শিরোনাম
◈ চীন অলিম্পিক ক্রিকেটে সোনা জিততে পারে! অ‌স্ট্রেলিয়ান স্টিভ ওয়াহর ভবিষ্যদ্বাণী ◈ রেফা‌রির গা‌য়ে বরফ ছু‌ড়ে মারায় ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন রিয়াল মা‌দ্রিদের রুডিগার ◈ উপাচার্যসহ অনেকের পদত্যাগ: ইউআইইউ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ◈ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত রসায়ন ও অন্যদের ভাবনা ◈ সমা‌লোচনার মধ্যে বিসিবির জরুরি ভার্চুয়াল সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি ◈ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলার আহ্বানে যা বলেছিলেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস (ভিডিও) ◈ নতুন অধ্যায়ের সূচনা: সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু ◈ রিজার্ভ আরও বাড়লো ◈ নতুন সিটি করপোরেশন হতে যাচ্ছে বগুড়া ◈ খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ভারত-পাকিস্তান ভ্রমণ না করার পরামর্শ সরকারের

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:৪৬ রাত
আপডেট : ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত রসায়ন ও অন্যদের ভাবনা

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতি দলগুলো জোট ভারি করতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলো কীভাবে রাজনৈতিক জোট তৈরি করবে সে নিয়ে চলছে আলোচনা৷

বছরের পর বছর ধরে জোটসঙ্গী হিসেবে একসাতে হেঁটেছে বিএনপি ও জামায়াত৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন দিকে মোড় নেবে এই দুদলের সম্পর্ক?

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ পারবে কি না তার উপর নির্ভর করছে জোটের সমীকরণ৷ ধারণা করা হচ্ছে, দলটি যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে৷ এদিকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নগারিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান কেমন হয়ে উঠতে পারে তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷ 

৫ আগস্টের পর নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকলেও সম্প্রতি লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে জাময়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বৈঠকের পর দূরত্ব কমার আভাস দেখা দিয়েছিলো৷

ওই বৈঠকের পর জামায়াতের আমীর ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময় ফেব্রুয়ারিতে (রোজার আগে) নির্বাচনের কথা বলেন৷ বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে জাতীয় নির্বাচনের এই দাবির আগে জাাময়াতের অবস্থান ছিল অনেকটা ভিন্ন৷  তারা সংস্কারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে তারপরে নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছিল৷ কিন্তু গত সপ্তাহে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান৷ এদিকে বিএনপি এমন প্রস্তাবনার বিরোধী৷ জাতীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হোক এমনটা চায় দলটি৷ এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের সাথে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির মিল রয়েছে৷

জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হলেও ৫ আগস্টের পরে এই দুই দলের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বৈঠক  হয়নি৷ সহসা হবে কী না তারও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না৷ বিএনপি এরইমধ্যে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে৷ তাদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও এনসিপিরও বৈঠক হয়েছে৷

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরীক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  সাইফুল হক বলেন, ‘‘জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গী ছিলো৷ তবে এখন তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব দেখছি৷ তাদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ দেখছি না৷ এটা একটা বড় চমক৷ তবে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে৷’’

তার কথা, ‘‘এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে নানামুখী বৈঠক হচ্ছে তার কারণ দুইটি৷ একটি হলো আগামীতে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক অবস্থান এবং মেরুকরণ তৈরি করা৷  আরেকটি হলো সংস্কারের গতি তৈরি করে এবছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন করা৷ বিএনপিসহ আমরা আরো অনেক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই৷ সেটা না হলো আন্দোলনের চিন্তাও আছে৷''

এনসিপিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে৷ তারা বিএনপি জামায়াত উভয় দলের সঙ্গেই বৈঠকের আশা করে৷ এরইমধ্যে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও তারা বৈঠক করেছে৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘‘আমরা এখন যে বৈঠকগুলো করছি সেখানে আমরা জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রাখিনি৷ আমরা আসলে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান তাদের জানাচ্ছি৷  প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার এই দুইটি বিষয়কেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি৷’’

