শিরোনাম
◈ কমনওয়েলথ শুটিংয়ে স্বর্ণজয়ী সাদিয়া সুলতানা মারা গেছেন ◈ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অনেক নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে আছে: মাহমুদুর রহমান ◈ এক সময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন বৈরী: বাংলাদেশ-ভারত ◈ এবার বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা ১৩৫ কোটি রুপি চাইল ত্রিপুরা ◈ ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট ◈ ৭ হাজার বাংলাদেশি গ্রেফতার মালয়েশিয়ায় ◈ আগরতলায় হাইকমিশনে সহিংস হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ ◈ আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, মমতার বক্তব্য, ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারে তীব্র নিন্দা, বিক্ষোভের ডাক ◈ রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ফুটবল মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, শতাধিক সমর্থকের মৃত্যু ◈ হেফাজতে ইসলামের আমির ও বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ শীর্ষ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:৩৫ দুপুর
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগারে বাবা, গুরুতর অসুখ মায়ের, সেই সব দিনের কথা লিখলেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগমের গুরুতর একটি রোগ শনাক্ত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে। ওই বছর ১০ ডিসেম্বর তাঁর অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত দিন ছিল।

মির্জা ফখরুল যখন স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন (৮ ডিসেম্বর ২০২২ দিবাগত মধ্যরাতে) তাঁকে আটক করে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

বাবা কারাগারে, মায়ের গুরুতর রোগ শনাক্ত—সেই সব দিনের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা। তাঁর পোস্টে রয়েছে আক্ষেপের কথাও।

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী শামারুহ লিখেছেন, ‘ফোনটা আব্বু করেছিল ২০২২ এ, ৫/৬ ডিসেম্বর। আমাকে বলল আম্মুর ডায়াগনোসিসের (রোগ শনাক্ত) কথা। আব্বু বলল “চিন্তা করো না মা, ১০ তারিখে সার্জারি করা হচ্ছে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো (কেমোথেরাপি) শুরু।”

‘৮/৯ তারিখে ভোর ৩/৪টার দিকে আম্মু কল করল। আব্বুকে গভীর রাতে ডিবি পুলিশ এসে নিয়ে গেল। পাগলের মতো হয়ে গেলাম।’—লিখেছেন শামারুহ।

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ছিল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তার আগে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করে। ঢাকায় প্রবেশমুখে করা হয় তল্লাশি। গণহারে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের প্রথম চার দিনে ৩ হাজার ৮৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আর তথ্য দেওয়া হয়নি।  

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী শামারুহ লিখেছেন, ‘ফোনটা আব্বু করেছিল ২০২২ এ, ৫/৬ ডিসেম্বর। আমাকে বলল আম্মুর ডায়াগনোসিসের (রোগ শনাক্ত) কথা। আব্বু বলল “চিন্তা করো না মা, ১০ তারিখে সার্জারি করা হচ্ছে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো (কেমোথেরাপি) শুরু।”

৮ ডিসেম্বর ২০২২ দিবাগত মধ্যরাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি। পরে তাঁদের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওদিকে মির্জা ফখরুলের স্ত্রীর অস্ত্রোপচার দুদিন পরেই। শামারুহ মির্জা লিখেছেন, ‘ডিসেম্বর মাস। টিকিট (উড়োজাহাজ) পাচ্ছি না। যেটা পেলাম, আকাশচুম্বী দাম। আমার তো যেতে হবেই। চলে গেলাম ঢাকা। আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে ভীষণ কড়াকড়ি। সুযোগ পেলাম। আব্বুর চোখভরা পানি—“মা, তুমি দেখো তোমার মায়ের ব্যাপারটা।”’

শামারুহ জানান, তিনি পরে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচারের তাগিদ দেন। দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন তাঁর মা। তিনি (শামারুহ) লিখেছেন, ‘আম্মু বলল, “তোমার আব্বুকে ছাড়া [অস্ত্রোপচার] করব না”। অনেক বোঝালাম। রাজি হলো। সেদিন পুরো হাসপাতালে আমরা দুই বোন। ইউনুস ভাই। আর জাহিদ (এ জেড এম জাহিদ হোসেন) চাচা। জাহিদ চাচার কথা কি বলব! নিজের চাচার থেকেও বেশি।’

বাবা কারাগারে, মায়ের গুরুতর রোগ শনাক্ত—সেই সব দিনের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা। তাঁর পোস্টে রয়েছে আক্ষেপের কথাও।

শামারুহ জানান, অস্ত্রোপচারের পুরোটা সময় দুই বোনের সঙ্গে হাসপাতালে ছিলেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করেছেন। তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান কথা বলেছেন। অনেকেই এসেছেন।
নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমানকে একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে।দুদিন পরে মির্জা ফখরুল জামিন পান।

২০২৩ সালের মার্চে মির্জা ফখরুলসহ তাঁর পরিবারের সবাই সিঙ্গাপুরে যান। উদ্দেশ্য রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসা। সেখানে চিকিৎসকেরা দ্রুত কেমোথেরাপি শুরু করতে বলেন। তাঁরা দেশে ফেরেন।২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কেমো শেষ হয়। এরপর রেডিয়েশন থেরাপি। তার আগে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দেখা করতে বলেন। মির্জা ফখরুল স্ত্রীকে নিয়ে যান সিঙ্গাপুরে। শামারুহ সেখানে যান অস্ট্রেলিয়া থেকে।

সিঙ্গাপুরে মির্জা ফখরুলও চিকিৎসকের কাছে যান। সেই ঘটনা উল্লেখ করে শামারুহ লিখেছেন, ‘[আব্বুর] অসুখ তো আর কমে না। ডক্টর বলল, স্ট্রেস (মানসিক চাপ নেওয়া) ছাড়েন। তাইলে শরীর ঠিক হবে।’ অন্যদিকে চিকিৎসক রাহাত আরা বেগমকে এক বছর পরে আসার পরামর্শ দেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে মির্জা ফখরুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই ঘটনা উল্লেখ করে শামারুহ লেখেন, ‘আব্বুকে আবার জেলে নিয়ে গেল! আর ভাললাগে না। আমি দেশে গেলাম আবার। তারপরের ঘটনা নিয়ে আরেকটি চ্যাপটার (অধ্যায়) লেখা যাবে।’

শামারুহ আরও লিখেছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালান। সেপ্টেম্বরে তাঁর মাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য নির্ধারিত সময় ছিল। ১ সেপ্টেম্বর মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুরে যান। তিনিও (শামারুহ) সেখানে গিয়েছিলেন।

শামারুহ লিখেছেন, ‘শুনলাম, আমাদের অনলাইন পলিটি আমার মায়ের অসুখ নিয়ে নোংরামি করছে! আমি কল্পনাও করতে পারছি না, আমার মা আর আব্বু কি ভাবছেন!’

যোগাযোগ করা হলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা শামারুহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা বহু বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন।কারাগারে কাটিয়েছেন। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তাঁর এই ত্যাগ। কিন্তু পরিবারকে এ জন্য অনেক ভুগতে হয়েছে। তাঁরা সেটা মেনেও নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এমন একজন মানুষকে নিয়ে যখন অপপ্রচার হয়, তখন সেটা দেখে দুঃখ লাগে। এ জন্যই ফেসবুকে সেই সব দিনের কথা লিখেছেন তিনি।’ উৎস: প্রথম আলো।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়