শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:০৩ বিকাল
আপডেট : ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাঁদা চেয়ে ফোনালাপের ভিডিও ভাইরাল, ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার (অডিও)

ডেস্ক রিপোর্ট : শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফারুক হোসেনকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে ফোনালাপের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার ঘটনায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।    

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য ফারুক হোসেনকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে কোনরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে করা একটি মামলা থেকে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হানকে বাঁচানোর কথা বলে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠে ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত মোবাইলফোনে সেই কথোপকথনের ৯ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়। 


 ওই কল রেকর্ডের ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডে ছাত্রদল নেতা ফারুক বলেন, ‘আমি তোমার জন্য কী করতে পারি বল।’ তখন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আপনি বললেন, সৈকত, তোমার নামে যেন মামলা-টামলা না হয়, সে বিষয়ে আমি কথা বলে আসলাম। আপনার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় কিন্তু আপনি আমার শিক্ষক।’ এরপর ফারুক বলেন, ‘আমি তোমার শিক্ষকই ছিলাম ঠিক আছে। সে জন্য আমিই তোমাকে কল করেছিলাম। আমি এটা ওদের (মামলার বাদীদের) বলে রাখছিলাম, এটা মিথ্যা; যে ওর (সৈকতের) নাম দেওয়া যাবে না।’

একপর্যায়ে ছাত্রদল নেতা ফারুক বলেন, ‘এরপর তোমার সঙ্গে আমার কী কথা হয়েছিল বল।’ জবাবে সৈকত বলেন, ‘ভাই, আপনি বললেন এখন আমি ক্যাম্পাসে ভাই-ব্রাদার নিয়ে বসতেছি, তো তুমি বুঝই বিষয়টা, একটু দেখো। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে ভাই, আমি বাবার সঙ্গে কথা বলছি।’ 

ফারুক প্রতি উত্তরে বলেন, ‘তুমি তখন আরও একটা কথা বলেছিলা যে, বিকাল ৩টার মধ্যে আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’ সৈকত বলেন, ‘আমি এটা বলেছিলাম। ভাই আমি কয়েক জায়গায় বলেছি, বাবাকেও বলেছি আমায় দুই হাজার টাকা দাও। তো বাবা বলল এই মুহূর্তে আমার কাছে টাকা নাই।’ 

এরপর ফারুক ছাত্রলীগ নেতাকে বলেন, ‘আমি কি তোমার কাছে চাঁদা চেয়েছি? ছাত্রলীগ নেতা বলেন, চাঁদা তো না ভাই, আপনি বললেন যে, ছোট ভাই একটু দেখো বিষয়টা। আপনি পরে বললেন, তোমার বাবার সঙ্গে কথা হবে, তোমার বাবাকে টাকাপয়সা রেডি করতে বল।’

কল রেকর্ডিংয়ের শেষের দিকে ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘এখন আর কিছু বলতে চাও সৈকত? জবাবে সৈকত বলেন, আপনি আমাকে হয়তো হেল্প করেছেন, তো সে জায়গা থেকে আমার মনে হলো আপাতত দুই হাজার টাকা নেন আপনি। দরকার হলে পরে আরও কিছু দেওয়া যাবে বলে ভেবে রেখেছি। এখনই আপনাকে ১০-২০ হাজার টাকা দিতে হবে এ রকম কিছু ভাবিনি।’ 

ফারুখ বলেন, ‘শোন আমি তোমাকে এ রকমটাও বলিনি।’ সৈকত বলেন, ‘ভাই আমি আপনাকে বললাম কত (টাকা) কী? আপনি শুধু বললেন যে সৈকত তুমি একটু দেখো বিষয়টা।’

ফারুক বলেন, ‘তুমি আবার আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবা না তো? আর আমি কি তোমার কাছে টাকা দাবি করছি কি না—এটা বল?’ সৈকত বলেন, ‘দাবি বলতে আপনি ছোট ভাই কিছু দিও আমায়। কিন্তু ভাই পরবর্তীতে যে আপনি বললেন, আমি ভিখারি না কি যে তুমি আমাকে দুই হাজার টাকা দিবা।’ তখন ফারুক বলেন, ‘যাই হোক, এ বিষয়ে আর কথা বলব না তোমার সঙ্গে। তোমার যা মনে হয়, কালকে ৩টার মধ্যে তুমি টাকা জোগাড় করো, ফোন রাখলাম।’

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মাদ আহসান হাবিব বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ১০১ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। গত ৮ অক্টোবর দুপুরে নগরের মতিহার থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ২২০ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৭ অক্টোবর নিজ বিভাগে পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেফতার হন ছাত্রলীগ নেতা সৈকত রায়হান। তারপর থেকে তিনি জেলে আছেন।

সুত্র : যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়