অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গতকাল তাদের সুপারিশমালা জমা দেওয়ার পর কয়েকটি সুপারিশ নিয়ে তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার এবং ভরণপোষণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। কিছু সুপারিশ নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সেগুলো ‘কোরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। সূত্র: আজকের পত্রিকা
আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া একটি পোস্টে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান লেখেন, ‘গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে উক্ত সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে, তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিবে।’
ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, ‘কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দিবে।’ তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে এই সুপারিশগুলো প্রত্যাখ্যান করবে।
অবশ্য গতকাল কমিশনের প্রধান শিরীন হক স্বীকার করেছেন, তাঁদের কিছু সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তবে তিনি এই বিতর্ককে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখন ২০২৫ সাল এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা হওয়া দরকার, যাতে মানুষ নারীর চাওয়া এবং স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ৪৩৩টি সুপারিশের মধ্যে অন্তত ২০০টিও যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে নারীর অগ্রগতির পথে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৪৩৩টি সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদনটি জমা দেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক জানান, তাঁদের সুপারিশমালায় ১৫টি মূল বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে দ্রুত বাস্তবায়নের যোগ্য, কিছু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বাস্তবায়নের সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী-পুরুষ সমতার নিশ্চয়তা এবং অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, উত্তরাধিকার আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ আইন, নাগরিকত্ব আইন, সাক্ষী সুরক্ষা আইনসহ বিভিন্ন আইনে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।