মহসিন কবির: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোন আলামত নেই। নির্বাচনের কোন রোডম্যাপও ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাজনীতিবিদরা নির্বাচনরে রোডম্যাপ ষোষনা করার জন্য বারবার তাগাদা নিচ্ছেন। তারা বলেছেন অল্প কিছু সংস্কার করে নির্বাচন দিন। পুরো সংস্কার রাজনীতিবিদরা করবে। এ মুহূর্তে নির্বাচনের আলামত না থাকলেও নির্বাচনের একটি জরিপ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। জন সমর্থন নিয়ে বিএনপি বলছে বাস্তবতার সঙ্গে এ জরিপের কোন মিল নেই। জরিপে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো চালাতে পারে, মনে করেন ৭৯ শতাংশ।
দেশে এখন নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকি মানুষের ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ইসলামী দল ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের তৈরি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল হলে তাদের ভোট দেবেন ৪০ শতাংশ মানুষ (৩৯ শতাংশ পুরুষ, ৪৪ শতাংশ নারী)। ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ (৪৭ শতাংশ পুরুষ, ৩৬ শতাংশ নারী)। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ যমুনা টিভির টকশোতে বলেছেন, তাদের এ জরিপের কোন বিশ্বাস যোগ্যতা আছে বলে আমার কাছে মনে হয়না। এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। তার ভোট কি মাত্র ১৬ শতাংশ?। এ জ জরিপ মোটিভেটেড। আওয়ামী লেগের নির্যাতন ও দুঃ শাসনের পরও বিএনপি ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, যমুনা টিভির টকশোতে বলেছেন, জরিপগুলো যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে হয়, সেই জরিপ গুলোর প্রতিফলন কোন সময় হয়, কোন সময় হয়না। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের যে অনিহা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ৬৭ শতাংশ মানুষ বলেছে অর্থনৈতিক সংকট। কাজ কর্ম নেই, ব্যবস্থা বাণিজ্য নেই । তাহলে এইটা গুরুত্ব দিতে হবে। ৪০ শতাংশ মানুষ বলেছে তারা ভোট দিবেনা। এটা ডেইনজারাস। তার মানে আমি এই চার মাসে নির্বাচনে আবহাওয়া তৈরি করতে পারলাম না। এটা সরকারসহ আমাদের ব্যর্থতা। তবে রাজনীতিবিদদেও সংশোধন করতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। একটি বড় প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। তিনি নিজেও ভোট বঞ্চিত আছেন। তাই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, জানুয়ারির মধ্যে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেয়ার কথা আছে। রিপোর্ট পেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে তখন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, এ কারণে আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণ যাকে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে তিনিই জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি হবেন। ডামি, ভুয়া এমপি দিয়ে, দিনের ভোট রাতে করে, জোর করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নির্বাচন দিয়ে সংসদ গঠন করা যাবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, এ কারণে আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণ যাকে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে তিনিই জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি হবেন। ডামি, ভুয়া এমপি দিয়ে, দিনের ভোট রাতে করে, জোর করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নির্বাচন দিয়ে সংসদ গঠন করা যাবে না। স্বৈরাচারেরা যদি মনে করে আবার ক্ষমতায় এসে স্বৈরাচারী কায়েম করবে, তবে তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এ দেশের ছাত্র-জনতার শক্তির কাছে এমন কোনো শক্তি নেই, যাতে তারা আবার ফিরে আসতে পারে।
নির্বচন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা তো এখনো অফিসিয়ালি বসে এ বিষয়ে কোনো ফরমাল আলোচনা করিনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একসঙ্গে জাতীয় ও ইউপি দুটি নির্বাচন করা কঠিন হবে। একই দিনে দুটি নির্বাচন হলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আমার মনে হয়, দুটি নির্বাচন আলাদা তারিখে হলেই ম্যানেজমেন্টের জন্য সুবিধা হয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ১৬ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে অবাধ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা।
আপনার মতামত লিখুন :