এল আর ব্দল: প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে - এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্যে পাল্টা অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, প্রশাসনের সাথে বৈষম্যবিরোধীদেরই সখ্যতা সবচেয়ে বেশি।
বিএনপি নেতারা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে 'পলিটিক্যাল রেটরিক' বা 'রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর' বলেও বর্ণনা করেছেন।
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি'র (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক জায়গায় প্রশাসন এখন বিএনপি'র পক্ষে কাজ করছে। তাই, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সূত্র, বিবিসি বাংলা
গত বুধবার ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুজন উপ-সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে ওই বক্তব্য দেন মি.ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম নিজেও কিছুদিন আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্বে এসেছেন। এখন তিনি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
এছাড়া এমন এক প্রেক্ষাপটে এনসিপি'র এই নেতা এ ধরনের বক্তব্য দিলেন, যখন নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দৃশ্যমান হচ্ছে।
বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে বিপরীত অবস্থানের বিষয়টি বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে দল দুটির নেতাদের বক্তব্যে।
এখন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম প্রশাসনকে বিএনপির পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুললেন।
তার এ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে যেমন আলোচনার সৃষ্টি করেছে, প্রতিক্রিয়া হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলে তারা মনে করেন। তিনি বলেছেন, "প্রশাসনের সাথে বৈষম্যবিরোধীদের সখ্যতা সবচেয়ে বেশি।
-- নাহিদের বক্তব্যকে এনসিপি কী সমর্থন করছে--
বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করে আসছিল। এখন দলটি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছে।
এর বিপরীত অবস্থান রয়েছে এনসিপি। তারা মৌলিক সংস্কার শেষ করার পর নির্বাচনের কথা বলে আসছে।
এছাড়া এনসিপির নেতারা মনে করেন, গত বছরের পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থকরা জায়গা করে নিয়েছে। ফলে প্রশাসন ও পুলিশসহ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্বাচনে বিএনপি এক ধরনের সহযোগিতা পেতে পারে।
এ ধরনের চিন্তা থেকে নাহিদইসলাম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে এনসিপির অবস্থানেরই প্রতিফলন হয়েছে বলে দলটির নেতারা মনে করেন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এ ব্যাপারে বিবিসিকে বলেন, পরবর্তীতে ক্ষমতায় কে আসবে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র সে অনুযায়ী কাজ করে। "এরা (আমলারা) সবসময় একটি আশ্রয়ে থাকতে চায়।"
আওয়ামী লীগ আমলাদেরকে এতদিন ধরে আশ্রয় দিয়েছে। তাই আমলারা আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছে বলেও উল্লেখ করেন এনসিপির ওই নেতা।
তিনি আরও বলেন, বড় দল হিসাবে পরবর্তীতে বিএনপি'র-ই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে। তাই, "প্রশাসন দেখলো যে সরকার দ্রুত নির্বাচন দিলে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি। সেকারণে বিএনপি'র সাথে তারা এক ধরনের দর কষাকষির মাঝে গেছে।"
"প্রশাসন মানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের বিএনপি'র প্রতি নমনীয় আচরণ শুরু হয়েছে" বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমন বক্তব্যের সমর্থনে উদাহরণ দিতে গিয়ে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, "ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন "সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া আইন অনুযায়ী এগোচ্ছে। এটি হচ্ছে, কারণ বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম "বিএনপি সুপারিশ করেছে।"
এনসিপির এই নেতার মতে, নির্বাচন কমিশন বিএনপি ব্যতীত বাকিদের প্রতি "বিমাতাসুলভ আচরণ" করছে।
পুলিশ প্রশাসনও থানা পর্যায়ে বিএনপি'র পক্ষে কাজ করছে বলে আরিফুল ইসলাম আদীবও উল্লেখ করেন।
এনসিপির এই নেতার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, নাহিদ ইসলাম তাদের দলের অবস্থানকেই সামনে এনেছেন।
গত বুধবার নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, কোনও ধরনের পরিবর্তন বা মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। পাশাপাশি, সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, বিবেচনাধীন থাকবে।
ইসলামের ভাষ্য, "প্রশাসন দেখছি বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির পক্ষ অবলম্বন করছে। মাঠ পর্যায়ে যে চাঁদাবাজি চলছে, সেখানেও প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।"
"আমরা বলেছি এ ধরনের প্রশাসন থাকলে এর অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন, পুলিশ, আমলাতন্ত্র আমাদের নিশ্চিত করতে হবে," যোগ করে তিনি আরও বলেন, "আমরা দেখছি প্রশাসন নিরপেক্ষ না।
-- প্রশাসনের সাথে বৈষম্যবিরোধীদেরই সখ্যতা বেশি--
বিএনপির প্রতি প্রশাসনের পাক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ তুলেছেন নাহিদ ইসলাম, সেটাকে 'পলিটিক্যাল রেটরিক' বা 'রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর' হিসেবে বর্ণনা করছে বিএনপি।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবিসি বাংলাকে বলেন, নাহিদ ইসলাম "সঠিক কথা বলেননি।" যা বলেছেন, তা মানুষকে "বিভ্রান্ত" করার জন্য।
বিএনপির এই নেতা এনসিপির সঙ্গেই প্রশাসনের সখ্যতার পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কোনও দেশে যারা সরকারে থাকে, প্রশাসন বা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হয় তাদের নামে। যেমন, ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি ইউনূস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
"সেক্ষেত্রে আমরা যতটুকু জানি, বাংলাদেশের প্রশাসনের সাথে ছাত্রদের তথা বৈষম্যবিরোধীদের সখ্যতা সবচেয়ে বেশি। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। দেখাশুনা করে" বলেন মি. রিজভী। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন করেন, "এখন তাহলে এটা বিএনপি'র প্রশাসন হলো কী করে?
রিজভীর কথার সাথে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। তিনিও নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে "পলিটিক্যাল রেটরিক" বলে মনে করেন।
আবু আলম শহীদ খান বলেন, "উনি (নাহিদ ইসলাম) ওনার রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেই পারেন। কারণ উনি একটা দল করেন। ওনার যা মনে হবে, সেরকম কথা উনি বলতে পারেন। এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য নাই"। তিনিএ-ও বলেন, "দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেএখনো দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি আছেন। দল করার কারণে নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করে চলে গেছেন। তারা (এনসিপি) সরকারে অংশ নিয়েছে, সরকারের ভাগ নিয়েছে।"
"এখন তারা তো এই কথা বলতে পারেন না। বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ,বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া, ব্যবস্থা নেওয়া– এই সরকার এগুলোর সবই করছে। সুতরাং, এটিকে বিএনপি'র প্রশাসন বলা ঠিক হবে না। যদি বিএনপি প্রভাবিত প্রশাসন হয়ে থাকে, তাহলে দায় এই সরকারের এবং ছাত্র প্রতিনিধিদেরও। এই ধরনের কথা বললে সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা চলে আসে" বলেও মন্তব্য করেন আবু আলম শহীদ খান।
তিনি মনে করেন, নির্বাচনকে "বিতর্কিত করা, প্রলম্বিত করা বা নির্বাচন নিয়ে অন্যরকম চিন্তাভাবনা থেকে" এখন এসব রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা হতে পারে।
তবে এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, "সরকারে অনেকগুলো স্তর থাকে। মন্ত্রী, আমলা, অন্যরা... প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করে। তাই উপদেষ্টারা চাইলেই সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারেন না।"
এদিকে, নাহিদ ইসলামের অভিযোগের ব্যাপারে সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। কিন্তু তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।