শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪২ রাত
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেখ হাসিনার ভুল রাজনীতির খেসারত, হারালেন দুই কুল

মহসিন কবির: শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভুলের কারণে আওয়ামী লীগ ও তিনি এখন খেসারত দিয়েছেন। তিনি যদি জুলাইতে পদত্যাগ করতেন তাহলে হয়তো তেমন কিছুই হতো না। নেতারা কিছুদিন জেল খাটার পর আবার জামিনে বের হয়ে আসতেন। তখন তো হত্যা মামলা হতো না। এখন তো প্রায় সবই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন জামিন পাওয়ারও দুষ্কার।  

এছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি যে ভাষণ দিলেন। সেটা না দিলেও পারতেন। আরও সময় নিতে পারতেন। দেখতে পারবেন নির্বাচনের গতি কোন দিকে যায়। তারপর ভাষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিলো বলে অনেকেই মনে করছেন। নিজে ভুলের কথা বলে তিনি নিজেই ভুল করলেন। একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে তিনি নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দুটোই হারালেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

২০১৮ সালের ১ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছিলেন

বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা একটি রাজনৈতিক ভুল। এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে। নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করতে বিএনপি নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না, তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধা‌ন্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে। তিনি বলেন, নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন।

দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান, তা মানুষকে জানান। নিজের দলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়তো ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে। যে পথে আপনি চলছেন, তা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন।

২০২৩ সালের ২৪ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন আত্মদহনে দগ্ধ। ভুল রাজনীতির খেসারত দিচ্ছে তারা। স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক দল হয়েও মনোজগতে তারা এখনো পরাধীনতায় বিশ্বাসী।’

বিবৃতিতে কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন আত্মদহনে দগ্ধ। ভুল রাজনীতির খেসারত দিচ্ছে তারা। স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক দল হয়েও মনোজগতে তারা এখনো পরাধীনতায় বিশ্বাসী। পাকিস্তানি ভূত তাদের মাথা থেকে যায়নি। তার জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। যাদের জন্ম এবং বিকাশ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, তারা সেই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না এটাই সত্যি। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের পাশে আছে, জনগণের পাশেই থাকবে।’

বিএনপিকে আস্থায় নির্বাচন করলে এখন এতো সামালোচনা হতো না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নির্বাচন করলে এতো সমালোচনা হতো না। এছাড়া তার নেতাদের অধিক ভাড়াবাড়ি পতনের অন্যতম কারণ। তাছাড়া তার কাছের লোকরা তাকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি বুঝতে পারেননি। 

লন্ডনের কিংস ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর এবং নয়াদিল্লিতে অবজারভার রিসার্স ফাউন্ডেশনে স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট হর্ষ ভি প্যান্ত রেডিফকে হর্ষ ভি প্যান্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দেননি।

তিনি বিরোধী দলকে কোনো সুযোগ দেননি। তার দলের আধিপত্যের অর্থই দাঁড়িয়েছিল এটা যে, প্রতিষ্ঠানগুলো একমুখী হয়ে উঠেছিল। তা সে ব্যুরোক্রেসি বা কোর্ট বা নিরাপত্তা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী-  যাই হোক না কেন তিনি ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। ফলে আপনি দেখতে পাবেন এসব প্রতিষ্ঠানে তার প্রতিনিধি অথবা তার দলের লোকজন অতিমাত্রায় প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সহ অনেক বিষয়ে তিনি রেডিফের প্রসন্ন ডি জোরে’র সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- এ বছর জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখনই কি শেখ হাসিনার পতনের দেয়াল লিখন ছিল? জবাবে হর্ষ ভি প্যান্ত বলেন- এটা বলা খুব কঠিন।

গত নির্বাচনে যখন তিনি নির্বাচিত হলেন তখন প্রচুর বিরোধিতা হয়েছে। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তবে এতে যে শেখ হাসিনার এমন নাটকীয় পতন হবে তা স্পষ্ট ছিল না। নির্বাচনের আগে তার ওপর প্রচুর চাপ ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি নির্বাচন করেন। আবার ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হন।

জনগণ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করায় তারা আর আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির নতুন এ অবস্থান নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়ন করেছে। সেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নামে আর রাজনীতি করতে পারবে না-এই আওয়াজ আমরা উঠাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগের গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি করছি।

অভ্যুত্থানের ছয় মাস উপলক্ষে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা জানায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পরপরই এ নিয়ে দেখা যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া। শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের নানা পেজ থেকে।

তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এসময় বিভিন্ন স্থানে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং মুজিব পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ফলক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়