গত ২৭ রমজান খাস কমিটির এক বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বেশকিছু জরুরি ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসবেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির সাথে বৈঠকে বসে হেফাজত নেতারা।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠকে বসেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান বিষয়ে দলটির গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ রমজান খাস কমিটির এক বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বেশকিছু জরুরি ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসবেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির সাথে বৈঠকে বসেছে হেফাজত নেতারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপিকে হেফাজত নেতারা যা বলেছে, তা নিচে তুলে ধরা হলো এই যে
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ বহাল রাখা ও ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ না ঢোকানোর ব্যাপারে বিএনপিকে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২. শাপলা ও জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারকাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের বিচার দ্রুত আগাতে ট্রাইবুনালের সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
৩. ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা মামলা করেছি। শাপলার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিএনপিকেও সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪. ২০১৩ সালের ৫ মের মামলায় হেফাজতের আলেম-ওলামা ও কর্মী-সমর্থক ছাড়াও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকেও আসামি করা হয়েছিল। বিএনপির ওই নেতাকর্মীদের মামলাসহ হেফাজত নেতৃবৃন্দের মামলাগুলোও দ্রুত প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দিতে বিএনপির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
৫. দেশে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিএনপিকে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান করা হয়েছে। তৌহিদি জনতা ও আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে যায় এমন কথাবার্তা বলা থেকেও বিরত থাকতে বিএনপিকে অনুরোধ করা হয়।
৬. আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও আওয়ামী লীগের অপপ্রচারণার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভাষায় কথা বলতে বিএনপিকে আহ্বান করা হয়েছে।
৭. বিএনপির কিছু কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ ও ওলামায়ে কেরাম যে অসন্তুষ্ট, তা বিএনপিকে জানানো হয়েছে। বরং জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, সেই আশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
৮. গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসতে বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কিছু মিডিয়া তাদের রিপোর্টে বিএনপির একতরফা বক্তব্য তুলে ধরায় জনমনে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়। এক্ষেত্রে কিছু মিডিয়া অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তাদের উচিত ছিল হেফাজত নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও বক্তব্য নেয়া, যা তারা করেননি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ধরনের কোনো বক্তব্য হেফাজত থেকে দেয়া হয়নি। হেফাজত কখনো কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। নির্বাচনী রাজনীতি থেকেও হেফাজত সবসময়ই মুক্ত থাকবে। হেফাজতের নাম বিক্রি করে কেউ রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করলে তা সফল হবে না। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে হেফাজত জনগণের পক্ষেই সবসময় মতামত দেয় এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের অবস্থান পূর্বের মতোই অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ। উপরোক্ত ইস্যুগুলো নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও হেফাজত নেতৃবৃন্দ শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন। আগামী ১২ এপ্রিল কয়েকটি ইসলামী দলের সাথে বৈঠক হবে ইনশাআল্লাহ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিি