ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন এই দলে অনেক চমক থাকছে। তার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণ অধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটা রাজনৈতিক দলের নেতাদের নতুন দলে যোগ দেওয়া। গুঞ্জন রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর এই দলে যোগ দেবেন। অথবা নতুন দলের সাথে গণ অধিকার পরিষদ এক দলে পরিণত কিংবা জোটবদ্ধ হবেন।
নতুন দলে যোগ দেওয়া কিংবা জোটবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তরুণ ছাত্রনেতাদের সাথে নূরুল হকের আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষ এখনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেনি। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা হয় ডাকসুর সাবেক এই নেতার সাথে।
নূরুল হক নূর বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আলোচিত নেতৃবৃন্দের অনেকেই আমাদের ছাত্রসংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা যখন ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন করি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র হিসেবে অনেকের সাথে বোঝাপড়া ছিল। এমনকি গণঅভ্যুত্থানেও অনেক বিষয়ে পরামর্শ করা, পরিকল্পনা করা—এই সমস্ত বিষয়েও আমাদের সহযোগিতা ছিল। সেটি আমাদের গ্রেপ্তারের পরে আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন যে কীভাবে কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের ১ দফায় পরিণত আমরা করেছিলাম। কাজেই এখন যেহেতু তারা সরকারে আছে এবং একটা রাজনৈতিক দলও গঠন করতে চায়, তারা মনে করে গত সাত-আট বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে আমাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আছে। তারাও চেয়েছে, আমরাও চেয়েছি যারা সাত-আট বছরে দেশের রাজনীতিতে আলোচিত তরুণ নেতারা আছেন —সবাই এক হলে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। সে জায়গা থেকে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।
নূর আরও বলেন, ন্যূনতম বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমরা একমত হয়েছি যে কাছাকাছি থেকে রাজনীতি করব। কিন্তু এক পার্টি হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা সেভাবে আগায়নি। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে একটা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা রাজনৈতিক দলের যে কাঠামো প্রয়োজন, সে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের আছে। আমরা যারা রাজনীতি করছি তাদের একটা বোঝাপড়া আছে, আদর্শ আছে। নতুন যারা রাজনৈতিক দল করছে বা করতে চাচ্ছে, তাদের কিন্তু এখনো সেভাবে নিজস্ব কোনো বোঝাপড়া নাই। নানা দল, সংগঠন ও মতের মানুষ এখানে আছে। তারা এখন সরকারে আছে। তাই অনেক সুবিধাবাদী লোকও তাদের আশেপাশে আছে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, নিজেরা দল ঘোষণা করে নিজেদের তৈরি করতে পারে। আমরা গত সাত-আট বছর হামলা-মামলা উপেক্ষা করে নিজেদের ত্যাগ মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। তারাও প্রতিকূল সময়ে ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে।
জোটবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি একত্রে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়, তখন হতে পারে। আপাতত, আমরা তাদের সাথে জোট কিংবা এক পার্টি হওয়ার আলোচনায় উপসংহারে পৌঁছাতে পারিনি। সিদ্ধান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
নূর যোগ করেন, শুধু আমাদের সাথেই না, তারা আরো বেশকিছু দলের সাথে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করেছে যে, একটা কার্যকর রাজনৈতিক কাঠামো করতে হবে। কারো সাথেই বোধহয় তাদের এডজাস্টমেন্ট হয়নি। কারণ তারা সরকারের জায়গায় আছে। তারা ক্ষমতার কেন্দ্রে আছে। তাই তারা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিত্ব হিসেবে অন্যরা আত্মমর্যাদার জায়গা ঠিক রেখেই এক হবে। আমার মনে হয়, এ কারণে কোনো দলের সাথে ঐকমত্য হয়নি। বিভিন্ন সংগঠন থেকে যে নেতৃবৃন্দরা যোগ দিবেন, তারা একত্রে আছেন। তারা দল করবেন। ছোট ভাই হিসেবে, সহযোদ্ধা হিসেবে তাদের জন্য শুভ কামনা জানাই। সূত্র : ডেইলি ক্যাম্পাস
আপনার মতামত লিখুন :