ডেস্ক রিপোর্ট : সাত বছর ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে ছিলেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। পুরো দলের কাণ্ডারি তিনি। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দলের আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন তার ম্যাজিক নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সরকারকে সহযোগিতা করতে নানামুখী কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিজের নেতৃত্ব ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসা এই নেতা নীরবে অনেকটা গোপনে আরও কিছু কাজ করে আসছেন। যা কখনো সামনে আসেনি। তিনি নিজেও এসব কাজ প্রকাশ্যে আনতে চান না। দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে সাধারণ অসহায় মানুষের জন্য নানা ধরনের সেবা কার্যক্রমে যুক্ত তিনি। বিদেশে অবস্থান করলেও এসব কর্মকাণ্ড তিনি নিজেই সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তদারকি করেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আত্মতৃপ্তির জন্যই তিনি এসব কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায় অনেক পরিবারের পুরো দায়িত্ব রয়েছে তারেক রহমানের কাঁধে। তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় মাদ্রাসা, হাসপাতাল। নিজ উদ্যোগেই এগুলোর খরচ বহন করছেন তিনি। বিএনপি স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকে জানেন না তারেক রহমান সরাসরি এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। বিএনপি’র পাশাপাশি এসব কর্মকাণ্ড জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং আমরা বিএনপি পরিবারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথমে বৃদ্ধ এবং এতিম এমন ২৫টি পরিবারের দায়িত্ব নেন তারেক রহমান। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে।
সাহায্যপ্রাপ্ত একটি পরিবার বগুড়ার গাবতলীতে থাকে। পরিবারের কর্তা পেশায় গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তিনি হার্টঅ্যাটাকে মারা যান এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে। বিষয়টি জানার পর তারেক রহমান নিজেই তাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। এমন প্রায় দেড়শ’র মতো মানুষের দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান। দায়িত্ব নেয়া শিক্ষার্থীদের ১৪ জনের মতো চিকিৎসক হয়ে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ছেন আরও কয়েকজন। সেনাবাহিনীতে দু’জন চাকরি পেয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে এই দু’জনের লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন করেছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান দায়িত্ব নিয়েছিলেন এমন সাত থেকে আটজন প্রকৌশলী হয়েছেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান এসব শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলেও শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সেভাবে জানতে পারেন না।
বগুড়ার গাবতলী থানায় লাঠিগঞ্জের তিন মাথার মোড়ে এতিমদের জন্য একটি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। এই মাদ্রাসায় পড়া প্রায় সব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিশক্তি নেই বা আংশিক আছে। এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকও অন্ধ। তার উদ্যোগেই এই মাদ্রাসা করা হয়। ২০১১ সালের দিকে এই মাদ্রাসার তথ্য জানতে পারেন তারেক রহমান। তিনি সবকিছু খোঁজখবর নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ওই মাদ্রাসা চালাচ্ছেন। ২০১৭ সালের দিকে মাদ্রাসার একটি চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল।
তখন পরীক্ষায় দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থী চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। পরে তাদের চিকিৎসা শুরুর নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। চিকিৎসা পেয়ে তাদের সাত জন শিক্ষার্থী এখন চোখে দেখতে পান।
বগুড়ার এই এতিমখানার মতো সারা দেশে আরও ৫টি এতিমখানার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গাবতলীর লাঠিগঞ্জ হাফিজিয়া নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা- সেখানে ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। সবাই মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করেন বিনা খরচে।
সারা দেশে ১৪৪ পরিবারকে প্রতি মাসে ভাতা দিচ্ছেন তারেক রহমান। দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত এসব পরিবারকে অর্থ দেয়া হয় তার পক্ষ থেকে। ২০১৪ সাল থেকে এই ভাতা দেয়া শুরু করেন তিনি। এ ছাড়া গুম, খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর মধ্যে তিনজনের বিয়ের আয়োজন করেন তারেক রহমান নিজ উদ্যোগে। ফেনী, বগুড়া ও সাতক্ষীরায় এই তিন বিয়ের আয়োজন হয়।
