নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সব কার্যক্রম প্রায় শেষ। দেশের চলমান রাজনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্ন কাঠামো ও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক দল সামনে আনতে চান তারা। বিশেষ করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বর্জন ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সামনে রেখেই নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এ দল ঘোষণা করা হবে। এর আগে দলের নাম চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নতুন দলের নেতৃত্ব নির্বাচন ও দলের অভ্যন্তরে বহুমুখী গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে চান তারা। কেউ চাইলে দীর্ঘ সময় দলের শীর্ষ পদ দখলে রাখতে পারবেন না। এছাড়া দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সময় উপযোগী রাজনৈতিক দল গড়তে প্রস্তুত তরুণ ছাত্র নেতারা। ফলে শেষ মুহূর্তেও নেওয়া হচ্ছে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করলেও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্ত হবে না। জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম হিসাবে সংগঠন দুটি কাজ করবে।
নেতারা বলেন, আগামী ২০ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এতে প্রথম পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এই আহ্বায়ক কমিটিতে যুক্ত হবেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রনেতা। মূলত নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে দেওয়া এসব ছাত্র নেতার ওপরই আস্থা রাখতে চান তরুণরা।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, তরুণদের মধ্যে যারা সিনিয়র, আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন, যারা রাজনীতি সম্পর্কে ভালো বোঝেন তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে রাখা হবে।
তিনি বলেন, তরুণদের নেতৃত্বেই রাজনৈতিক দল হবে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অনেক বছর পর একটি বড় রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ সামনে এসেছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নেতৃত্বে আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, দল গঠনের কাজ চলমান। কবে এই দল ঘোষণা হবে এবং কারা দায়িত্বে থাকবেন- তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। সেজন্য ঘোষণা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থার মধ্যেই রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে গত সেপ্টম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পরপরই নতুন দল ঘিরে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কিভাবে দল গঠন হবে? কারা এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা শুরু হয়। সূত্র : যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :