শিরোনাম
◈ বেনাপোলে জোড়া খুনে ৪ ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন ◈ শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ‘ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই, ভোটের কোনো নিশানা কিন্তু দেখি না’ (ভিডিও) ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ সম্ভাব্য যেসব উপকূলে আঘাত হানতে পারে ◈ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগের আধিপত্য রক্ষার চেষ্টা, দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিএনপি  ◈ জাতীয় ক্রিকেট, খুলনার সৌম্য ও বিজয় বর্থ, মেহেরবের ৬ উইকেটে রাজশাহীর বড় লিড ◈ কানাডা-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল, ফের উত্তেজনা ◈ বাফুফে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন রুহুল আমিন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহ সভাপতি ইমরুল হাসান ◈ সিরিজের প্রথম টেস্টে সোমবার বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:৩৬ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দল গোছাতে আওয়ামী লীগের নেতারা তৎপর

প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না আওয়ামীলীগের নেতারা। পলাতক থেকে তারা তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্ন সারির নেতা কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়ে দেখতে চাচ্ছেন প্রতিক্রিয়া কি দাঁড়ায়। মানুষের সমর্থন মেলে কি না। এরপর তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে আগাতে চাইছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে বলে আপাতত এভাবেই তারা আগাতে চাইছেন। দলের প্রধান শেখ হাসিনা দেশছাড়া হলেও কোনো এক সুবিধাজনক সময়ে তিনি চট করে দেশে ঢুকে পড়তে পারেন। এমন আভাস দিয়েছেন তিনি নিজেই। শীর্ষ প্রায় সব নেতাই পলাতক। কেউ বা জেলে। এদের মধ্যে শতাধিক নেতা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং নিজেদের সংগঠিত করছেন। টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দল এখন বিধ্বস্ত। কিন্তু কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতা মনে করছেন অতীতের মতই তারা ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। 

অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করারও দাবি তোলা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন স্থান থেকে মাঝেমধ্যে দলের বিবৃতি এলেও প্রকাশ্য কর্মসূচি বলতে গেলে নাই-ই। মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ এমনকি পরিচিত নেতাদের কাউকেই প্রকাশ্যে কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। অন্য দলগুলো যেখানে নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে কিভাবে সামনে এসে দাঁড়াবে সেই চ্যালেঞ্জে আছে। সেদিক থেকে সংস্কারের পথ পরিক্রমা যত দীর্ঘ হবে আওয়ামী লীগ নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে মাঠে সক্রিয় এবং নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা পাবে। 

সরকার বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টের মতো আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গণহত্যায় অভিযুক্ত করে দুদিন আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ অনেক নেতার নামে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। রাজনীতির মাঠে দলীয় অবস্থা, দলীয় চেতনা, কৌশলগত পন্থা সব কিছুতেই একটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঠে লড়ার সাথে লড়তে হবে আদালতেও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হামলা, মামলা ও আক্রমণের শিকার হওয়ার উৎকণ্ঠা। দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, ১৯৭৫-পরবর্তী আওয়ামী লীগ এ রকম বিপাকে আর কখনো পড়েনি। আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা মনে করেন এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন হলেও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে উৎখাতের চেষ্টা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে।

রাজনীতির মাঠ নয়; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজনীতির বাইরে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না। কিছু কার্যক্রম নামে-বেনামে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি আর প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচিতে নেই দলটি। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি আসেনি। তিনি কোথায় আছেন, তাও জানে না কেউ। তাই প্রকাশ্যে নেমে আসার ঝুঁকি আওয়ামী লীগের নেতারা নিবেন কি না সেটি বিশাল এক প্রশ্ন। 

শেখ হাসিনার নামে ‘জুলাই-আগস্ট’ হত্যাকে কেন্দ্র করে মোট ২১৭টি হত্যা মামলা দায়েরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদধারী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৫৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সময়ে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, পুলিশ ও সেনবাহিনীর কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক পদধারী ৩৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী,অনেক এমপিও রয়েছেন। আদালতে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক কার্যালয়টি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। সেখানে ভবঘুরেরা নিয়মিত যাতায়াত করে। প্রায় একই রকম অবস্থায় পরিণত হয়েছে ধানমণ্ডিতে অবস্থিত দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়। বেদখল হয়ে আছে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে মূল দলের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রাথমিকভাবে ঢাকার মূল তিন কার্যালয় নিজেদের দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, এরই মধ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সংস্কারের লক্ষ্যে এবং দলীয় কার্যালয়ের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। গত বুধবার এই আবেদন করা হয়।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। পল্টন থানার এক মামলায় কেন্দ্রীয় কমিটির সবাইকে আসামি করা হয়েছে। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা নেই। পুড়ে যাওয়া কার্যালয়গুলো মেরামত করতে দেওয়া হচ্ছে না। থানায় গিয়ে মামলা করা তো অনেক দূরের কথা, একটা জিডি পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। এরপরেও আওয়ামী লীগ নেতারা মুখ বুঝে ভবিষ্যতের আশায় আছেন সুবিধাজনক সময়ের জন্যে। দলীয় কৌশল অনুযায়ী, আত্মগোপনে থাকা নেতারা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসবেন। দেশের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছেন। তৃণমূল থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ খোঁজা হচ্ছে। হামলার ঝুঁকি নিয়েই কিছু জায়গায় স্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন।

এ পরিস্থিতির বিপরীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকারের পর্যালোচনায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দলনিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবে। মাহফুজ আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার দ্রুত একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিষয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘যাঁরা গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়ে তাঁরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট—তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে। কিভাবে বাধা বাস্তবায়িত হবে, সেটা দেখতে পাবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে তখন বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।’

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সব ধরনের স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাহফুজ আলম বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজমে নীরব সমর্থন দিয়ে গেছে। তারা অবৈধ নির্বাচনের বৈধতা দিয়েছে। এ জন্য আমরা জাতীয় পার্টিকে আপাতত সংলাপে রাখছি না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়