শিরোনাম
◈ শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নির্গমনের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের ‘এনআইডি লক’ ◈ মারা গেলেন পোপ ফ্রান্সিস ◈ বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ, সীমান্তে প্রতিনিধিদল (ভিডিও) ◈ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান শাজাহান খান ◈ চাঁনখারপুল গণহত্যা : সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ◈ এবার ব্যাংক হিসাব তলব মডেল মেঘনা আলমের ◈ করফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার: সিপিডি ◈ দেশে তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম ◈ অবৈধ অভিবাসীদের সহায়তাকারীদের মার্কিন দূতাবাসের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫০ দুপুর
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ: বাম দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বাম জোটের নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। এতে বিএনপির পক্ষ থেকে লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বাম জোটের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ, খালেকুজ্জামান) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ ও সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে তারা যুগপৎ কর্মসূচির শরিকরা ছাড়াও বিগত আন্দোলনে সক্রিয় থাকা রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আদর্শিকভাবে সব সময় ডানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা দলটি এখন বামদের সঙ্গেও তাই ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। এটাকে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। সূত্র: বণিকবার্তা

এ বিষয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা জানান, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য কয়েক বছর ধরে বাম ও প্রগতিশীল ধারার দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। এর অংশ হিসেবেই সিপিবি, বাসদসহ বাম দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন দরকার, এ প্রশ্নে দেশের সব রাজনৈতিক দলই ঐকমত্য প্রকাশ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে কীভাবে গ্রেটার ঐক্য করা যায়, সে ব্যাপারে সিপিবি, বাসদসহ বাম ধারার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়। এরই মধ্যে তারাও নির্বাচনের বিষয়ে মত প্রকাশ করেছে।’

সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি ঘোষণা করে ৩১ দফা। তার এক বছর পর গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। গঠন হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সে সরকার এরই মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন, বিতর্ক ও মতানৈক্য। দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বিএনপির দূরত্ব বেড়েছে এ বিষয়ে। তাই বিএনপি চাইছে নতুন সঙ্গী বাড়াতে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা দল, বিশেষ করে বামদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দলটির নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কোনো বাম দলেরই ক্ষমতায় যাওয়ার রোডম্যাপ নেই। ফলে তাদের নেতাকর্মীদের অনেকেই আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিতে যোগ দেন। এর মধ্যে বিএনপি গঠনে বামপন্থীদের একটি ধারার বেশ অবদান রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালে রেড মওলানাখ্যাত আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও তার অনুসারীদের হাতেই দলটির ভিত্তি শক্ত হয়েছিল। ভাসানীর মৃত্যুর পর ন্যাপের তৎকালীন মহাসচিব মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ তার অনেক রাজনৈতিক শিষ্য ও সহযোগীও যোগ দেন বিএনপিতে। সঙ্গে করে নিয়ে যান ন্যাপের দলীয় প্রতীক ধানের শীষকেও। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধানের শীষ প্রতীকটি এখন বিএনপিরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।

নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দল এবং বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দলের জোট একসঙ্গে লড়েছে। এছাড়া সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের মধ্যে বামপন্থী, ডানপন্থীসহ সব মতেরই ছাত্র সংগঠন ছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিপিবির মতো দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা রাজনীতির নতুন সমীকরণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও কর্মসূচি সবসময় আওয়ামী লীগকেই সুবিধা দিয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। দলগতভাবে জোট না করলেও সিপিবির অনেক দলত্যাগী নেতা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি পর্যন্ত হয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও জায়গা করে নেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিএনপি আর বাম দলগুলোর মধ্যে তেল আর জলের সম্পর্ক। মতাদর্শের হিসাব করতে গেলে আশ্চর্যজনক ঘটনা; তবে অস্বাভাবিক নয়। একটি বড় দল হিসেবে বিএনপি সরকার গঠনের আশা করছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা কথা বলছে। বামপন্থীদেরও ফেজ বা মিডিয়া ভ্যালু রয়েছে। বিএনপি হয়তো সেটাকেই কাজে লাগাতে চাচ্ছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বামদের কাছে টানার চেষ্টা করে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৪ মে থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত দলটি প্রথম দফায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। ওই সময় বাম দলগুলো বিশেষ করে সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে বসার আগ্রহ দেখালেও ইতিবাচক সাড়া পায়নি বিএনপি। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঠিকই বৈঠকে বসেছেন বাম নেতারা।

এর আগে গত মার্চে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের জোট গঠনের গুঞ্জন শোনা যায়। গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলোকে নিয়ে এ জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে আলোচনা ওঠে। এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ‘বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক ও স্বাধীনতার পক্ষের’ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর নেপথ্যে ছিল সিপিবি, বাসদ ও বাংলাদেশ জাসদের মতো দলগুলো।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় উঠে আসছে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা উচিত। যেমন আমরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলি না, বসি না। এ ধারাটার যেন পরিবর্তন হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যেন এমন কোনো আচরণ না করি, যা নিয়ে অরাজনৈতিক মহলে কথা বলার সুযোগ পায়। আমরা যার যার কথা বলব, জনগণ কার পক্ষে থাকবে না থাকবে সেটি জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এখনকার এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন।’

ঐক্যের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বিএনপির সঙ্গে কোনো জোট করতে যাইনি, গিয়েছি আলোচনা করতে। আদর্শিক ভিন্নতা থাকার কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হয় না। হয় কেবল ইস্যুভিত্তিক কোনো আলোচনা। আমাদের মূল জোট তো আছে। সেটিকে ধরেই এগোচ্ছি। বাম জোটের রাজনীতি পরিষ্কার। আমাদের লক্ষ্য সমাজতন্ত্র। আমরা সমাজ বিপ্লব সাধন করতে চাই। সুতরাং সে জায়গায় তারাও (বিএনপি) আমাদের সঙ্গে জোট আশা করে না, আমরাও এটি বিবেচনা করি না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়