শিরোনাম

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:১৩ রাত
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের ঘোষণা, রাজনীতিতে নানা আলোচনা

শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের ঘোষণা, রাজনীতিতে নানা আলোচনা

মহসিন কবির: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীরে ধীরে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কাছে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান ভোটের ময়দানে দেখতে চান। এজন্য তারা নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল। এমনটিই তারা জানিয়েছে। 

ছাত্রনেতারা বলছেন, তারা এতদিনের প্রচলিত রাজনীতির ধারা থেকে আলাদা কিছু উপস্থাপন করবেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী জানিয়েছেন, এই দলটি হবে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে। এখানে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী কাঠামোর কোনো স্থান থাকবে না। পুরোনো সমস্যা, যেমন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীত কর্মকাণ্ড বা কোনো বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে তারা হাঁটবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে প্রাথমিক একটি ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার বিলম্বিত হলে পরের বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।

এরই মধ্যে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও আদর্শ কী হবে। বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে তাদের পার্থক্যই বা কী হবে। তাদের অর্থনৈতিক নীতি কেমন হবে? তাদের রাষ্ট্র কাঠামো কি পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক, কল্যাণমূলক, নয়া উদার গণতান্ত্রিক, নাকি ইসলামী ভাবধারার-এ নিয়ে গঠিতব্য দলটির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘আমরা একটা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। এটাই আমাদের আদর্শ হবে। আমরা বাম-ডান এমন যে, বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নাগরিক কমিটিতে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট, কালচারাল অ্যাক্টিভিস্টসহ অনেকেই আছেন। তাদের মধ্য থেকে যারা রাজনীতি করতে ইচ্ছুক, নাগরিক কমিটির বাইরেও যারা আসতে চান এবং বিদ্যমান কোনো দলে রাজনীতি করেন, তাদের নিয়ে তরুণদের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে। এটা শুধু নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ নিয়ে একটা দল হবে, এমনটা নয়। এদের একটা অংশ নিয়ে অন্যদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল হবে। দলটির নেতৃত্ব কত সদস্য বিশিষ্ট হবে এবং দলপ্রধান কে হবেন এ বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গণমাধ্যমকে বলেন, দল গঠনের বিষয়ে আমাদের ফোরামে আপাতত আলাপ হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলিনি। আমাদের প্ল্যাটফর্মটা আগে গোছাতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন করার সময়ই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই প্ল্যাটফর্ম কখনো রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে না। তবে কোনো নতুন দল আত্মপ্রকাশ করলে, এই ব্যানার থেকে যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে যুক্ত হতে পারেন। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজনৈতিক দল যে কেউ গঠন করতে পারে। ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। তারা মনে করছে, দেশের জন্য হয়তো আরও কিছু করতে পারবে, দেশকে আরও কিছু দিতে পারবে। সেই লক্ষ্যে হয়তো তারা নতুন দল করতে চাচ্ছে, করুক। দল গঠন করার অধিকার সবার রয়েছে। তারা নির্বাচন করতে চাইলে করবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজনীতি করা তো নাগরিক অধিকার। নাগরিকের মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতা আছে। মতাদর্শ চর্চার জায়গাটাই হলো রাজনীতি। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। যে কেউ দেশের আইন ও সংবিধান মেনে বৈধভাবে রাজনীতি করতে পারে। সেটা নাগরিক কমিটি হোক বা অন্য কেউ হোক। সেই অধিকার চর্চা করতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-তরুণরা যদি নতুন রাজনৈতিক দল করতে চান, নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চান, সেটাকে স্বাগত জানাই। তাদের প্রতি মানুষের যে মনোযোগটা আছে, সেটাকে সম্বল করে তারা নতুন দল করতে পারেন; নিশ্চয়ই তাদের সেই সুযোগ এবং অধিকার আছে। তবে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে তারা দল গঠনের উদ্যোগ নিলে শুরুতেই তাদের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দল করার অধিকার সবারই আছে। তারাও করতে পারে, করুক। বুধবার তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশে যে বক্তব্য রাখল, তাতে মনে হলো, সেই বক্তব্যে ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হলো। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো লাগবে কেন, তারা তো জনগণের ভালোবাসা দিয়েই দল করতে পারে। করুক, জনগণ যদি পছন্দ করে, তো হবে। কোনো রাজনৈতিক দল তো আর জনগণের ভালোবাসা ছাড়া হবে না। গায়ের জোরে, দাপট দেখিয়ে, অহংকার দেখিয়ে তো আর দল করতে পারবে না কেউ।

এদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সারা দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অপসারিত কাউন্সিলরদের ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দেওয়া এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা এ বিষয়টিকে ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়