‘‘আর নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচনী জোটের কথা ভাবব৷  তবে সেই জোট হবে আমাদের৷ আমরা অন্য কোনো জোটে যাব না৷ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা আমাদের আছে,'' বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্টতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত তো রোজার আগে নির্বাচন চেয়েছে৷ সেই ধরনের অবস্থানে তো আমরা নাই৷ আমরা তো সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই৷ আর আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাই৷ সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চাই৷ কারণ যেভাবে চাঁদাবাজি দখল বেড়ে যাচ্ছে তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দরকার৷ সেই চাওয়ার সঙ্গে হয়তো আমাদের সাথে জামায়াতের মিল আছে৷ কিন্তু আমরা চাইছি, আমাদের চিন্তা থেকে৷ আর জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নেইনি৷’’

জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে দলটির  যুগ্ম মহাচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘জামায়াত নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ার কোনো বিষয় নাই৷ বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল , জামায়াত আরেকটি রাজনৈতিক দল৷ তারা তাদের মতো চলে৷   লন্ডনে যে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমীর দেখা করেছেন এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার৷ এর বাইরে যা বলা হচ্ছে তা আমরা পত্রিকায়ই দেখছি৷''

‘‘তারা বলছে পরিপূর্ণ সংস্কারের পর নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে৷ বলছে এই মূহুর্তে নির্বাচনের দরকার নেই৷ আসলে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে আছে৷ আমরা সেই নির্বাচনের জন্যই কাজ করছি৷ আমরা আমাদের জোটের দলগুলোর সঙ্গে এনিয়ে ধরাবাহিক বৈঠক করছি৷ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই,’’ বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠক বা আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সে বিষয়টি আমার জানা নেই৷ আরো উপরের নেতারা বলতে পারবেন৷’’

বিএনপি জামায়তের সম্পর্কের বিষয়টি দুইটি সমীকরণ থেকে দেখছেন  রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ৷ তিনি বলেন,  আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, এটা একটা বিষয়৷ আরেকটি বিষয় হলো, আগে বিএনপির কাছে জামায়াত যতটা প্রয়োজনীয় ছিলো আমার মনে হয় এখন ততটা নয়৷ জামায়াতের পপুলার ভোটের পার্সেন্টেজ কখনো খুব বেশি ছিল না৷ যদি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তখন একশ'র মতো আসন আছে সেখানে জামায়াতের ৩০-৪০ হাজার ভোট আছে৷ তখন ওই ভোট নিয়ামক হয়ে ওঠে৷ তখন জামায়াত বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে৷ সেই অবস্থা এখন আর নাই৷ জামায়াত চাইছে সংস্কার, বিচার এসব দিয়ে নির্বাচনটা দেরি করতে৷ তাদের ধারনা এতে তাদের অবস্থান ভালো হবে৷’’

‘‘তবে বিএনপি এখন জামায়াতের সথে সম্পর্কটা রাখতে চাইছে যাতে নির্বাচন বিলম্বিত না হয়৷ জামায়াতের আমির লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বললেন, তারা রোজার আগে নির্বাচন চায়৷ কিন্তু পরে আবার বলল সংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হবে না৷ জামায়াতকে বোঝা কঠিন৷ তারা এখন আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায়৷  আসলে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে নানাভাবে টেনশনের মধ্যে রাখতে চায়৷ তাদের ওপরও তাই নির্ভর করা কঠিন৷’’

এবিষয়ে জামায়াতের কোনো নেতার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে জামায়াতের এক নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ‘‘আমরা আসলে সংস্কার, নির্বাচন, বিচার সবই চাই৷ সেটা করতে হলে এই সরকারের যে যৌক্তিক সময় দরকার সেটা আমরা দেব৷ আর নির্বাচনে জোট নিয়ে এখনই জামায়াত চিন্তা করছে না৷ ৩০০ আসনেই আমাদের প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা আছে৷’’

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার নির্বাচনে  ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর একটি জোট গঠন করতে চায়৷

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা ধারবাহিকভাবে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷ একটি বড় ইসলামি রাজনৈতি দল  হিসাবে অবশ্যই এনিয়ে আমরা জামায়াতের সঙ্গে কথা বলব৷ তবে তাদের কী চিন্তা আছে তা আমরা এখনো জানি না৷’’

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়