আওয়ামী লীগের ১০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ টাকা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা থাকার তথ্য আদালতকে জানানো হয়েছে। খবর: প্রথম আলো।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার এসব ব্যাংক হিসাবসহ তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মোট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব আজ মঙ্গলবার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় আওয়ামী লীগের একটি ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় আওয়ামী লীগের তিনটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। ওই তিনটি ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ২০ কোটি ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭০ টাকা।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিল-২০০৮ নামে দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। একটি ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৯১৯ টাকা। আরেকটি ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৬০ টাকা।
এর বাইরে আওয়ামী লীগের আরও চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। একটি বেসরকারি ব্যাংকের আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৬০ টাকা। অন্য তিনটি ব্যাংক হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৪ লাখ ২৭ টাকা ২২৭ টাকা।
সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ১০টি ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ টাকা।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ১৫টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৬ টাকা।
শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাবে কত টাকা : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা থাকার তথ্য আদালতকে জানিয়েছে দুদক। শেখ হাসিনার ১৭টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ৩টি ব্যাংক হিসাবে কত টাকা জমা হয়েছে, সেই তথ্য উল্লেখ নেই। একটি হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ মাত্র পাঁচ টাকা। আরেকটি ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১৫০ টাকা। একটি ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ ব্যাংক হিসাবটি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার যৌথ হিসাব।
এ ছাড়া অবরুদ্ধ করা আরও একটি যৌথ ব্যাংক হিসাব রয়েছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে।
এর বাইরে শেখ রেহানার নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। তাতে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৭ টাকা।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার ২৭১ টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।
আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ২৯টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৪৬৬ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৬ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানাসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে দুদক। কোন ব্যাংকের, কোন শাখায়, কোন হিসাবে, কত টাকা জমা হয়েছে, সেসব বিবরণ আদালতের কাছে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা থাকা এসব অর্থের স্থিতি কত তারিখের, তা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার ওই ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত সজীব ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, শেখ রেহানা ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের গুলশানের একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদের ‘সুধা সদন’ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। শেখ রেহানা ও রাদওয়ান মুজিবের গাজীপুরের সম্পদ জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আরেক মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই তিনি পালিয়ে ভারতে যান। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক মামলার তথ্য জানা গেছে। এর বাইরে দুদকও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ছয়টি মামলা করেছে।