শিরোনাম
◈ ২ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ◈ থাইল্যান্ড ভ্রমণে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ডিজিটাল অ্যারাইভাল কার্ড ◈ বিচার বিভাগের জন্য দ্রুতই পৃথক সচিবালয়: প্রধান বিচারপতি ◈ জিত‌লো অ্যাস্টন ভিলা, সেমিফাইনালে গে‌লে্া পিএসজি ◈ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫ জেলায় আম পৌঁছে দেবে ডাক বিভাগের ‘স্পিডপোস্ট’ ◈ কারিগরি শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিতে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ ◈ প্রধান উপদেষ্টার  সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপি, ইস্যু নির্বাচনী রোডম্যাপ ◈ পহেলা বৈশাখের মোটিফ বানানো চিত্রশিল্পীর বাড়িতে দুর্বৃত্তদের আগুন, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে প্রশাসন ◈ কৌশলে রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি এনআইডি ◈ ডেই‌লি সান‌কে সা‌কিব; আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের হয়ে খেলে দেশের মাটিতেই অবসর নে‌বো 

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:২৮ সকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন, মূল টার্গেট এখন পুলিশ!

সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট। পুলিশের মনোবলে ধস নামার সুযোগে বাড়ছে নানা অপকর্ম। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে তথ্য— পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন। তাদের মূল টার্গেট এখন পুলিশ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করা পুলিশবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। সূত্র: যুগান্তর 

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, হাসিনার দোসরদের মূল লক্ষ্য পুলিশকে সঠিকভাবে কাজ করতে না দেওয়া। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গুর হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে গত সাত মাসে সারা দেশে পুলিশের ওপর পাঁচ শতাধিক হামলা হয়েছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাত মাসে পুলিশের ওপর সর্বোচ্চ হামলার ঘটনা ঘটেছে মার্চে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্যাসিস্টের দোসররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারে তৎপর থাকা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যাসহ পাঁচ মামলার আসামি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা। ১২ মার্চ তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে গোলাম মোস্তফার সহযোগীরা। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সহিদুল ওসমান মাসুম মামলা করেছেন। তবে হামলাকারী কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

২৩ মার্চ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় স্বজনগ্রাম পুলিশ তদন্তকেন্দ্র এলাকায় পুলিশকে মারধর করে হাতকড়াসহ আশিক মিয়া নামের এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় লাখাই থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও আশিক ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে একইভাবে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব হামলার ঘটনায় আহত হচ্ছেন অনেক পুলিশ সদস্য। পুলিশকে হামলার মূল লক্ষ্য তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, প্রায় দিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলার শিকার হচ্ছে পুলিশ। গত ৭ মাসে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মোট ৩২২টি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ হামলা হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি)। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সাত মাসে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৬৩টি মামলা হয়েছে।

সূত্র বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪টি, নভেম্বররে ৪৯টি ও ডিসেম্বরে ৪৪টি মামলা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি এবং মার্চে ৯৬টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ সব থেকে বেশি হামলার শিকার হয়েছে মার্চে। মার্চে ডিএমপিতেই ২৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে থেকে দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাও কূটকৌশলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। তাদের মূল লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটানো। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সব বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ পুলিশে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে ‘মব’ আতঙ্ক। আসামি ধরে থানায় আনার পর থানাতেও হামলার ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি মব আতঙ্কে আছেন রাজধানীতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। তা না হলে এ ধরনের হামলা চলতেই থাকবে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের কাজটাই অপ্রীতিকর। এসব ঘটনা (পুলিশের ওপর হামলা) ঘটতেই পারে। অপরাধী সুযোগ নেবেই। তবে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। স্ট্রং অ্যাকশন হলে এগুলো কমে আসবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ একটি অস্বাভাবিক সময় পার করছে। তাদের ওপর দিয়ে সাত-আট মাসে যে ধকল গেছে, তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, এখনো ট্রমায় আছে অনেকে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের ওপর হামলাকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে। আর যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে কোনোভাবেই আমরা ছাড় দেব না।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের অবস্থানে না ফেরার অন্যতম কারণ পুলিশের ওপর হামলা। আবার এসব অপকর্মে জড়িতদের বেশির ভাগই পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে পুলিশের অনেক সদস্য প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকছেন। বিশেষ করে অভিযানে গিয়ে তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়