মনিরুল ইসলাম।। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কটা একাধিকবার উস্কে দিয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এই বিতর্কিত ইস্যুকে এবার সামনে আনলেন একটি জাতীয় দৈনিক। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আমার মা কোথাও লিখিত ভাবে পদত্যাগ করেননি। এছাড়া দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা এখনও পর্যন্ত নিজে এ নিয়ে এখনও কিছু বলেননি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে এবার বোমা ফাটাল ‘মানবজমিন’ পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট। পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন 'জনতার চোখ' এ রাষ্ট্রপতির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
যেখানে তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকার বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগপত্র’ তন্ন-তন্ন করে খুঁজে পাননি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির জবাব ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনও দালিলিক প্রমাণ নেই। হয়তো জমা দেওয়ার সময় পাননি।
কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি বলেন, '৫ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।'
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, 'চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই।'
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এক ভিডিও বার্তায় হাসনাত বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
হাসনাত বলেন, আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন আবারও বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা স্বৈরাচারের পতিত আত্মারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মতো মানুষ যদি বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ডকুমেন্টস তিনি রাখেননি, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার? তার কোথায় থাকা দরকার, তা ছাত্রসমাজ নির্ধারণ করবে। সোমবার (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি নিজে গ্রহণ করেছেন এটা নিজেই বলেছেন। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট রাষ্ট্রপতি আবারও একটি ‘কু’ করার চক্রান্ত করছে। জনগণ এখনও সচেতন এবং রাস্তায় আছে। কোনো অবৈধ চেষ্টা করলে জনগণ তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
আপনার মতামত লিখুন :