যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গত রোববার সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সাক্ষাতে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে সে কথা জানালেন তিনি।
রাজনৈতিক বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি যদি এক হয়ে চা খায় তখন সেখানে রাজনীতির আলাপ শুরু করে দেয়। আমাদের মধ্যেও সেরকম রাজনৈতিক আলাপ হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করিনি। যেমন - কখন নির্বাচন হবে, বিচারকার্য কী হবে ইত্যাদি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা করিনি। ’
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে জামায়াত আমিরের ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর এতটুকু অনুভব করতে পেরেছি যে, তিনি মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ আছেন। দীর্ঘদিন পর তিনি আপনজনদের পাশে পেয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে থাকতে পারছেন। তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন হয়ত বা আগামী মাসের কোনো এক তারিখে দেশে আসতে পারেন। এটা আমরা অনুমান করছি।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দিতে পারেননি তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘তারেক রহমানের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে আমরাও কোনো আলোচনা করিনি এবং তিনিও (তারেক রহমান) আলোচনা তোলেননি। তিনি তার দেশে আসবেন এতে অসুবিধা কি! এ দেশ যেমন আমার-আপনার, তেমন ওনারও। ’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট আমলে সকল রাজনৈতিক দলই ছিল নির্যাতিত। পাশাপাশি সমস্ত জনগণও ছিল নির্যাতিত। আর নির্যাতিত দল হিসেবে প্রথম আঘাতটা আমাদের ওপরই আসে।
তিনি বলেন, আমরা যেমন আমাদের অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি বিএনপি ও তাদের অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছে। আমরা যেমন আয়নাঘরের শিকার হয়েছি; বিএনপিও তেমন আয়নাঘরের শিকার হয়েছে। আমরা যেমন মামলা খেয়েছি, জেলে গিয়েছি; তারাও জেলে গিয়েছেন লাখে লাখে।
এ জামায়াত নেতা আরও বলেন, ব্যক্তি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াও জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি একইসঙ্গে মজলুম ও অসুস্থ। আমরা লন্ডনে গিয়ে কোনো কাজ শুরু করার আগেই তার সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা কৃতজ্ঞ তিনি আমাদের সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওনাকে দেখা। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছিলেন।
রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ এখন পর্যন্ত আছে কিনা জানতে চাইলে ডা শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে বিরোধের কথা বলা হচ্ছে এটা কোনো বিষয়ই নয়। এক্ষেত্রে আমেরিকার নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেখানে প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা হয়েছে নির্বাচনের আগে। কিন্তু নির্বাচন যখনই শেষ দুইজন হাত মিলিয়েছেন। একজন চলে গেছেন সরকারের আরেকজন বসে গেছেন বিরোধী দলে।
তিনি বলেন, আমরা চাই রাজনীতিতে মতো পার্থক্য থাকুক। আর এটা না থাকলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবে। আর বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন মতপার্থক্যের। আর এটা যেন মতবিরোধে না যায়, সেটা পার্থক্য পর্যন্ত থাকুক। পাশাপাশি ‘রাজনীতি করতেই হবে’ যেমন ভাষা হতে পারে না ‘আর করতে দেব না’ও কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। উৎস: বাংলানিউজ ও দেশ টিভি।