্ভাগ্যের পরিমণ্ডলের ভেতরে থেকে রাজনীতি করছে। নির্বাচনই সংকটের সমাধান বাংলাদেশের রাজনীতিতেÑএরকম একটা ভ্রান্ত ধারণা নানাভাবে প্রচার করছে। 

[১০] নির্বাচিত সরকার মানেই কি গণতন্ত্র?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : আওয়ামী লীগ বিএনপি চেয়েছে, রাজনৈতিক সমস্ত বক্তব্য বাদ দিয়ে কেবল নির্বাচনের কথা ধুয়ে নির্বাচনী সরকার গঠন করতে হবে। প্রকারান্তরে প্রচার করা হয়েছে, নির্বাচিত সরকার মানেই গণতন্ত্র। কেবল নির্বাচনের মধ্যে গণতন্ত্রকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। যা জনগণের জন্য প্রতারণামূলক। আজকে দেশে যে রাজনৈতিক দুর্গতি তা নতুন নয়। বহু বছর ধরেই চলছে এই সংকট। সংকট ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে আজকের এই অবস্থায় পড়েছে। 

[১১] রাজনীতির মাঠে বিদেশি শক্তির তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : বিদেশি শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারা টেনে এনেছেন? আমরা যদি গত ১০-১৫ বছরের অবস্থান দেখি, তাহলে দেখবো বিএনপি সম্পূর্ণভাবে আমেরিকান দূতাবাস, আমেরিকান স্টেইট ডিপার্টমেন্ট ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে গিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান চায়। এটা সম্পূর্ণ অনুচিত। যা আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে। অতীতে আওয়ামী লীগও একইরকম ভাবে ওয়াশিংটন ও তাদের সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসে দৌড়াদৌড়ি করেছে। প্রথমে আওয়ামী লীগই এই ধারা শুরু করেছিলো। তখন ক্ষমতার বাইরে ছিলেন তারা, একানব্বইতে। 

 [১২] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার পলিসি কী। কেন বাংলাদেশকে নিয়ে এতো আগ্রহ তাদের?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানÑএসব দেশ নিয়েই দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ান পলিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থে রাখতে চায়। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার কাছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারত। দ্বিতীয় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ভারতকে আমেরিকা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে, যদি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমেরিকাপন্থী হয়ে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে থাকে। কিন্তু আমেরিকা যে সবসমসয় সফল হয়েছে তা নয়। কিন্তু সফল না হলেও নতুন নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কারণ বিশ^ রাজনীতিতে তারা নিজেদের কর্তৃত্ব রক্ষা করতে চান। জো বাইডেন ভীষণভাবে তা চান। ট্রাম্প এরকমটা কম চাইতেন। 

[১৩] শেখ হাসিনার সরকার তো আমেরিকার কোনো কথা শুনছে না। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই কি সরকারের ওপর নানা চাপ সৃষ্টির তৎপরতা?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : দক্ষিণ এশিয়ায় কর্তৃত্বের জন্য আমেরিকা ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে চায়। অন্য দেশগুলোকেও ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যদি তাদের মুঠোয় থাকে, তাহলে ভারত বেশি কিছু করতে পারবে না। কিন্তু ভারতকে টোটালি আমেরিকান ব্লকে নিয়ে নিতে চাইছে। কাগজ-কলমে অনেকটুকু আমেরিকান ব্লকে গিয়ে আছে, কিন্তু বাস্তবে যাচ্ছে না। এজন্য ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশকে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পাকিস্তান বহুলাংশেই যুক্তরাষ্ট্রের মুঠোর মধ্যে আছে। বাংলাদেশ একটু বেরিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। এটা প্রশংসনীয়Ñবাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। কিন্তু বৃহত্তম জাতীয় যে ঐক্য দরকার সেখানে তো শেখ হাসিনা যে নীতি চলছে, সেই নীতি নিয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নেবোÑএটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। 

[১৪] যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায় বাংলাদেশের কাছে?

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : আমেরিকা চায় বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হোক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকুক। এইভাবে ঘোষণা দিয়ে হয়তো তা তারা বলেন না। কিন্তু তাদের সমস্ত কার্যকলাপ সেটাই প্রমাণ করে। তাদের ভাবনা হচ্ছে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে, আসুক। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে, তাহলে নতুন তৃতীয় কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসুক। নতুন তৃতীয় শক্তি হচ্ছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), সুজন, ইলেকশন ওয়াচ, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, ফেমা, জানিপপ, পার্লামেন্ট ওয়াচ, এডুকেশন ওয়াচ, মাইনরিটি ওয়াচÑএ জাতীয় অনেকগুলো সংগঠন আছে। যারা এনজিও হিসেবে কাজ করে। 

[১৫] আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা কথা শুনছেন না আমেরিকার। ফলে আমেরিকা বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন চায়। সেই চেষ্টা তারা এখন করছে। যারা দুনিয়াব্যাপী শাসন চালাতে চান, তাদের অনেক ক্ষুদ্র-বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গি বা বিষয় থাকে। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় আছে। আমেরিকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্রমাগত প্রস্তাব দিয়ে আসছে, সেটা একবছরেরও বেশি সময় ধরে। আমেরিকা কী প্রস্তাব দিচ্ছে? আমার ধারণা আমেরিকা বলছে, আপনারা আমাদের সঙ্গে আসেন। কেন আপনারা চীন-রাশিয়ার সঙ্গে পড়ে আছেন! তারা আপনাদের কী দেবেন? আপনাদের ডেভেলপমেন্টের যতো টাকা লাগে আমরা দেবো, আমাদের সঙ্গে আসুন। ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির সদস্য হোন। এই প্রস্তাবে শেখ হাসিনা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এই রাজি না হওয়াটাকে আমি একটা ব্যাপার বলে মনে করি। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়