মহসিন কবির: ভোটের রোডম্যাপের দাবি জোরালো করতে ফের মাঠে নামছে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী মার্চ-এপ্রিলে সংসদ নির্বাচন দাবি করে রাজপথে সোচ্চার হতে পারে দলগুলো। ইতোমধ্যে করণীয় ঠিক করে ফেলেছেন তারা। একই দাবিতে ডিসেম্বর থেকেই মাঠে নামছে বিএনপি।
গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধে দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করারও চিন্তা করছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। শিগগির সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভাগীয় সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে দলটি।
বিএনপির নেতারা বলছেন ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হলে দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন করা প্রয়োজন। তাই নির্বাচনের দাবিতে মাঠে থাকা ছাড়া বিকল্প দেখছে না বিএনপি।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বারবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি- জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার উদ্যোগ সফল হতে পারে না। এ ধরনের অংশগ্রহণ কেবল নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা- এই দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই এবার দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তা। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও বড় শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় জমায়েত করবে দলটি।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেয়াদের তিন মাসেও নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো দরকার। যতদিন পর্যন্ত এই রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা’ রয়েছে, সেটা কাটবে না। তারা বলছেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে সরকারের সব কার্যক্রমের ফোকাস হওয়া উচিত নির্বাচন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। সরকারের উচিত হবে, রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা কাটিয়ে তোলা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সব সংস্কার কার্যক্রম সমাপ্ত করতে গেলে এই সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে হবে, সেটা তো সম্ভব নয়। এমনটা হলে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকার নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার কার্যক্রম করতে হবে। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া উচিত।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, সরকারের উচিত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এর জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও প্রশাসন তৈরি করতে হবে। এটা করতে দীর্ঘ সময় লাগার কথা নয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরাও নির্বাচন চাই। গত ১৫ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সামনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আমরা সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছি, কিন্তু তাই বলে নির্বাচন বিলম্বিত হোক, তা চাই না।’
আপনার মতামত লিখুন :