শিরোনাম
◈ ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ে সোচ্চার বিএনপি, সর্বদলীয় জনমত গঠনে জোর, চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ◈ সিলেটে বাংলা‌দেশ অলআউট ১৯১ রা‌নে, দিন শে‌ষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ বিনা উই‌কে‌টে ৬৭ ◈ সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ চায় বিএনপি: চারটি বিষয়ে ব্যতিক্রম প্রস্তাব ◈ যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৫ ◈ রিজার্ভ বেড়ে পৌনে ২৭ বিলিয়ন ডলার ◈ বেড়ে দেড় লাখ টাকার মাইলফলকে পৌঁছাল স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম ◈ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময়সীমা ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ল ◈ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও চীনা শিক্ষার্থীদের মামলা ◈ মুখে কালো কাপড়, আওয়ামী লীগের ব্যানারে রহস্যজনক মিছিল (ভিডিও)  ◈ ‘অত্যাচার করে’ পুলিশ হত্যার জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল: আইন উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সারা দেশে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের ঢল, গ্রেপ্তার অভিযানে কড়া নজরে পুলিশ

আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল বের করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। এসব মিছিলে ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

মিছিলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতাও বেড়ে গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১ মার্চ পর্যন্ত ২২ দিনে সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সাড়ে ১২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার অভিযান একটু থেমে ছিল। গত রবিবার রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিলটি উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরা বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এই মিছিল করার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এর পরই আওয়ামী লীগের মিছিলের প্রতি পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মিছিল কন্ট্রোল করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে মিছিল না হতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা কন্ট্রোল না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত এক সপ্তাহে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৬০১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০৮৭ জনকে এবং বাকি ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যান্য মামলায়। গ্রেপ্তার অভিযানে দেশীয় তৈরি দুইটি এলজি, দুইটি চাকু এবং এক রাউন্ড রাবার কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার আগেই সারা দেশে পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান নামে। গত ১৬ এপ্রিল দিনাজপুর থেকে গাইবান্ধা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারওয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর মহাখালী থেকে রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। এর পর দিন ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আরিফ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াত, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সহ-সভাপতি বাপ্পি রায়হান, ঢাকা মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ভাতিজা এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন ফাহিমসহ ছাত্রলীগের ছয় জন নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অপর গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—৫৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শেখ মো. সোহেল, বাড্ডা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা, বাড্ডা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়ামিন, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার খান ও পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নাইম। এর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে সারা দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, লালবাগসহ অর্ধশত স্পটে মিছিল করে।

গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মিছিলকারীদের এদেরকে তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. তালেবুর রহমান জানান, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন মিছিল করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ছাত্রলীগ যেহেতু নিষিদ্ধ সংগঠন, তাই ছাত্রলীগ মিছিল করলেই গ্রেপ্তার করা হবে।

আওয়ামী লীগ মিছিল করলে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাক্ট অনুযায়ী কেউ সমাবেশ করতে চাইলে পূর্বানুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দিলে বা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মিছিল করলে ডিএমপি অ্যাক্টে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

চট্টগ্রামে ১৮ দিনে গ্রেপ্তার ৩০০: চট্টগ্রামে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল ৩১ জন, ১২ এপ্রিল ৪৫ জন, ১১ এপ্রিল ২৮ জন, ৮ এপ্রিল ২৯ জন, ৭ এপ্রিল ৩৯ জন, ৬ এপ্রিল ৪৪ জন, ৩ এপ্রিল ৩৯ জন, ২ এপ্রিল ২৯ জন ও ১ এপ্রিল ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার: কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা রহিম উদ্দীন খান ও তার ছেলে রবিন খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার শোমসপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

রাজশাহীতে দুই আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার : শনিবার রাজশাহী মহানগর পুলিশ রাজশাহীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম কমল ও রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকশেদউল আলম সুমনকে গ্রেপ্তার করে।

মৌলভীবাজারে গ্রেপ্তার: শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে জুড়ী উপজেলা থেকে যুবলীগ নেতা মাসুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে জুড়ী থানা পুলিশ। মাসুক জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে। ঝিনাইদহে গত ১৫ দিনে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল, যশোর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও খুলনায় বিভিন্ন সময়ে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। এসব ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

খুলনা নগরে ঝটিকা মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, খুলনা জেলা শাখা’র ব্যানারে তারা এই মিছিল করেন।

ওই ভিডিও এবং ছবি থেকে দেখা যায়, একদল লোক ব্যানার নিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। ব্যানারে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি আছে। এ সময় ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘শেখ হাসিনা ফিরবে আবার বীরের বেশে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।

ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ছিল মিছিলে পরিচিত কোনো মুখ থাকবে না। এ কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অপরিচিত নেতা–কর্মীদের দিয়ে মিছিল করানো হয়েছে।’

জিরো পয়েন্ট এলাকাটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) হরিণটানা থানার মধ্যে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল বাশার বলেন, হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমেই ঝটিকা মিছিল করে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। সকালের দিকে হওয়ায় সে সময় রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা ছিল। পুলিশ মিছিলকারীদের আটক করতে তৎপর আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়