মনিরুল ইসলাম : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রয়োজন।খুনী, লুটেরা, মাফিয়া এবং স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে হলে জনগনের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগন তাদের রাজনীতি ক্ষমতা প্রয়োগ করে গণহত্যাকারী খুনী, লুটেরা, পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে।
সোমবার দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন(ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালিযুক্ত প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্য্ক্রমে পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠা্ন অবশ্যই প্রয়োজন।
সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে… এই ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছে তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘ সংস্কার কার্য্ক্রম নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিএনপি কোনো বিরোধ নেই।সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে… যারা এই ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন।বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম চলমান প্রত্রুিয়া। এটি কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তারেক বলেন, ‘তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুনগত উত্তরণ ছাড়া পূঁথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্য্কর।
তিনি বলেন, সংস্কার কার্য্ক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগনের নিত্যদিনের দুদর্শা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার, জনগনের নিত্য প্রয়োজনীয় সরবারহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্য্ক্রমের কাংখিত সুফল পাওয়া যাবে না।
‘গণতন্ত্রকামীদের সর্তক থাকতে হবে’
তারেক বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগনের আকাংখা পুরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলামান যাত্রা বাধাগ্রস্থ করতে কিন্তু এরই ভেতরে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজকের সভায় অনেক বক্তা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।
বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র নানা কৌশলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সবাই যদি আমরা সর্তক থাকি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপরে গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে দরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শহীদদের আকাংখা একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গেহ পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসরা যাতে রাজনীতিকে পূনর্বাসিত হতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহন করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য। নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা একসাথে যায় না’
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের বাংলাদেশ বর্তমান প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এক সাথে যায় না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু।
তিনি বলেন, অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ। এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে নিশ্চিতভাবে বাক স্বাধীনতা থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিলো। পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বিএনপি। বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন।
তিনি আরও আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি সেখানে সাগর-রুনির বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।
সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলো। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকবে, থাকতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠান হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীসহ অভ্যুত্থানে নিহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের বিদাহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
ফ্যাসিবাদী আমলে চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিনের জামায়াতের আমীর নরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বারেক হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সহসভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির আসাদুজ্জামান রিপন, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, ইথুন বাবু, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :