মোহসীন কবির : শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি আমলা, পুলিশসহ অনেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আছেন। কারণ অনেকে পাঠিয়ে বিদেশে পাড়ি জামিয়ছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে আছেন। যারা বিদেশে গেছেন তাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সবশেষ গ্রেপ্তার হন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজ্জাক রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর গভীর রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করা হয় আরেক শীর্ষ নেতা ফারুক খানকে।
এমন অবস্থায় গত দুই সপ্তাহে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের বিবৃতি দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। কাউকে কাউকে আবার গণমাধ্যমের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে বা অনলাইনে সাক্ষাৎকারও দিতে দেখা গেছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শুরুর দিকেই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের মধ্যে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এরপর গত দুই মাসে আটক হয়েছেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ।
এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, হাজী মো: সেলিম।
গ্রেপ্তার হয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই হত্যার মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর।
ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই না আসামি করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ ও আমলাদের বিরুদ্ধেও।
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক শীর্ষ ছয়জন আমলা ও অন্তত ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ।
আমলাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।
গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের সাবেক ১৭ জন কর্মকর্তাকে।
জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক এমপি, দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হচ্ছে। এসব মামলায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সচিব, পুলিশের সাবেক চার আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকেও দিল্লিতে দেখা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরো কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলন চলার সময় আওয়ামী লীগ সরকারের যে দু’জনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তারা হলেন– তৎকালীন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে হাছান মাহমুদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অবস্থান নিয়েও নানা ধরনের তথ্য দেখা যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার হয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
গত কয়েক দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি দিচ্ছেন নাসিম। তবে তিনি এই বিবৃতি দেশে বসে নাকি দেশের বাইরে থেকে দিচ্ছেন সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র : বিবিসি ও জাতীয় গণমাধ্যম
আপনার মতামত লিখুন :