শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন আশা করছে ইউএনডিপি: স্টেফান লিলার ◈ বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত গ্রেফতার ৪৮ ◈ শাহবাগে আজও প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা (ভিডিও) ◈ আধিপত্য থেকে বৈধতার সংকটে আওয়ামী লীগ! ◈ আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার ভেতরে  শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  ◈ গাজীপুরে ৮১ জন গ্রেফতার অপারেশন ডেবিট হান্টের ৩য় দিনে ◈ ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি (ভিডিও) ◈ বাধার মুখে ধর্ষণ মামলার আসামি ধরতে গিয়ে ফিরে এল র‍্যাব ◈ জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ◈ চলতি মাসের মধ্যেই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ, কমিটিতে দেড় শতাধিক ছাত্রনেতা

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৯:৫৫ সকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে স্বস্তি আসবে কীভাবে?

ডয়চে ভেলে: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে দুই-একটি বৈঠক হলেও তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি৷ তলব ও পাল্টা তলব, বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি চলছেই৷ তাহলে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ কী?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, অবশেষে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ আর সেটা হতে পারে আগামী এপ্রিলে ব্যাংককে৷ ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদী দুইজনই যোগ দিচ্ছেন৷ ওই সময় তাদের দুইজনের মধ্যে আলাদা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে৷ আর দায়িত্ব নেয়ার পর আগস্টে দুইজনের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে৷

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে আবারো দেখা হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে৷ বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে৷ আর সেটা হতে পারে ওমানের রাজধানী মাস্কটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে৷ ৮ম ইন্ডিয়ান ওসান কনফারেন্সের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ১৬-১৭ ফেব্রয়ারি৷ আর ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ওই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন৷ এবং সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দুইজনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷

এর আগেও অবশ্য তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে৷ ওটা ছিলো ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক৷ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তখন দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়৷

অন্যদিকে বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি৷ ১২ ঘন্টার ওই বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷

এছাড়া আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে চারদিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হবে ৷

তাহলে সমস্যা কোথায়?

বলতে গেলে ৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের  সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং-এ বাংলাদেশ ইস্যু থাকছেই৷ আর বাংলাদেশেও তাই৷ আর আছে ভারতীয় মিডিয়ার ‘অপপ্রচার'৷ সেটা বাংলাদেশি মিডিয়ায়ও কমবেশি হচ্ছে৷ সীমান্ত সংকট আরো বেড়েছে৷ ভারতের রপ্তানি বাংলাদেশে কমে গেছে৷ আর বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা বলতে গেলে প্রায় বন্ধ৷ বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন ৫ আগস্টের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে সমস্যা হচ্ছে তার মূল কারণ হলো ইউনূস সরকারকে ‘গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে নিতে চাইছেনা ভারত'৷ আর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে তাদের মতো করে তারা ন্যারেটিভ তৈরি করছে৷ সেটা ভারতীয় মিডিয়াও করছে৷ তারা বাংলাদেশকে সমমর্যাদার প্রতিবেশি মনে করছেনা৷ এইসবের বাইরে শেখ হাসিনা একটা বড় ইস্যু৷ বাংলাদেশ মনে করে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ঠিক করেনি৷ আর তাকে ফেরত না দিয়ে উলটে তাকে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে' কাজে লাগাচ্ছে৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, ‘‘ভারত তো বলেই দিয়েছে যা তারা বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে৷ সেই সরকারের সঙ্গেই তারা কাজ করতে চায়৷ এখান থেকেই বোঝা যায়  অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা কী চোখে দেখে৷ এটা তো এই দেশের জন্য সম্মানের নয়৷ শেখ হাসিনা একটা উপাদান৷ এটা ছাড়াও ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা-এইসব ব্যাপারে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ন্যারেটিভটাই পরিবর্তন করে দিতে চায়৷ আমাদের মধ্যে এখন এটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারত চায় না৷ পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অস্বস্তির কারণেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে আমার ধারণা'' বলেন তিনি৷

এম হুমায়ূন কবির বলেন,'' তারা কোনোভাবেই বাস্তবতাকে মানতে চাইছেনা৷  আহলে এখন যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে তারা কারা? এটা তারা না বুঝলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে মনে হয়না৷ আগে তারা যা চাইতো তাই পেত৷ এখন তো আর পায় না৷”

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত আমরা নির্ধারণ করব৷ আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আমরা কিভাবে দেখব কিভাবে সমাধান করবো সেটা আমাদের বিষয়৷ ভারতকে এটা বুঝতে হবে৷ তারা বাংলাদেশের সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলছে৷ কিন্তু ভারত তো অনির্বাচিত আফগান সরকারের সঙ্গে কাজ  করেছে৷ তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে৷ এই চিন্তা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে৷ ”

আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে না৷ এটই বড় সমস্যা৷ তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সব সময়ই মন্তব্য করে৷ এটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় বাধা৷ আর তারা যে বলছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচত সরকার এলে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে – এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল৷ কারণ বাংলাদেশে এখন যে সরকার আছে তারা নির্বচিতের চেয়েও বড়৷ তারা সবার সম্মতি ও পছন্দের সরকার৷”

পরারাষ্ট্র উপদেষ্টা বা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অথবা একদম শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যে বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক ভালো হয়ে যাবে এমন আশা করেন না কেউই৷ তারপর বৈঠক হওয়া ভালো, তাতে যদি অস্বস্তি কিছুটা কাটে৷ ‘‘আর আমার মনে হয় সম্পর্ক সাবলীল হতে পারে যদি প্রফেসর ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে কোনো বৈঠক হয়৷ আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপদেষ্টা, সচিব পর্যায়ে  বৈঠকে এর কোনো সমাধান আসবে বলে আমার মনে হয়না৷ এই বৈঠকগুলো আসলে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র'' বলেন এম হুমায়ূন কবির ৷

আর অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, ‘‘উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হলে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ স্বাভাবিক হওয়ার পথ তৈরি হতে পারে৷ তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো ভারত যে চোখে বাংলাদেশকে দেখে, যেভাবে ট্রিট করে – এটা তাদের বদলাতে হবে৷ পরিবর্তনটা বুঝতে মেনে নিতে হবে৷ আন্তরিক হতে হবে৷ বাংলাদেশকে তারা ছোট চোখে দেখে৷ সেটা হলে তো হবে না৷''

অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, ‘‘দুই দেশের মন্ত্রী বা শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হলে  সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ কিন্তু তাতেও আমি মনে করি সময় লাগবে৷ কারণ সম্পর্কের দূরত্ব অনেক বেড়েছে৷ সবার আগে আমি মনে করি দুই দেশের মিডিয়াকেই তাদের লাগাম টানতে হবে৷ বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার করছে৷ বাংলাদেশেও যে একদম হচ্ছেনা তা কিন্তু নয়৷ তবে ভারতের তুলনায় অনেক কম৷''

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়