শিরোনাম
◈ জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান : শামসুজ্জামান দুদু ◈ চলতি দশকে আর্জেন্টিনা ম্যাচ জয়ে শীর্ষে, সেরা বিশে নেই ব্রাজিল, ফ্রান্স ও জার্মানি ◈ বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনে নির্দেশনা ◈ সাবের হোসেনকে বিদেশিদের চাপে মুক্তি দিয়েছে সরকার: নুর (ভিডিও) ◈ দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করলেন  প্রধান উপদেষ্টা ◈ এবার কারা ঘোষণা করবেন এইচএসসির ফলাফল ◈ ইরান  শত্রু পক্ষকে ঘায়েলে যে কৌশলে আগাচ্ছে ◈ ঢাকায় চাকরির সুযোগ আন্তর্জাতিক সংস্থায় , থাকছে নানা সুবিধা ◈ সাবেক দুই মন্ত্রী রিজার্ভ চুরির মূল হোতাদের বাদ দিতে সিআইডিকে ধমক দিয়েছিলেন (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের অর্ডার সরে যাচ্ছে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে

প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:১৩ দুপুর
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোথায় আছেন ওবায়দুল কাদের, যা জানা গেল

দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায়? তিনি দেশে, নাকি বিদেশে? এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যসহ নানা আলোচনা রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে নিজের সাংগঠনিক অবস্থান হারিয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলেও তাঁর নামে দলের কোনো বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েক সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ মাঝারি পর্যায়ের অনেক নেতা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে গেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নেতাই ভারতে রয়েছেন। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন। তাঁর অবস্থান কোথায়, সেটি এখনও অস্পষ্ট। তবে ভারতে অবস্থানকারী অনেকেই বলছেন, কাদের সে দেশে যাননি।

কেউ কেউ বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কারও দাবি, সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে। আবার কারও ধারণা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি। তিনি দেশেই আছেন। সীমান্তবর্তী একটি জেলায় অবস্থান করছেন। সুযোগ পেলেই যে কোনো মুহূর্তে ভারতে যাবেন। 

সব মিলিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে বড় ধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মী দলের সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতারাও ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো– আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই নানা ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে ব্যক্তি ওবায়দুল কাদেরের দিকে আঙুল তোলেন। তাদের দাবি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় দায় তাঁর ঘাড়ে চাপে। সংগঠনে তিনি নিজেকে ‘একক কর্তৃত্বের’ জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ওবায়দুল কাদের আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
ভারতে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের দেখা হলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকজন নেতা সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর রোষানলের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে ভারতে নাজেহাল হয়েছেন প্রভাবশালী একজন সাবেক মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের বেলায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এই নেতাদের দৃষ্টিতে, ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে থাকা অন্তত সাতজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি কমপক্ষে তিনজন সাবেক মন্ত্রী ও একজন সাবেক উপদেষ্টার কারণে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নেতাকর্মীর দূরত্ব বেড়েছিল। তাদের কারণে কেন্দ্রীয় নেতা অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ওই সময়কার বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মতামত দিতে পারতেন না।

ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্রয় পাওয়া নেতাদের দুর্ব্যবহারও ছিল সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। তারা সুযোগ পেলে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য, সাবেক সিনিয়র এমপির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। এ কারণে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ অনেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিতর্কিত নেতাদের কারণে ওবায়দুল কাদের নিজেও অনেক সময় বিতর্কিত হয়েছেন বলে মনে করছেন আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপি কয়েকজন। তাদের দৃষ্টিতে, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি উপজেলা, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের বেলায় অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতেন ওই বিতর্কিত নেতারা। এমনকি কমিটি বাণিজ্য থেকে শুরু করে পদ-পদবি বণ্টনের নিয়ন্ত্রণেও থাকতেন তারা।

ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতার। তিনি পারতপক্ষে কারও ফোন রিসিভ করতেন না। ফলে নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছিল। আবার কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা সাংগঠনিক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হতেন। বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদেরের ‘খেলা হবে’ ঘোষণা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীও রীতিমতো হাস্যরস করতেন। 

ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিয়মিত নেতিবাচক ট্রল করা হতো। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। দামি ঘড়ি ও কোর্ট-টাই ব্যবহারে অভ্যস্ত সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সরকার পতনের শেষের দিকে বেশ বিতর্কিত হন। ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবিলায় ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

ওই সময়েই ওবায়দুল কাদের দলের ভেতরে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েন বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তাদের ভাষায়, বলতে গেলে তখন থেকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারান দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলোচনায় থাকতেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে জড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করার পর তাঁর প্রায় প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনের কার্যক্রম থেমে যায়। 

সরকার পতনের পর ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান হারিয়েছেন– এমনটাই বলছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, সাধারণ সম্পাদকই হলেন দলের মুখপাত্র। তিনিই সাংগঠনিক বিবৃতি দেবেন। এটাই স্বাভাবিক। সেটাই হচ্ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর ওই পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নামে বিবৃতি যাচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়