মহসিন কবির: গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত থাকায় আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতার লড়াইয়ে দীর্ঘদিনের দুই শরিক বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বলছেন আক্রমণাত্মক কথা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন দুইদল এভাবে আক্রমণাত্মক কথা বললে ফ্যাসিস্টরা কথা বলার সুযোগ পাবে। দেশে আশার ক্ষেত্র তৈরি করবে। তাই দুইদলের নেতাদের সংযত হয়ে কথা বলা উচিত।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে গভীর বিভেদ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দুইদলের নেতারা পরস্পরকে তীব্র সমালোচনা করছেন, যা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে যে মাত্রার বৈরিতা হয়েছে তা নজিরবিহীন। কারণ উভয় দলই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে।
রাজনীতির খেলা নির্বাচনের লড়াইয়ে ইতোমধ্যে মাঠে নামছেন বিএনপি জামায়াত। দুইদলই দল গোচাচ্ছে। জামায়াত ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে সম্ভব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি বিভিন্ন এলাকায় নতুন কমিটি দিচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচিত করার কাজও করছেন বলে জানা গেছে।
‘কারা পায়ের রগ কাটে, তাদের চেনে জনগণ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে ঐ একাত্তরের বিরোধিতাকারী’, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে এ মন্তব্যের পরে বিএনপি-জামাতের ‘সাইবার যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে।
২৯শে ডিসেম্বর বিএনপির র বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
জামায়াতের সে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্নমতের লোকদের সাথে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে ঐক্য করা হয়েছিল সেটা কী মোনাফেকী নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দপতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি’।
এরপর বিএনপি তাদের ভেরিফাইড পেজে বিষয়টিকে হাস্যকর দাবী করে লিখেছে, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে জামাত দর কষাকষি করে ২২ আসন বাগিয়ে নেয় জোট থেকে। এবং সে নির্বাচনে ডাঃ শফিকুর রহমান নিজেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাহলে কার সাথে জোট? আর কার সাথে মোনাফেকির কথা বললেন আমির?’
এদিকে জামায়াত একই বিবৃতিতে তিনি রুহুল কবির রিজভীর ‘ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তারও প্রতিবাদ জানান।
রফিকুল ইসলাম খানের দাবি, রুহুল কবির রিজভী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, জনাব রিজভী জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘৫ই আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ, কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চিনে জনগণ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।’ জনাব রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক যাবৎ প্রচার করা হচ্ছে। রগকাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১ এর বিরোধিতা এ সব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা বলে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়।
জামায়াত রগকাটা পার্টি নয় দাবি করে রফিকুল বলেন, জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। রিজভী জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’ তার এই বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি।
তার দাবি, জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি। জনাব রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সাথে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কী জাতির সাথে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, রিজভী ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে জনগণ বিস্মিত। ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জামায়াতের প্রতি অভিযোগ উত্থাপনের আগে জনাব রিজভীর আত্ম-পর্যালোচনা করা উচিত। কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করে ভারতের সাথে সখ্যতা করার চেষ্টা করেছেন, তা জনগণ খুব ভাল করেই জানেন।
রফিকুলের দাবি, জামায়াতের রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত জনাব রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অপবাদ আরোপের রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীকে ‘মোনাফেক’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এক স্মরণসভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘আমরা জামায়াতকে সমর্থন করিনি। বিএনপির উদারতার কারণে তারা বাংলাদেশে প্রথম রাজনীতি করার সুযোগ পায়। কিন্তু সবসময় এই দলটি মুনাফেকি করেছে। মুনাফেকি ছাড়া তারা কিছু করেনি।’ মর্মে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা আপত্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
রুহুল কবির রিজভী তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমরা জামায়াতকে সমর্থন করিনি। বিএনপির উদারতার কারণে তারা বাংলাদেশে প্রথম রাজনীতি করার সুযোগ পায়। কিন্তু সব সময় এই দলটি মুনাফেকি করেছে। মুনাফেকি ছাড়া তারা কিছু করেনি।’
আপনার মতামত লিখুন :