দেশ রুপান্তরের প্রতিবেদন।। দেশে রাজনৈতিক মাঠে নতুন মেরূকরণ হতে পারে ঈদের পর। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মাঠে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সক্রিয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে এ প্রতিযোগিতা দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, যা রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন ধারা সৃষ্টির ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন চায়, জামায়াত প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে চায় আর এনসিপি চায় গণপরিষদ নির্বাচন। এ নিয়ে দলগুলোর কর্মসূচি উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার সংস্কার ইস্যুর বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু সময় বিলম্বের আভাসও দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বল্প সংস্কারের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের শুরুর দিকে হতে পারে আর এর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিএনপি ঈদের পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রস্তুতি বাড়াতে জোরেশোরে মাঠে নামবে। দলটি নির্বাচনের দাবিতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবে। জামায়াতও তৃণমূলে পুনর্গঠন শুরু করেছে এবং স্বতন্ত্রভাবে সংগঠন বিস্তার করছে। এনসিপি, যা ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করেছে, তৃণমূলে কমিটির কাজ শুরু করেছে এবং সক্রিয় হতে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে বিরোধ বাড়তে পারে। নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, জামায়াত ও এনসিপির তৃণমূলে সক্রিয়তা বিএনপির ভোটব্যাংকে প্রভাব ফেলার জন্যই কাজ করবে। জামায়াতের লক্ষ্য হলো বিএনপির দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এনসিপি, তরুণ ও নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চায় এবং পুরনো দলগুলোর মধ্যে ভাঙন ধরাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু সেটি কতটা সম্ভব, তারা সেই সমীকরণ এখনো মেলাতে পারেনি। কেননা, গত ১৫ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় হয়েছেন। ফলে দলগুলো যে স্বপ্ন দেখত সেটি অমূলক।
এদিকে ১৫ বছর পর মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের দমন-পীড়নের শিকার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ফলে উৎসবের আমেজ ও নব-উদ্দীপনায় এবার ঈদ উদযাপন হবে, এসব রাজনৈতিক পরিবারে।
ঈদ বরাবরই তৃণমূলের রাজনীতিতে গণসংযোগের বড় উপলক্ষ এনে দেয়। তাই ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভোটের প্রস্তুতির ঘোষণার পর নির্বাচনী রাজনীতির পালে হাওয়া গেলেছে বেশ জোরতালে। এবারের ঈদকে তারা ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের অনেকেই রমজান শুরুর পর থেকেই সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী প্রতিটি সংসদীয় আসনে গণসংযোগ ও ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের কর্মকা- তুলে ধরছেন। বিশেষ করে বিএনপি তাদের ঘোষিত ৩১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে উপহারসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম চালিয়েছে।
এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার ঈদ কাটাবেন লন্ডনে তার পরিবারের সঙ্গে, যেখানে তিনি বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। অন্যদিকে, বিএনপির অধিকাংশ নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারা জিয়া উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্য দলগুলো ঈদের পর রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘নির্বাচন বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।’ তিনি দ্রুত সংস্কার এবং নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী আমির শফিকুর রহমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।’
বিএনপির জাতীয় স্থায় কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দেশে রমজান শুরুর পর থেকেই ওয়ার্ড ও থানায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ ঈদেও অব্যাহত থাকবে। যেসব দল রয়েছে, তারা যেভাবেই বলুক, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় আসতেই হবে। এজন্য কেউ ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তাদের পরিণতি ফ্যাসিসদের মতোই হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বিগত বছরগুলোয় দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। এবারের ঈদ হবে শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে।’