শিরোনাম
◈ নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ কোরআন-হাদিসের লঙ্ঘন, বললেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ◈ রামপালের চেয়ে ৬০% কম: মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮.৪৫ টাকা ◈ সোনার খোঁজে নেপাল যা‌চ্ছে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দল ◈ সংসদীয় সংস্কারে রাষ্ট্রপতির স্বাধীন সিদ্ধান্তের পক্ষে বিএনপি, ২২ এপ্রিল তৃতীয় দফা বৈঠক ◈ ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ে সোচ্চার বিএনপি, সর্বদলীয় জনমত গঠনে জোর, চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ◈ সিলেটে বাংলা‌দেশ অলআউট ১৯১ রা‌নে, দিন শে‌ষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ বিনা উই‌কে‌টে ৬৭ ◈ সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ চায় বিএনপি: চারটি বিষয়ে ব্যতিক্রম প্রস্তাব ◈ যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৫ ◈ রিজার্ভ বেড়ে পৌনে ২৭ বিলিয়ন ডলার ◈ বেড়ে দেড় লাখ টাকার মাইলফলকে পৌঁছাল স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:২৬ সকাল
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বান্দরবানের ১০ কিমি ভেতরে আরাকান আর্মির ইউনিফর্মে জলকেলি উৎসব

নয়া দিগন্ত:রেমাক্রি জলপ্রপাতে স্থানীয় পাহাড়িদের নিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা গত ১৬-১৭ এপ্রিল এই উৎসবে অংশ নেয়।

বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমা লঙ্ঘন করে বান্দরবানে থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায় অনুপ্রবেশ করে সামরিক পোশাকে জলকেলি উৎসব করেছে আরাকান আর্মি। বান্দরবান সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে রেমাক্রি জলপ্রপাতে স্থানীয় পাহাড়িদের নিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা গত ১৬-১৭ এপ্রিল এই উৎসবে অংশ নেয়। এই উৎসবের সচিত্র ভিডিও আরাকান আর্মি তাদের সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে।

বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি মুখ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্রবিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউএলএর অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আরাকা ওয়াটার ফেস্টিবল নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয়রা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০ কিমি. অভ্যন্তরে এই ধরনের আয়োজনকে সরাসরি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

উৎসবে আরাকান আর্মির ইউনিফর্মধারী ও অস্ত্রধারী সদস্যরা প্রকাশ্যে অংশ নেয় এবং মঞ্চে পারফর্ম করে। মঞ্চ ও আশপাশজুড়ে ছিল রাখাইনের ইউএলএ ও আরাকান আর্মির পতাকা ও প্রতীক। বাংলাদেশী মারমা ও অন্যান্য স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অংশবিশেষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি এবং বক্তব্য ছিল আয়োজনের অংশ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নিষ্ক্রীয় দেখা গেছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে অবশ্য জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য সেখানে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল চলা এই ‘জলকেলি’ অনুষ্ঠানে মূলত সঙ্গীত পরিবেশনা ও নৃত্যকেই প্রধান আকর্ষণ বানানো হয় যাতে আরাকান আর্মির সক্রিয় সদস্যরা বিশেষ করে নারীদের দ্বারা সঙ্গীত পরিবেশন করানো হয়। সেইসাথে ছেলে সদস্যদেরও সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা যায়। একক সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি সম্মিলিত সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন হতে দেখা যায় সেখানে। অনুষ্ঠানটি দিন ও রাত উভয় সময়েই চলতে থাকে। চলমান সঙ্গীত ও নিত্য পরিবেশনাকালে আঞ্চলিক নেতাদের গায়ক-গায়িকাদের সাথে চিয়ার্স আপ করা ও টাকা দিতে দেখা যায়; সেইসাথে আরাকান আর্মির অফিসারদের অস্ত্রসহ নাচতে ও অফিসারদের একজনকে বক্তৃতা দিতেও দেখা যায়।

আরাকান আর্মি প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে বার্মিজ ভাষায় দেয়া একাধিক বক্তব্যে তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক অভিপ্রায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
তাদের বক্তব্যে আয়োজকগণ দাবি করেন যে, “এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব আমরা পার্বত্য জেলায় সফলভাবে আয়োজন করতে পেরেছি শুধু আরাকান আর্মির সহযোগিতার কারণে। আমরা তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”

