শিরোনাম
◈ লাখ লাখ রোহিঙ্গার চোখে এখন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন ◈ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা ◈ ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ ◈ বিএনপিকে এক-এগারো’র মতো মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হচ্ছে: তারেক রহমান ◈ ব্যাংকের ঋণের ২৭ শতাংশ দিতে হবে সিএমএসএমই খাতে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ এবার শেখ হাসিনাকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বিস্ফোরক মন্তব্য! ◈ ওয়াসার নিয়োগে নাহিদ-নুসরাতের সুপারিশ, যা বললেন হান্নান মাসুদ ◈ উন্নয়নকাজে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে ডিএনসিসি ◈ কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিকল্পনা ◈ গ্যাসের দাম বাড়িয়ে পার্বত্য এলাকার অনসোর ব্লকের জন্য পিএসসি চূড়ান্ত

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০১:০২ দুপুর
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২০১৪ সালে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন আয়োজনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতের সমঝোতা হয়: সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তার সোজাসাপ্টা বয়ানে নানামুখী আলোচনা চলছে। সর্বশেষ তিনি কথা বলেছেন ২০১৪ সনের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে। বলেছেন, ওই নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের। তার কথায়, আওয়ামী লীগ ওয়াদার বরখেলাপ করেছে। ৩রা মার্চ, ২০২৫ সনে ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন,  '২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। কারণ তখন সেনাপ্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব কী হওয়া উচিত ছিল—সে বিষয়ে কিছু ব্যক্তি তাদের অন্যায্য ও অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রশ্ন তুলছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা যখন বিএনপির হাতে ছিল (২০০১-২০০৬), তখন প্রধান বিচারপতির অবসরের বয়স বাড়িয়ে তারা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার ব্যবস্থা করে।

২০০৬ সালে তাদের পাঁচ বছরের শাসনামল শেষ হলে সরকার পদত্যাগ করে। তবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের বিএনপির অভিলাষের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ ‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ নামে এক ভয়াবহ বিক্ষোভের সূচনা করে। ফলে, একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে যিনি সুপরিচিত ছিলেন—সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে, দায়িত্ব গ্রহণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ, যিনি বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন। আওয়ামী লীগসহ তাদের অনুসারী দলগুলো ও জাতীয় পার্টি এই নিয়োগ মেনে নিলেও, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন।

তিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আহমেদের চাপে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হন এবং ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করেন। এরপর প্রায় দুই বছর বিলম্বিত হয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানে নির্ধারিত তিন মাসের মেয়াদ লঙ্ঘন করে সেনাসমর্থিত ইয়াজউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা শেষে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই নির্বাচনের ফলাফলকে বিজয়ী দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে বর্ণনা করলেও, বিএনপি এটিকে কারসাজিপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করে।

দেশবাসী দেখলো, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নিয়োগকে প্রভাবিত করতে বিশেষ কৌশল নিয়েছিল। আর পরবর্তীতে ক্ষমতার মসনদে বসে আওয়ামী লীগ পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়।

এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে, যা আওয়ামী লীগকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেয়। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে।

প্রথমটি প্রকাশ্য: ১৫৪টি আসন আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে নেয়। দ্বিতীয়টি গোপন: কিছু পশ্চিমা দূতাবাসের চাপে, নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হয়। তবে, ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা পক্ষ পরবর্তীতে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

তখন (২০১৪) নির্বাচন পরিচালনা বা প্রতিরোধ সামলাতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়নি। এরপরও, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করার অভিযোগ এনে বিএনপি সেনাপ্রধানকে দায়ী করে। যদিও কীভাবে সেনাবাহিনী সহায়তা করেছিল, তার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ বিএনপি কখনো দিতে পারেনি।

সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও তার সহযোগীরা ২০০৭ সালে যা করেছিলেন, একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে আমি তেমন কিছু করতে রাজি ছিলাম না। আমার ও আমার অধীনস্থ সেনা সদস্যদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকা, যতক্ষণ তা কার্যকর রয়েছে। তাহলে কোন যুক্তিতে আমি সেই শপথ ভঙ্গ করতাম?

এক্ষেত্রে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক আলেকজান্ডার মিলির বক্তব্যের সঙ্গে একমত;
“সেনাপ্রধানের আনুগত্য ব্যক্তিগতভাবে বেগম খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার প্রতি নয়, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রতিও নয়; বরং তাঁকে অনুগত থাকতে হবে দেশের সংবিধানের প্রতি, যেটি রক্ষার জন্য তিনি শপথ নিয়েছেন।”

যারা সংবিধানকে একটি কাগজের স্তূপ সমতুল্য মনে করেন এবং যখন-তখন সংখ্যাধিক্য বা অস্ত্রের জোরে তা ছুঁড়ে ফেলতে বা পরিবর্তন করতে চান, আমি অন্তত তাদের দলে ছিলাম না। আমি সংবিধানকে জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি পবিত্র চুক্তিনামা হিসেবে দেখেছি।

যদি কোনো রাজনৈতিক দল এটি হীনস্বার্থে সংশোধন করে, তবে সেটি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার দায় ও কর্তব্য বিরোধী দলগুলোর। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর নয়। সন্তুষ্টচিত্তে সেনাপ্রধানের মেয়াদ আমি সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম এজন্যে যে ক্ষমতা দখলের লোভ আমাকে দায়িত্ববোধের প্রতি মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারেনি। দ্বিধাহীনভাবে আজ বলতে পারি, সে সময় আমার হাতে কোনো বিকল্প ছিল না।

আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, নির্বাচনকে ঘিরে যে বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি, নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কখনোই জড়িত হওয়া উচিত নয়।

সংবিধান সংস্কারের জন্য যে জাতীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা নিশ্চয় সশস্ত্র বাহিনীর মতামত নিয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশি আগ্রাসন মোকাবিলা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা—এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে কীভাবে সরকারকে বিরত রাখা যাবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, যেন নির্বাচনের পর পরাজিত দল তাদের ব্যর্থতার দায় সেনাবাহিনীর ওপর চাপাতে না পারে।' সূত্র: মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়