শিরোনাম

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অসন্তোষ, ২০২৫ সালেই নির্বাচন চায় বিএনপি নেতারা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অসন্তোষ, ২০২৫ সালেই নির্বাচন চায় বিএনপি নেতারা

মহসিন কবির: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি শুরু থেকেই সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করে এলেও নির্বাচনের 'সুস্পষ্ট' সময়সীমা নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত অসন্তোষ জানাচ্ছেন দলটির নেতারা।

রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি'র রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদের মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন। কিন্তু, তাতে 'অস্পষ্টতার' অভিযোগ তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলটির মহাসচিব।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে সময়ের কথা বলেছেন, তা বিএনপির কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ দেবেন। সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে বলেন, মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথম অংশের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। 

বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডেমোক্রেটিক অর্ডারে (গণতান্ত্রিক ধারায়) দেশটাকে ফিরিয়ে নেয়া এক নাম্বার প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। ১৬ বছর ধরে মানুষ রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, দেশের ওপর তার মালিকানা ফিরে পাবার জন্য। যারা সেটা অনুধাবন করতে পারবেন না সেটা তাদের সমস্যা, আমাদের সমস্যা নয়।

বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, এখনো আশা করি আমাদের মতামত আমলে নিয়ে তারা সঠিকভাবে দেশটা পরিচালনা করবে এবং সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে।

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

শনিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সাথে পৃথক বৈঠক করেছে বিএনপি। 

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা বিভিন্ন দল ও জোট নেতাদের সাথে ধারাবাহিক এই বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি।

ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে বিকাল ৪টায় ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শুরু হয়। এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সাথে পৃথক বৈঠক করে দলটি। এতে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।

বৈঠকের পর নজরুল ইসলাম খান জানান, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। এসব জোট ও দলকে নিয়ে বিএনপি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করেছে। সেটার প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠকের পর কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে, জানান বিএনপির এই নেতা।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বৈঠকে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামী দিনের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছি। কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে এ বিষয়ে জোট নেতাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। সেখানে এসব জোট ও দলের নেতারা অভিন্ন সুরে জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত জোট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। চক্রান্তকারীরা যে কোনো উপায়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে আরও কৌশলী হতে হবে, আরও সংযমি হতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে কোনো বিভক্তি আনা যাবে না। এ সরকারকে নির্বাচন আয়োজনের সময় দিতে হবে। তবে সেটা যৌক্তিক হতে হবে। এটা নিয়ে সরকারের সাথে বিভেদ নয়, আলোচনার টেবিলকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।

বৈঠকে যুগপৎ কোনো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত না এলেও নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষত, কাউন্সিলরদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে খুব শিগগির কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১২ দলীয় জোট। ১২ দলীয় জোটের পক্ষে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।

বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন এর সমন্বয়ক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন দলের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়