শিরোনাম
◈ মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহারে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা ◈ ‘ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনের মুক্তিতে আর কোন বাঁধা থাকছে না’ ◈ বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ধরা হবে, কিছু হয়েছে, ধরার পর আবার এক ওসি পালিয়েও গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান ◈ মারা গেছেন নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী ◈ সারজিসসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের প্রচার, যা জানা গেল ◈ নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব সারজিসের (ভিডিও) ◈ জয়বঞ্চিত ম্যানচেস্টার সিটি, হার এড়ালো লিভারপুল ◈ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রধান যে পাঁচটি সুপারিশ থাকছে ◈ জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলা যৌক্তিক মনে করছি না: উপদেষ্টা মাহফুজ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:০৯ দুপুর
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপি বলছে সম্ভব, জামায়াত বলছে না

সময়ের আলো প্রতিবেদন : বিএনপি ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করলেও ভিন্ন কথা বলছে জামায়াত। তাদের ভিন্ন সুর। বরাবরের মতোই তারা সংস্কারকে প্রাধান্য দিতে চায়।

জামায়াত মনে করছে, এত দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব নয়। সংস্কার অপূর্ণ রেখে নির্বাচন দিলে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই বিলম্ব হলেও সংস্কার শেষ করার পক্ষে সম্প্রতি মাঠে বিএনপির প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। 

দ্রুত সময়ে সংসদ নির্বাচন আদায় করতে চায় বিএনপি। নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে মিত্র বাড়ানোই এখন তাদের অন্যতম কৌশল। এ পথে হাঁটতে গিয়ে একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাদের। সংস্কার-নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে জামায়াত।

নির্বাচন নিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। দলটি মনে করছে, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে গভর্ন্যান্সের মধ্যে। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন তো ফোকাসটা পুরো দেশের, পুরো জাতির এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপরে।

এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা মনে করি জুলাই-আগস্টের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। নির্বাচন তো পরের ব্যাপার। বিএনপি বড় দল, তাদের অভিমত থাকতেই পারে। তারা জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। বিএনপিও তো প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলেছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কি সেটা সম্ভব?

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ সময়ের আলোকে বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া পরিপক্ব না হলে তো নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কারকাজ চলমান আছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়েছে। এখন তারা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজ করছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করতে হবে।

তিনি বলেন, যেকোনো দলের চাওয়া ও ভাব প্রকাশ থাকতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বিএনপি তাদের মত দিয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দল ভিন্নমত দিতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তবে দেখতে হবে মানুষ কী চায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের এ নেতা বলেন, রাজনৈতিক দল থেকে জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনআকাক্সক্ষাকে ধারণ করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় না। আমরা কী চাই সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব। এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। ছাত্রনেতা ও সংগঠকরা এত দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান না বলে স্পষ্ট জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সময়ের আলোকে বলেন, ছাত্রনেতা সারজিস আলম ও জামায়াতের বক্তব্য মিলে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাচ্ছে তারা কী চায়। তাদের দাবি তারা একাই বিপ্লব করছে। ১৭ বছর কই ছিল? জামায়াত এখন আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাক সামনে কী হয়।

এর আগে বিএনপি ভোটার তালিকা প্রযুক্তির মাধ্যমে তালিকা আপগ্রেড করার পরামর্শ দেয়। বিএনপির এ মতের উল্টো মত দেয় জামায়াতে ইসলামী।

সূত্র জানান, সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছেছে। এটি কেউই মুখে স্বীকার না করলেও ভেতরে ভেতরে শত্রুতা বাড়ছে। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে চরম নাখোশ বিএনপি। তারা ৫ আগস্টের পর এভাবে বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাবে, এটা ধারণা করতে পারেনি বিএনপি। সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন সদস্য জামায়াতকে নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেন। তবে এখনই সিনিয়র নেতারা জামায়াতকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে নারাজ। অন্যদিকে জামায়াতের ভেতরেও বিএনপিকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বিএনপিকে সহ্য করতে পারছে না।

বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের প্রভাববিস্তার, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জামায়াতের বেশিরভাগ দায়িত্বশীল নেতা এককভাবে নির্বাচন করার পক্ষে অনড়। বিএনপিকে তারা মাঠে এক চুলও ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। জামায়াত ৩০০ আসনে এককভাবে কিংবা ইসলামী জোট করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি জামায়াত নিজের পক্ষে অবস্থান জোরালো করতে কূটনৈতিকভাবে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, জামায়াকে নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। বলতে গেলেই হইচই হবে। আমাদের দলের রিজভী কিছুটা বলার চেষ্টা করছে। সবখানেই জামায়াত কাউন্টার দিচ্ছে। তাদের গতিবিধি পজিটিভ নয়। মাঠে আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মকাণ্ডে বিরক্ত উল্লেখ করে জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের একজন নেতা সময়ের আলোকে বলেন, এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই বিএনপির সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে। আন্দোলনের শুরু থেকে ছিল সেটি, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আরও বেড়েছে। বিএনপি ৫ আগস্টের পর ধরেই নিয়েছে তারাই ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতায় আসার আগেই বিএনপি বিভিন্ন এলাকায় কর্তৃত্ব চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় জামায়াতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। আমরাও বিএনপিকে ফাইট দেওয়ার চেষ্টা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়