শিরোনাম
◈ ৪০ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ◈ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মেসুত ওজিল ◈ ওমান ও যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও পাকিস্তানি বোলারদের গড় খারাপ: ওয়াসিম আকরাম ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে পাকিস্তানের বিদায় দেখছেন অধিনায়ক রিজওয়ান ◈ আজ রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম টের পাবেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ ১২ সড়ক-সেতুর নাম পরিবর্তন ◈ ঢাকাসহ সারা দেশে সন্ধ্যা থেকে যৌথ বাহিনীর প্যাট্রলিং ◈ ছিনতাই-ডাকাতি দমনে আজ থেকেই মাঠে যৌথ বাহিনী: আইজিপি ◈ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশে দুইজন সেনাপ্রধান  ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি: মুখোমুখি অবস্থানে আন্দোলনকারী-পুলিশ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

রাজনীতিতে অনৈক্যের সুর, অস্বস্তি কাটাতে রোডম্যাপ জরুরি 

মহসিন কবির: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংকট উত্তরণে বেশকিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখনও সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন অটুট আছে। তবে ভোটের রোডম্যাপ, আইনশৃঙ্খালা উন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আবার সরব হচ্ছে দেশের মানুষ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগবিরোধী বলে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐক্য তৈরি হলে গত ছয় মাসে অনৈক্যের সুর দেখা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐক্যের ডাকে রাজনৈতিক দলগুলো তাৎক্ষণিক ইতিবাচক সাড়া দিলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিতে একটি সুদৃঢ় ঐক্যের পথ সুগম হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। অপরিমেয় রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত ঐক্যের পরিবর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বত্র অনৈক্য, এমনকি হানাহানির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

দীর্ঘ আড়াই দশকের মিত্রশক্তি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বর্তমানে সব থেকে বৈরী সম্পর্ক চলছে। রাখঢাক ছেড়ে দল দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করছে। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সম্পর্কের বৈরিতার ক্ষেত্রে মূল দলকে ছাপিয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দুটি ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে। এদিকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সফল গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পালটাপালটি বক্তব্য ফ্যাসিবাদবিরোধী দুই শক্তির মধ্যে বিরোধ চাঙা করছে। তাদের নতুন দল গঠন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে একধরনের উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্বে অলিখিত দুটি ফ্রন্ট তৈরি হয়ে গেছে। সংস্কার ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা একই সুরে কথা বলছে। এক্ষেত্রে জামায়াত ছাড়া সাবেক ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ দলকে বিএনপি পাশে পেয়েছে। অপরদিকে জামায়াতের সুরে কথা বলছে কয়েকটি ইসলামি দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে অনৈক্য দেশের জন্য মোটেই কল্যাণকর নয়। তারা বলছেন,এখনো দেশ বিপদমুক্ত নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে জড়িত শক্তিগুলোর মধ্যে এ অবস্থায় কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। এতে করে দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় যারা বিরোধী, তারা উৎসাহিত ও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। অনৈক্য দেখা দিলে সেটা দেশের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনার পতন আন্দোলনে ছাত্র-জনতা সামনে থাকলেও পেছন থেকে আওয়ামীবিরোধী সব দলেরই সমর্থন ছিল। তাদের অনেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণও করেছিল। তীব্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনে রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলগুলোর বাইরে সব দল ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে চলতে শুরু করেছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিকেও জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তিগুলো স্বাগত জানিয়েছিল।

তবে রাজনৈতিক দলসহ ছাত্র-জনতার মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য তৈরির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিছুদিন যেতে না যেতেই তা ফিকে হতে শুরু করে। এ সময় সম্পর্ক উন্নয়নের পরিবর্তে শীতল হতে শুরু করে। সবচেয়ে বড় করে দৃশ্যমান হয়েছে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে পাশাপাশি চলতে থাকা বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব। প্রায় প্রতিনিয়তই দল দুটির নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছেন বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে গত আড়াই দশকের মধ্যে সব থেকে বৈরী সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। জনপ্রশাসন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগ-পদায়নে প্রাধান্য নিয়ে বিএনপি-জামায়াত একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করে। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে দল দুটির বিপরীত অবস্থানের কারণে তাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বিএনপির দাবি ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এক্ষেত্রে দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন।

বিএনপি এক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তীব্র বিরোধিতা করছে। বিএনপি তার সমমনা ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও কিছু বাম দলও স্থানীয় সরকারের আগে সংসদ নির্বাচন করার কথা বলেছে। অপরদিকে জামায়াতের দাবি, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সময় দিতে দলটির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে। জামায়াতের পাশাপাশি কয়েকটি ইসলামি দল, নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরো কয়েকটি দল ও জোট নির্বাচনের আগেই দৃশ্যমান সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে ভোটের হিসাব-নিকাশ যত এগিয়ে আসছে, বিরোধ ততই চাঙা হচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে একসঙ্গে রাজপথে থাকা বিএনপি-জামায়াত একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দুই দলের নেতারা কটাক্ষ করছেন এবং তাদের অবস্থান একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিএনপির তরফ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেক্টরে জামায়াতিকরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলটি প্রকাশ্যে জামায়াতকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ বলে আখ্যায়িত করছে। জামায়াতের পক্ষ থেকেও বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বিএনপির সমালোচনা করা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়েও একধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে দল গঠিত হওয়ার পর সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। তখন জুলাই ঘোষণা, বড় ধরনের সংস্কারসহ ছাত্র-জনতার দাবি রাজনৈতিক দাবি আকারে সামনে চলে আসতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়