শিরোনাম
◈ আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ নেবো বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে, কমবে না: প্রেস সচিব ◈ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ◈ বিদেশ ভ্রমণে সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা ◈ পহেলা বৈশাখে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা মাউশির ◈ ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানালো বাংলাদেশ ◈ ঐকমত্য কমিশনের সাথে কাল আলোচনায় বসবে এবি পার্টি ◈ ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ   ◈ রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি কোমল পানীয় রাখার অভিযোগে ভাঙচুর ◈ পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ সেই পুলিশ কনস্টেবল পাচ্ছেন ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’

প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪৫ দুপুর
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে অংশীদার খুঁজছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা

বণিক বার্তা: দেশের শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলোর একটি নারায়ণগঞ্জ। গত দেড় দশকে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ওসমান পরিবারের হাতে। এ পরিবারের প্রভাবশালী দুই সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। গার্মেন্টস, শিপিং, পরিবহন, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ওসমান পরিবারের প্রভাবশালীরা। এখন বিদেশে বসে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অংশীদার খুঁজছেন তারা।

আগে থেকেই শামীম ওসমানসহ এ পরিবারের সদস্যদের বেনামি অংশীদারত্ব ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিল্প গ্রুপটিতে ওসমান পরিবারের অংশীদারত্ব আরো বেড়েছে। আর নতুন করে ওসমান পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য। আবাসন ব্যবসায়ী ওই বিএনপি নেতার গুলশানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন শামীম ওসমান। এখন ওসমান পরিবারের বাড়ি, গাড়িসহ সম্পত্তির দেখভাল করছেন তিনি।

ওসমান পরিবার ব্যবসার অংশীদার খুঁজে পেলেও এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের আরেক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম দস্তগীর গাজী। শেখ হাসিনা সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এ মন্ত্রী এখন কারাগারে। গাজী টায়ারসহ তার বেশ কয়েকটি কারখানা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েই পুড়িয়ে দেয়া হয়। যেসব কারখানা অক্ষত ছিল, সেগুলোও গত আট মাস ধরে বন্ধ।

গোলাম দস্তগীরের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বন্ধ কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সচল করতে তারা অংশীদার খুঁজছেন। তবে স্থানীয় বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে তীব্র বিবাদ থাকায় অংশীদার নির্ধারণে বেগ পেতে হচ্ছে। দুটি পক্ষের সঙ্গেই তাদের আলোচনা চলছে। সমঝোতা হলে কারখানাগুলো দ্রুত চালু করা হবে।

ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৮ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন শামীম। এসকিউ গ্রুপের এ কর্ণধার চতুর্থ প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। গত দেড় দশক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ প্রভাবশালীদের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এ ব্যবসায়ী এখন অংশীদার খুঁজছেন। এরই মধ্যে অংশীদার হিসেবে বিএনপিপন্থী প্রভাবশালী একজন ব্যবসায়ীকে পেয়েছেনও। এসবিএসি ব্যাংকে থাকা নিজের তিনটি পরিচালক পদের একটির শেয়ার ওই ব্যবসায়ীর নামে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

ব্যবসার অংশীদার খুঁজছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও। শেখ হাসিনার সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগেই ৫ আগস্ট ভোরে তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যান। সেখান থেকে থাইল্যান্ড হয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। তার মালিকানাধীন রেনেসাঁ গ্রুপের অধীনে বস্ত্র, তৈরি পোশাক, আবাসন, হাসপাতালসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে। দেশের বাইরে রাশিয়ায়ও শাহরিয়ারের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে।

রেনেসাঁ গ্রুপের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, গ্রুপের কোনো ব্যবসাই বর্তমানে ভালো অবস্থায় নেই। ব্যাংকের সব ঋণই খেলাপি হওয়ার পথে। শাহরিয়ার আলম বিদেশে থেকে ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এখানে তার বাবা শামসুদ্দিন ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। বিএনপি রাজশাহী অঞ্চলের একাধিক নেতার সঙ্গে ব্যবসার অংশীদার হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে এ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িকভাবে প্রভাবশালী এক ডজনের বেশি আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে বণিক বার্তা। তারা বলেছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগের ব্যবসা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। সরকারি প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়ে সেগুলো অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিকাদারি ব্যবসা সম্ভব নয়। তবে যেসব ব্যবসায়ী জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত তাদের শিল্প-কারখানাও ঠিকমতো চলছে না। সালমান এফ রহমানের মতো বড় ব্যবসায়ীর কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অংশীদার ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে থাকা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। অন্যরা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আওয়ামী লীগের এসব নেতা অনেক তথ্য দিলেও নিজেদের নাম উদ্ধৃত করে প্রায় কেউই বক্তব্য দিতে চাননি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও সরকারসহ বিএনপি-জামায়াতের রোষানলে পড়ছেন। এ কারণে অনেকেই নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। নতুন করে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশও দেশে নেই।’

ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ নেতারা অংশীদার খুঁজছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালের শুরুতে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে গত দেড় দশকের বেশি সময়জুড়ে রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যও আবর্তিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে ঘিরে। ব্যবসার ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পাশাপাশি পেশাদার ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের দলে টেনে নেন শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও সম্পদশালী ব্যবসায়ীদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল বিরোধীদের বর্জনের মুখে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ২৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জনই ছিলেন ব্যবসায়ী, যা দলটির মোট প্রার্থীর ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৬ জনের আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১০০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পদ ছিল ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৮ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা আবু জাফর মো. শফিউদ্দিনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৭২ কোটি টাকারও বেশি। কুমিল্লার আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩০৫ কোটি টাকা। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান।

দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেয়া আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের সম্পদ দেখানো হয়েছিল ৩৯৪ কোটি টাকা। বেক্সিমকো গ্রুপের এ ভাইস চেয়ারম্যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতিও। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের আগস্টে সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরই মধ্যে ঋণের ভারে জর্জরিত বেক্সিমকো গ্রুপের এক ডজনের বেশি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে।

শতকোটি টাকার বেশি সম্পদশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও। এছাড়া ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা মো. খসরু চৌধুরীর সম্পদও শতকোটি টাকার বেশি। তিনি নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক। হলফনামায় শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছিলেন ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচিত নিজাম উদ্দিন হাজারীও। পলাতক আওয়ামী নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের পলাতক ধনকুবেরদের মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদও রয়েছেন। তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান। ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে এ আওয়ামী লীগ নেতা ঘোষণা দেন বিদেশে তার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ আছে। যদিও আয়কর রিটার্নে তিনি বিদেশে থাকা কোনো সম্পদের উল্লেখ করেননি। গত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার আত্মীয়-স্বজনের মালিকানায় অন্তত ২৯৫ মিলিয়ন ডলারের ৪৮২টি সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩১৫টি, দুবাইয়ে ১৪২, নিউইয়র্কে ১৬, ফ্লোরিডায় ছয় এবং নিউজার্সিতে তিনটি সম্পত্তি আছে।

পলাতক এ আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি দেশে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আরমিট গ্রুপের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচানোর জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদও অংশীদার খুঁজছেন বলে জানা গেছে। আরমিট গ্রুপের কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ কামরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে আমরা ব্যবসা দেখাশোনা করছি। স্যার (সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ) মাঝে মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হয়ে কথা বলেন।’

ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও। নিজে সরাসরি সামনে না এলেও স্ত্রী নুরান ফাতেমা ও দুই ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদের মাধ্যমে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স পান তার স্ত্রী। এছাড়া একাধিক ফিশিং ট্রলারেরও মালিকানা রয়েছে পরিবারটির। সম্প্রতি হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে থাকা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ২০০ একরের বেশি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সরকারের সঙ্গে থাকা এ পরিবারের ব্যবসাগুলো চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে পলাতক এ আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থানীয় বিএনপির নেতারা সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি রফতানিমুখী পোশাক শিল্প, ব্যাংকসহ বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পোশাক খাতে ফেবিয়ান গ্রুপ নামে কলকারখানা রয়েছে তার। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি পলাতক থাকলেও তার কলকারখানা চালু রয়েছে। সন্তানরা ব্যবসা পরিচালনা করলেও তিনি এখন অংশীদার খুঁজছেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজছেন বহুল আলোচিত পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফও। তার মালিকানাধীন কোয়েস্ট গ্রুপের অধীনে ঠিকাদারি, ড্রেজিং, ট্রাভেল এজেন্সি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, রিসোর্ট, আবাসন, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগেই দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জনশক্তি রফতানি, আবাসন, শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তার। নিজের ব্যবসা ধরে রাখতে তিনিও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজে বেড়ানো পলাতক নেতাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে বণিক বার্তা। তবে তাদের বেশির ভাগের সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দেশে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও তারা নিজেদের নাম উদ্ধৃত করে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগকারী নেতারা বিপদে আছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ’আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট যেসব বিনিয়োগকারী বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন এখন তারা মহাসংকটে পড়েছেন। লভ্যাংশ তো দূরে থাক, মূলধনই থাকছে না। ব্যবসা পরিচালনা না করতে পারলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে।’

আমিনুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পলাতক ব্যবসায়ী মন্ত্রীদের একজন নসরুল হামিদ বিপু। দীর্ঘদিন তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তার। হামিদ গ্রুপের এ কর্ণধারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচারের অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে নসরুল হামিদ বিপু হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। ওই কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে বিপু তার নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত। এ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নসরুল হামিদ বিপুর আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের হাতে।

পলাতক অবস্থা থেকেই দেশে থাকা বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন নসরুল হামিদ। যেসব সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছে না, সেগুলো পরিচালনার জন্য তিনি অংশীদার খুঁজছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়