বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এখন দেখি ঢেঁকি নরকে গেলও ধান ভাঙে। ছাত্র-জনতাকে প্রতিহত করতে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে গুলি করে হত্যার লাইন্সেস দিয়েছিলেন। আর তিনি (শেখ হাসিনা) হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মায়াকান্নার অভিনয় করতেন। ছাত্রলীগ যুবলীগ শ্রমিকলীগসহ সবাইকে ফেলে দিয়ে গত ৫ আগস্ট তিনি একাই পালিয়ে গেলেন। এখন আশ্রিত দেশে বসে মাঝে মাঝে আওয়াজ দেন। কিন্তু সাড়া পান না। মাঝে মাঝে গুজবও ছড়ান উনি (শেখ হাসিনা)। তিনি মিথ্যার ধান ভাঙছেন।’
শুক্রবার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী রিকশা, ভ্যান ও অটোচালক দলের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশের মানুষকে কষ্টে রেখে উপদেষ্টাদের যা ইচ্ছা তাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না। উপদেষ্টারা চাকরিজীবীর মতো কাজ করছেন। যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে ছিলেন না- এমন ঘাপটি মেরে চুপ থাকা লোকদের উপদেষ্টা বানানো হয়েছে। শুনি তারা নাকি সুশীল সমাজের লোক। বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী লোকজন, কিন্তু তাদের কাজে বিপ্লবের গতিশীলতা নেই।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আগের মতোই আছে। জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। এখনো যদি আলুর কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা থাকে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে থাকবে। কয়েকটি কোম্পানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এই সিন্ডিকেটকে কেন ধরছেন না? ডিমের দাম কেন আকাশচুম্বী থাকবে। শ্রমিকরা যদি না খেতে পারে তাহলে এই রক্তদান ব্যর্থ হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, ‘একতরফাভাবে শেয়ারবাজার আত্মসাৎ, ব্যাংক লুটপাট করে টাকা পাচার করেছে সালমান এফ রহমান। শুনেছি কারাগারে তিনি খুব বহাল তবিয়তে আছেন। সেখানে সে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। গামেন্টস সেক্টরসহ সব জায়গা অস্থিতিশীল ও পথরোধ করার পেছনে সালমান এফ রহমানের ভূমিকা রয়েছে। কারণ, ৯০ ভাগ গার্মেন্টস মালিক আওয়ামী লীগ, তাদের সঙ্গে তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তিনি লুটেপুটে টাকা পাচার করে দেশকে সর্বশান্ত করে দিয়েছেন। এই টাকাগুলো কই? ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘ব্যাংকে নির্বাচন করে শ্রমিক-কর্মচারীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ দেখলাম, বাংলাদেশে ব্যাংকে অফিসার কল্যাণ সমিতির নির্বাচন হয়েছে। সেখানে আওয়ামীপন্থিদের জয়লাভ হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে কোনো রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারা এরা? দেশ থেকে টাকা পাচার করার পেছনে এই ঘাপটি মেরে থাকা লোকজনই জড়িত ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা জানে বিশ্বের কোন কোন ব্যাংকে টাকা আছে। সেই টাকা নিয়ে তিনি মজাই আছেন, সেই টাকা তিনি ভোগ করবেন। সেই কারণেই তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি লুট করার সুযোগ করে দিয়েছেন। গণমাধমে দেখলাম, ৩৪৩ জনের ব্যাংকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এরা সবাই শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন। গত ১৫ বছরে আড়ালে থাকা কিছু কিছু খবর এখন মিডিয়া বের হচ্ছে। কারণ, মিডিয়া আগে স্বাধীন ছিল না।’
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আমি এবং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ৪-৫ দিন আগে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম-দেখলাম, এখনো অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কারো পিঠের চামড়া খুলে গেছে, কারো পা নেই, কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছেন। এদের দায়িত্ব কি রাষ্ট্র নেবে না? এদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :