শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:৩৬ রাত
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৩৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ নেতারা দেশে ফিরে আসতে চান, দুই উপদেষ্টার না 

মহসিন কবির: আওয়ামী লীগ বিদেশে পালানো নেতারা দেশে ফিরতে আসতে চান। কিন্তু তাদের ফিরতে না দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছে বিরোধীরা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দায় স্বীকার করতে হবে, পরে অন্যকথা। কিন্তু বিদেশে বসে ফোনে নেতাদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন অওয়ামী লীগের নেতারা। বিদেশে বসে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। এদিকে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজমেল হক বলেছেন, প্রবীণ নেতারা ভাবছেন ‘২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সবাইকে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত’।

হাসিনা ‘গুজব সেল’ গঠন করে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

গুজবকে পাত্তা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা গুজব সেল পরিচালনা করে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তবে দেশের মানুষ বিবেকবান হওয়ায় এই গুজব শুধু বিনোদনের খোরাক জোগায়।”

শনিবার পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইয়ুথ সামিট’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বেশ কয়েকজন নেতা সরকার পরিচালনা ও রাজনীতিতে তাদের 'কিছু কিছু ভুলত্রুটি' স্বীকার করে এখন আবারও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের আশা করছেন।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের এমপি-মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। তবে প্রতিবেদনটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে হওয়া গুম, খুন, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সম্পর্কে তাদের কোনো প্রশ্ন উল্লেখ করেনি ভারতের গণমাধ্যমটি। এমনকি জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন ছিল না। 

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়াই ইউনূসের একমাত্র পথ: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কামাল
এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। প্রতিবেদনে উল্লিখিত আসাদুজ্জামানের প্রতিটি কথাই মিথ্যা বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক পেইজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত গণহত্যার পলাতক আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকার মিথ্যাচার এবং ভুল তথ্যে পরিপূর্ণ।'

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ তুলে ধরা হলো-

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজমেল হক (৭৮) দাবি করেন, 'আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মীকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তারা আত্মগোপনে আছে। তাদের কাছে টাকা-পয়সাও নেই, খাবারের জন্য তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটছে। তবুও তাদের মনোবল দৃঢ় রয়েছে। আমরা দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার জন্য ভারতের কাছে আশা রাখি।'

তিনি বলেন, প্রবীণ নেতারা ভাবছেন '২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সবাইকে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত'। 

৪৪ বছর বয়সি সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সব জামিন আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই 'শোচনীয়'। তার দাবি, 'এ পর্যন্ত আমাদের কোনো বিচারিক অধিকার নেই, কোনো জামিন মঞ্জুর করা হচ্ছে না এবং আমরা এও জানি যে যদি আমরা ফিরে গিয়ে নির্বাচনের দাবি করি, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং কারাগারে রাখা হবে... আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত। তবে বর্তমানে এর কোনো পরিবেশ নেই। এ মুহূর্তে আমাদের পক্ষে (রাজনীতির) মাঠে থাকা মাটিতে থাকা এবং রাজনীতিতে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।'

দলের অন্যান্য নেতার মতো রাজ্জাকও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দলকে শক্তিশালী ও উজ্জীবিত করার জন্য 'ব্যাপক আলোচনা' চলছে। 

অনেক নেতাই জানিয়েছেন, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ গ্রুপে ৩০-৪০ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী রয়েছেন। 

আওয়ামী লীগ কীভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাবেক এমপি ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, 'আমি টেকনিক্যালি আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেও প্রতিদিন দলের কর্মীদের কাছ থেকে ২০০-৩০০ কল পাই। এভাবে নেতারা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন, আর কর্মীরা জনগণের সঙ্গে। একবার আইনের শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আমরা আইনের মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগ একটি ‘ফ্যাসিস্ট দল’; ফলে তাদের আর রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেছেন, “এখন বিতর্ক হচ্ছে, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না? আপনারা আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল বলছেন, তখন প্রশ্ন আসে ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কীভাবে রাজনীতি করতে পারে? সুতরাং আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না।

যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে তাহলে গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, যারা বাংলাদেশপন্থী, তাদের মধ্যে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ বিরোধী, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদীদের কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। শনিবার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে ছাত্র-জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহফুজ আলম বলেন, বিএনপি, ‎জামায়াত নির্বিশেষে যত রাজনৈতিক দল, ছাত্র‎সংগঠন আছে, শ্রমিক, নারী, আলেম-ওলামা আছেন—সবাই যাঁরা বাংলাদেশপন্থী ‎সবাই বাংলাদেশে থাকবেন এবং নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ‎তাঁরা পজিটিভ একটি কম্পিটিশনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। বাংলাদেশের ‎জনগণকে নিয়ে বৈষম্যহীন ইনসাফমূলক একটি ‎শাসনব্যবস্থা ‎কায়েম করবেন।

সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী সেসব বিষয় বক্তব্যে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার রয়েছে খুনিদের বিচার করা, গুম-খুন, ধর্ষণের বিচার করা, সংস্কার করা এবং অবশ্যই বাংলাদেশপন্থী সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে উপহার দেওয়া, যেটি গত ১৬ বছরে সম্ভব হয়নি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়