এতে বক্তারা বলেন, “অনেক দিন ধরে আমরা এই ধরনের একটি সম্মিলিত মিলনমেলা আয়োজনের চেষ্টা করে আসছিলাম, কিন্তু নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে, বার্মিজ সাল ১৩৪৬-এ আরাকান আর্মির সহায়তায় আমরা স্বাধীনভাবে এই উৎসব আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন।”

তারা উল্লেখ করেন, “যেভাবে তারা (আরাকান আর্মি) আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাদেরও উচিত তাদের পাশে থাকা দাঁড়ানো এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। অতীতে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ নানা বাধা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল, কিন্তু আজ আরাকান আর্মির সহযোগিতায় আমরা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারছি। এটি আমাদের আত্মপরিচয় ও সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রতীক।”

আগত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তারা বলেন, “দূর-দূরান্ত থেকে যারা এসেছেন, তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল।” বক্তব্যের শেষাংশে রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। অতীতে আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম, কিন্তু এখন আমাদের প্রয়োজন সম্পূর্ণ ঐক্য। আসুন সব বিভেদ ভুলে একত্র হই এবং সম্মিলিতভাবে সামনে এগিয়ে যাই।”

স্থানীয়দের ধারণা, এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে দু’টি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

প্রথমত. আরাকান আর্মি এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একাংশের কাছে তথাকথিত মুক্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে তারা একটি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে একীভূত হওয়ার পথে অগ্রসর হতে চাইছে। এ বক্তব্য নিছক কৌশলগত নয়, এটি আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার এক বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ সংহতির জন্য গভীর হুমকি।

ভিডিওতে দেখা যায়, উৎসবে থাকা একজনের পরনে থাকা একটি টি-শার্টে বাংলায় ‘মেম্বার পরিবার’ লেখা রয়েছে। যা থেকে বোঝা যায় স্থানীয় রাজনীতিবিদরা তাদের সমর্থকদের সংগঠিতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্দিষ্ট পোশাকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিয়েছিলেন।

ঘটনার প্রকৃতি অনুযায়ী এটি কোনো বিচ্ছিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয় বরং এটিকে একটি পরিকল্পিত, প্রতীকী এবং বাস্তব কৌশলগত ‘সার্বভৌম মহড়া’ হিসেবে দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আরাকান আর্মির এই উৎসব মূলত দু’টি বার্তা বহন করে। প্রথমত, পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার ইঙ্গিত এবং দ্বিতীয়ত. স্থানীয় পাহাড়িদের নিজেদের রাজনৈতিক ও সামরিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করা।

পার্বত্যাঞ্চলের ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ভেতরে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক তিনটি স্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে, যা স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং একটি স্বাধীন দেশের জন্য নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র, পতাকা ও পোশাক পরিহিত অবস্থায় প্রকাশ্যে মঞ্চে ওঠে এবং স্থানীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা শুধু কৌশলগত বিপর্যয় নয় বরং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রকাশ্য অবমাননা এবং আরাকান আর্মির সাথে স্থানীয় প্রশাসনের (রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুই শই থুই মারমা ও তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মং প্রু অং) প্রকাশ্যে আঁতাত প্রকাশ করে।

ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, বিজিবির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রশ্ন উঠেছে এই নিষ্কৃয়তা কি বাস্তবিক সামর্থ্যহীনতা নাকি নীতিগত নির্দেশনার অভাব? আরাকান আর্মির প্রত্যক্ষ মদদে ঘটা অনুষ্ঠানে বিজিবিকে অসহায় দর্শকের মতো দেখা গেছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, কোনো রুলস অব এনগেজমেন্ট বা প্রতিরোধমূলক আদেশ না থাকা মানেই কি একটি বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সামনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দর্শক বানিয়ে রাখার বৈধতা তৈরি হয়? বিজিবির এই ভূমিকাকে যদি প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কারণে যুক্তিসঙ্গত ধরা হয়, তাহলে তা অবশ্যই দেশের নিরাপত্তা কাঠামোর প্রতি প্রশ্ন সৃষ্টি হবে বলে মত ব্যক্ত করেন এই পর্যবেক্ষক।

অন্য একজন পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেন, আয়োজনটি ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আরাকান আর্মির দখলদার মানসিকতার প্রকাশ্য অনুশীলন। শুধু সাংস্কৃতিক নয় বরং এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে নিজেদের একটি ভূখণ্ডগত, সামাজিক ও সামরিক মেরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়কে নানাভাবে প্রভাবিত করে তাদের অংশগ্রহণ, নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি এবং ভেতরে ভেতরে তাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের বাস্তবতাই স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এটি দেখে মনে হতে পারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অপ্রকাশ্য কিন্তু সক্রিয় সশস্ত্র জোট গড়ে উঠেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে আরাকান আর্মি।

এই পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেন, ভিডিওতে স্পষ্ট হয় যে, ২০২৫ সালের রেমাক্রি উৎসব প্রতীকী নয়, সরাসরি সামরিক ও রাজনৈতিক দখল ঘোষণার মঞ্চে পরিণত হয়, যেখানে মারমা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ আরাকান আর্মির প্রতি শুধু আনুগত্যই নয় বরং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতকতার প্রকাশ।
তাদের আচরণে স্পষ্ট, দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে গোপনে পরিচালিত হয়েছে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও সাংগঠনিক সংহতির প্রক্রিয়া। এখন আর সন্দেহ নেই পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি সশস্ত্র ছায়া-রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ জোট স্রেফ সাংস্কৃতিক সংযোগ নয়, বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরেকটি বিদ্রোহের ঘাঁটি তৈরির অপচেষ্টা। এটা স্পষ্ট যে, যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে আমরা দেখতে পাব স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সশস্ত্র সঙ্ঘাত। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও প্রশাসনিক শৈথিল্যের জন্য মারাত্মক মূল্য দিতে চলেছে এবং তার শুরুটা আমরা রেমাক্রিতে দেখে ফেলেছি।

রোহিঙ্গারা তাদের প্রতি গণহত্যা ও নিপীড়নের জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, যারা ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস গণহত্যার জন্য দায়ী যারা রোহিঙ্গাদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করেছে, শিশুদের গুলি করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে এবং একটি জাতিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে তারা আজ বাংলাদেশে ঢুকে অস্ত্র হাতে উৎসব করে, পতাকা উড়ায় আর দেশের প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে থাকে। এটা শুধু দুর্বলতা নয়, এটা নৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির উৎসবে অংশগ্রহণ করার বিষয়টিকে শুধু সীমান্তের সমস্যা নয় এটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, মুসলিম বিশ্বে ন্যায়বিচারের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আদর্শের বিরুদ্ধে এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নে অবস্থিত রেমাক্রি মুখ অঞ্চলটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থান করছে। এটি কোনো বিতর্কিত অঞ্চল নয় বরং স্বীকৃত ও সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ড। এই এলাকা কৌশলগতভাবে উচ্চ অগ্রাধিকারের, যেখানে এক দিকে রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনা, অন্য দিকে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি ও নেটওয়ার্ক। এমন স্পর্শকাতর ভৌগোলিক অবস্থানে আরাকান আর্মির সরাসরি কার্যক্রম শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও কর্তৃত্বের ওপর একটি স্পষ্ট ও সুপরিকল্পিত চ্যালেঞ্জ।

রেমাক্রি মুখ অঞ্চলের এই ঘটনার বিষয়ে বিজিবির গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াসির জাহান হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বান্দরবানের দুর্গম এলাকা রেমক্রিতে বৈশাবী উৎসবে আমাদের কাছে আগেই তথ্য ছিল আরাকান আর্মির সদস্যরা অংশগ্রহণ করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বর্ডারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াই। বৈশাবী অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার সাথে বিজিবির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত হন। আরাকান আর্মির যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানে একজন নারী পায়ে সেন্ডেল পরে এবং প্যান্টে যে ছাপা ছবিতে দেখা গেছে সেটি আরাকান আর্মির পোশাক নয়। অনুষ্ঠানটি মূলত স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ আয়োজন করে থাকে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, আরাকানরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। তবুও আমাদের গোয়েন্দারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ কাওছার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আরাকানরা বান্দরবানে বৈশাবী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে এমন একটি তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্য তা উদঘাটন করতে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। জায়গাটি দুর্গম, তাই তথ্য উদঘাটনে একটু সময় লাগবে।

এ ছাড়া সেখানে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, রেমাক্রি এলাকায় আগে থেকেই আরাকানদের পদচারণা রয়েছে। মিয়ানমারে যুদ্ধচলাকালীন আহত আরাকানরা সেখানে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসছে। তাদের পদচারণা সেখানে আগে থেকেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়