অসহায় পরিবারকে নিজের উদ্যোগে ৫টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে ৩টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুটি ঘরের কাজ চলছে। এরমধ্যে বগুড়াতে দুটি, লক্ষ্মীপুর এবং রাজবাড়ীতে একটি করে। বাকি দুটির একটি লালমনিরহাটে এবং আরেকটি ফেনীতে। কুষ্টিয়ায় দুইজন রিকশাচালককে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বাড়ি নির্মাণ বাবদ ৩ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে তাদের। তারেক রহমান এসব কাজের অর্থের ব্যবস্থা করে দিলেও স্থানীয় বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের নেতারা তা বাস্তবায়ন করেন।
সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১২ জনের কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তারেক রহমান। তারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বা পুলিশের নির্যাতনে হাত-পা হারান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের এ পর্যন্ত ১৫০ জনকে সহযোগিতা করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সূত্রমতে, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে যুবদল নেতা ফেরদৌসকে পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করার ১৫ দিন পর কারাগারে মারা যান তিনি। নিহত এই যুবদল নেতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। উপহার হিসেবে একখণ্ড জমি কিনে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি। ঘর ও জমি পেয়ে খুশি নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই সন্তানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৬ নং চরজাঙ্গালিয়া ওয়ার্ডের যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন ফেরদৌস আলম। পরে পুলিশ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায়। চিকিৎসা না দিয়ে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে ১৫ দিন পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান ফেরদৌস আলম। এ ঘটনায় মামলা বা প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দেয়নি পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একখণ্ড জমি কিনে ঘর করে দেন। এতে করে সন্তানদের নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়।
কমলনগর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা পাটওয়ারী মানবজমিনকে বলেন, ফেরদৌস আলম ছিলেন ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। পুলিশ অন্যায়ভাবে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করে।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা মো. আশরাফ উদ্দিন নিজান মানবজমিনকে বলেন, শুধু ফেরদৌস আলমই নয়, এভাবে বহু বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। ফেরদৌসের মতো নির্যাতিত প্রত্যেক নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ওদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত ময়মনসিংহের শহীদ হাফেজ মো. সাদেকের পরিবারকে একটি দোকান করে দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান। সাদেকের পরিবারকে এই দোকান বুঝিয়ে দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সাদেকের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার ১ নং দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকা বাড়িতে। এ ছাড়া বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে সারা দেশে প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষ ও দলের সমস্যাপীড়িত নেতাকর্মীদের সহায়তা করে আসছেন তারেক রহমান। দলীয় সূত্র জানায়- অনেক ক্ষেত্রে তিনি নিজে সরাসরি সহায়তা করেন আর না হয় দলের বিত্তবান নেতাকর্মীদের সহায়তা করতে নির্দেশনা দেন।
প্রকৃতি এবং প্রাণী নিয়ে চিন্তা করেন তারেক রহমান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে শুধু ঢাকাতেই এক লাখ নিম গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। বগুড়া খোকন পার্কে (পার্ক নির্মাণের সময়) ১০০ বছরের পুরনো একটি জয়তুন গাছ ছিল। সেই গাছটি কাটার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন। সেটি জানার পর তারেক রহমান গাছটি রেখেই পার্ক নির্মাণের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন গাছটির রক্ষা হলেও কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পার্কটি নতুন করে করার নামে গাছটি কেটে ফেলেছেন। বগুড়ায় রাস্তায় ডিভাইডার করে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তিনি নিজের হাতে কিছু গাছ লাগিয়েছিলেন সেখানে।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে অনেক মানবিক কাজ করে আসছেন। তিনি চান না এসব প্রকাশ্যে আসুক। গোপনে, নীরবে তিনি এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। যারা সাহায্য বা সহযোগিতা পাচ্ছে তারাও জানতে পারেন না এটি তারেক রহমান করছেন। তারা মনে করেন বিএনপি বা নেতাকর্মীরা তাকে সহযোগিতা করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এসব কর্মকাণ্ড আমাদেরও উৎসাহিত করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
সুত্র : মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :