আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। একইভাবে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। ৫ আগস্টের ঘটনাটিও তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ ঘটেছে বলে মনে করেন।
রবিবার (৩ নভেম্বর) লন্ডনভিত্তিক 'চ্যানেল এস' টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাছান মাহমুদ এসব মন্তব্য করেন। তিনি জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, কোটা সংস্কার আন্দোলন, আয়নাঘরসহ নানা ইস্যুতে তার দল প্রস্তুত, প্রয়োজন হলে বিএনপির সঙ্গে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করতে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একযোগ কাজ করার ইচ্ছা
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, "বিএনপি বর্তমানে যেভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে, আমরা তাদের সঙ্গে একমত। প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করব।" তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এক-এগারোর সময়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একযোগে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করেছিল।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বরাতে দাবি করা হচ্ছে ৩,২২৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছে।" তিনি নিহতদের নাম প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বলেন, "৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক
এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। তবে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।" তিনি আরও বলেন, "আমরা জানি, আওয়ামী লীগ কখনো ফুরিয়ে যাবে না, কারণ আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী ও কোটি কোটি সমর্থক আছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
কোটা আন্দোলনকে এতদূর যেতে দেওয়া ভুল ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতের হাতে ছাড়ার আগে যদি অন্যভাবে সমাধান করা হতো, তাহলে ভালো হতো।" ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল, "রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায় না, তবে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।
আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ড. হাছান মাহমুদ রাষ্ট্র পরিচালনায় কিছু ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, আমরা সেই ভুলগুলো স্বীকার করি এবং আশা করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই হতাশা কাটিয়ে দেশ আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসবে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ অতীতে জনগণের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে এবং নেত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু সম্পর্কে সচেতন আছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান
অবশেষে দলীয় নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এই আঁধার কেটে যাবে, শীঘ্রই দেশে একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবার সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং তার মনোবল পুরোপুরি চাঙ্গা রয়েছে।
এবং তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, খুব শীঘ্রই দেশের পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।
আপনার মতামত লিখুন :