ডেস্ক রিপোর্ট : আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান থাকার আহবান জানিয়ে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘তারা ইসলামী চাদর গায়ে দিয়ে নতুন রূপে আবির্ভুত হয়েছে। হাতে নাতে ধরা পড়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতারা বিশেষ একটি ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা এখন একটি বিশেষ পতাকা বহন করে বাংলাদেশকে দুনিয়ার সামনে একটি জঙ্গি, চরমপন্থী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবে জাতি সম্মিলতিভাবে তাদের এ অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিবে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ট্যাঙ্কেরপাড়স্থ জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে এ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশ দাদাবাবুদের নয়। এ দেশ রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্রের নয়। বাংলাদেশকে কারো হাতে আমরা ইজারা দিবো না। প্রয়োজনে আরো রক্ত দিবো।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুবরাক হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক আমীর কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, সৈয়দ গোলাম সারোয়ার, সাবেক নায়েবে আমীর কাজী মো. ইয়াকুব আলী, ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা সদর ছাড়াও প্রত্যেক উপজেলার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন।
এ সময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজ গড়তে চাই যে সমাজের আদালত প্রাঙ্গনে একজন বিচার প্রার্থীকে বিভিন্ন ধরণের হয়রানির শিকার হতে হবে না। কোন বিচারক তাঁর আসনে বসে আল্লাহকে ছাড়া কোনো রাষ্ট্র শক্তিকে পরোয়া করবেন না। রাষ্ট্রের আইন ও বিবেক অনুযায়ি বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। আমরা শুনতে চাই না বিচারকরা আসনে বসে ঘুষ খায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই যে দেশ অন্য কোনো দেশের অধীনতা মেনে নিবে না। পৃথিবীর অন্য ১০টা দেশ যেমন বিশে^র বুকে মাতা উঁচু করে দাঁড়ায় বাংলাদেশও তার শির উচু করে দাঁড়াবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে কিন্তু কোনো প্রভু আমরা মেনে নিবো না। কেউ প্রভুত্ব করতে এলে জাতি সঠিক জবাব দিবে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্প বিষয়ে অভিযোগ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ প্রকল্প ছিলো জনগণের চোখে ধুলা দেওয়ার মতো। সস্তা জনপ্রিয়তার সামিল। যারা এটা করেছেন তারা বলতেন এসব কাজ দিয়ে কর্মীদেরকে মূল্যায়ন করি। এ প্রকল্পে রডের বদলে বাঁশ ছিলো বাংলাদেশের আধুনিক প্রযুক্তি আবিষ্কার।’
জামায়াত আমীর তার বক্তব্যে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দুষ্ট সিন্ডিকেট পেঁয়াজ ৩০০ টাকা করেছিলো। এই দুষ্ট সিন্ডিকেট বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমস্ত চেলাচামুারা ছিলো। আমাদের সন্তানরা বলছে ৫ আগস্ট আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এখনো সেই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এখনো সেই সিন্ডিকেট জাতির ঘাড়ে বসে আছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে তছনছ করে দিতে হবে।’
নিজ দলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় নির্যাতিত দলের নাম জামায়াতে ইসলামী। অবস্থার পরিবর্তনের পর সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে বলেছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশের বাংলাদেশের কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। কারো কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করেনি, রাস্তা-ফুটপাত দখল করেনি। কেউ এটা বলতে পারবে না। এটাই দেশপ্রেমিকের লক্ষণ।’
তিনি বলেন, ‘প্রহসনের বিচার দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে খুন করা হয়েছে, ফাঁসির কাষ্টে ঝুলানো হয়েছে। জেলে রেখে ধুঁকে ধুঁকে মারা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আবিষ্কার আয়না ঘর। অনেকের খবর নেই। তার মানে তারা মারা গেছেন। তারা সমস্ত বাংলাদেশে আমাদের অফিস সিলগালা করে রাখে। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জনগণকে ধোঁকা দিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিশোধ জামায়াত নিবে না। তবে আমরা হত্যাকারিদের বিচার চাই। হত্যাকারিদের শাস্তি পেতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হিংসার রাজনীতি করবো না। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলে পাঁচ লক্ষকে হত্যা করা হবে। কিন্তু গণঅভুত্থাণের পর পাঁচজনকেও হত্যা করা হয়নি। মব জাস্টিসের নামে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর প্রতিবাদ আমরা করেছি। তবে হত্যাকারিরাও আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা ছাত্রলীগ। ভাত খাইয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় জড়িত ছয়জনের পাঁচজন ছাত্রলীগ। খুনের নেশা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারেনি। জনগণকে তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। তাদের অন্তরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে। তারা অঘটন ঘটাতে চায়। তারা আনসার কাণ্ড, বয়স কাণ্ড, বিচারিক ক্যু করতে চেয়েছে। জনগণ্য ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই সরকারের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের চিহ্নিত ধূসর তারা যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না থাকে। সরকারকে তারা ব্যর্থ করে দিবে। জনগণের স্বপ্নকে তারা নষ্ট করে দিবে।’
গণঅভ্যুত্থাণে শহীদ প্রত্যেক পরিবারে একটি করে চাকরি দেওয়ার আহবান জানান তিনি। সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আহতদেরকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ি চাকরি দিতে হবে। এটা রাষ্ট্রের পবিত্র কর্তব্য তাদেরকে সম্মান দেখানো। এরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। এরা দুর্নীতি করবে না, ঘুষ খাবে না। তারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক।’
জামায়াত আমীর আরো বলেন, ‘কারো ক্ষমতা চিরদিনের জন্য স্থায়ী হয় না। এটা আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। আমাদেরকে যেন আর অত্যাচারির কোনো শাসন দেখতে না হয়। যারাই ক্ষমতা আসেন তাদের মাঝে ইনসাফ দেখতে চাই। আমাদের ওপর জাতি যদি তাদের আমানত রাখেন তাহলে নিজেদের ওয়াদা রক্ষাকারি হিসেবে প্রমাণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। এরপরও ভুল করলে জাতিকে বলবো আমাদের মেরুদণ্ড সোজা করে দেন।’
আপনার মতামত লিখুন :