শিরোনাম
◈ পোস্টার লাগানোর সময় ছাত্রদল নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৭ ◈ ঢাকা-বেইজিং এক চুক্তি, ৮ সমঝোতা ◈ শত কোটির সরকারি ফান্ড থেকে ৯৬ কোটি টাকা খরচ : স্নিগ্ধ ◈ বিতর্কের মুখে আইসিটির প্রসিকিউটর সিলভিয়ার নিয়োগ বাতিল ◈ চট্টগ্রামে আক্রোশ, অন্তঃকোন্দল, দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার একের পর এক খুন আহত প্রায় ২ হাজার! ◈ চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ : প্রধান উপদেষ্টা ◈ বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ আসছে ২৯ মার্চ ◈ চাঁদ দেখা কমিটির সভা রবিবার ◈ অশালীন আচরণের অভিযোগে এমবাপ্পে-ভিনিসুসদের বিরুদ্ধে তদন্ত ◈ আর একদিন পর সাঙ্গ হবে শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদের বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইফতার সম্মিলন

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১০:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

সংকট উত্তরণে নির্বাচনেই সমাধান দেখছেন রাজনীতিবিদরা, বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

মহসিন কবির: জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে এ বছরের ডিসেম্বর মাসে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে। এ দুটো তারিখ ধরে মাঠে নামছে রাজনীতিবিদরা। নিজেদের দল ভারি করতে গঠন করার চেষ্টা করছে জোট। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। 

তবে সংস্কার বিষয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো মতামত জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কাছে। অন্যরাও মতামত জমা দেবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করতে ‘দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, জোর দিয়ে বলেছি যে, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের গণতন্ত্রে যেতে হবে, সেটা হচ্ছে এ টু জেড ডেমোক্রেসি। এই ডেমোক্রেসি ছাড়া আমরা মনে করি না যে, আর কোনো সিষ্টেম আছে যে সিষ্টেমে জনগণের কল্যাণ করতে পারে। কিন্তু আজ নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যেন এই প্রক্রিয়া (নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়।

এ অবস্থায় কয়েকজন রাজনীতিবিদ বলেছেন, যেহেতু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য আছে, সংস্কারের জন্য সেগুলো চিহ্নিত ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। এটাই বর্তমান সংকট উত্তরণের ভালো উপায়। নেতাদের মতে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

এ জন্য কোনো কোনো নেতা মনে করেন, বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, সংকট তত বাড়ছে। তবে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে এখনও দলগুলো মোটাদাগে বিভক্ত। অধিকাংশ দল মনে করছে, সংকট সমাধানে দ্রুত নির্বাচনই সমাধান; কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি সংস্কারেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হতে না পারা হতাশাজনক। সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, সংস্কারের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে দলীয় বা ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রকে যেন বিপজ্জনক ঝুঁকির দিকে ঠেলে না দেই।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অনেক বড় বড় কাজ আছে। সেই সব কাজ করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের? মোটেও না। সব নির্বাচিত পার্লামেন্টের দায়িত্ব। তবে প্রচলিত বাস্তবতায় একটি ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই ভালো নির্বাচন করতে হলে প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। এটাই জনগণের ম্যান্ডেট বলে আমি মনে করি। আমরা যদি অন্যান্য বিষয়ে একমত হতে পারি ভালো, না হলে অসুবিধা নাই। সেগুলো (এ রকম না হওয়া বিষয়গুলো) আমরা নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেব, তারা জনগণের পরামর্শ নিয়ে অগ্রসর হবে।’

রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমরা একটা ভুল আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন ভালোভালো করতে হলে যা যা করা দরকার এখনই করতে হবে। যেহেতু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোর ঐকমত্য আছে, সেগুলো চিহ্নিত করেই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। এটাই সংকট উত্তরণের মূল পথ। এর বাইরে কিছু করা মানে সংকট দীর্ঘায়িত করা।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে চারপাশে যে উদ্বেগজনক ঘটনাগুলো আমরা দেখছি, তাতে নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকার ছাড়া এগুলো সামাল দেওয়ার ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।’ তিনি বলেন, ‘সুতরাং সংস্কার ও বিচার নির্বাচনের প্রতিপক্ষ নয়।

নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে তত বেশি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। দেশ একধরনের নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় সরকারকে যতটুকু দেখি ঢাকার বাইরে সরকারের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। গোটা পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত সরকার আসা দরকার। এই সরকার যেহেতু বিশেষ গোষ্ঠীর সরকার না সুতরাং বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের প্রতি বিশেষ আনুগত্য দেখানোর সুযোগ নাই।’ এ বছরই যেন নির্বাচিত পার্লামেন্ট পাওয়া যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাহলে দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সরকারকে সাধুবাদ জানাবে।’

গণভোট এবং গণপরিষদের বিষয়ে সাইফুল হকের ভাষ্য, গণভোট ও গণপরিষদের পরিবেশ নেই। গণপরিষদ কখন হয় দেশে যখন বিপ্লব হয় বা নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। এখানে বিপ্লব হয়নি, নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে সরকার চলছে।

আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা আগেও বলেছি সরকারের মোটাদাগে চারটি বড় দায়িত্ব। ১) অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর পরিস্থিতি থেকে দেশকে ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা। ২) গুম, গণহত্যা, লুটপাট ও দেশ ধ্বংসের হোতা ফ্যাসিবাদীদের বিচার। ৩) ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন এবং ৪) একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, সরকার আন্তরিক হলে আগামী ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধে?্য এ চারটি কাজই সমাপ্ত করতে পারবে। অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবে। আর সংস্কার কতটুকু দরকার সে বিষয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত?্য কমিশন একটা সংলাপ শুরু করেছে, আশা করি মৌলিক সংস্কারের কিছু বিষয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন ও তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

বিএনপি ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসছে প্রায় শুরু থেকেই। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি না করতে একাধিক বার আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বশেষ গত রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনে মনোযোগী হওয়া।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দলের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মার্চ মাসে একাধিকবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যে রকম নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম অবস্থায় নির্বাচন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে। বর্তমান পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার পরীক্ষা হয়নি। আমাদের অবশ্যই নির্বাচনের আগে দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সংস্কার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরী হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সিচ্যুয়েশন সম্বন্ধে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করে না। রিয়েলি! দেশের অবস্থা অত্যন্ত জটিল। অত্যন্ত জটিল। সেখানে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারছে না, সেই দেশে আপনি কী আশা করেন? সে কারণে সত্যি, কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো উপায় নেই তো! নেপালের মতো দেশে সংকট সমাধান করেছে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হওয়ার কারণে। সুতরাং আমাদের দেশের পলিটিক্যাল পার্টির কেউ কেউ এখনও আওয়ামী প্রেমে মত্ত। কী বলবেন এই দেশের রাজনীবিদ সম্পর্কে! ছাত্রদের ওপর আশা করা গেছিল কিন্তু ছাত্ররাও তো উল্টাপাল্টা কথা বলছে। কিছু কিছু কথা বলছে যেমন- পাটোয়ারী (এনসিপির নেতা) জিয়াউর রহমানকে লুটেরা বলছে; এটা অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলছে। কোনোদিকে আশার আলো দেখি না আমি।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানউজ্জামানের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন বা নেক্সট জুন। ডিসেম্বরে করার প্রস্তুতি হিসেবেও নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে। এই সময়টাতে নির্বাচন করে ফেলতে পারলে একদিক থেকে ইতিবাচক হবে।

নির্বাচনটা আলটিমেটলি লক্ষ্য হওয়া দরকার, যদিও সংস্কারকে বাদ দিয়ে নয়। যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হবে সেটা আগে হতে পারে। আর বাদবাকিগুলো যারা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসবে তাদের ওপর বিশাল দায়িত্ব বর্তাবে। তাদের উচিত হবে জনগণের ম্যান্ডেট সাপেক্ষে পরবর্তী সরস্কার করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়